মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

করোনা ভাইরাসে সংক্রামিত কক্সবাজারের একমাত্র রোগী মুসলিমা খাতুন সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরছেন। রোববার ৫ মার্চ বেলা ২ টার দিকে মুসলিমা খাতুনকে ঢাকার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল থেকে রিলিজ করা হয়। বিষয়টি মুসলিমা খাতুনের সাথে থাকা তার কন্যা সাফিয়া বেগম সিবিএন-কে নিশ্চিত করেছেন।

সাফিয়া বেগম আরো জানান, তার মা এখন সুস্থ আছেন। গত ৪ এপ্রিল তার মা মুসলিমা খাতুনকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রিলিজ করার কথা থাকলেও পরীক্ষা রিপোর্ট খোঁজে না পাওয়ায় রিলিজ হতে একদিন বিলম্ব হয়। তারা সড়কপথে রোববার রাত ৮ টার দিকে কক্সবাজার- মহাসড়কের চট্টগ্রাম শহরের কর্ণফুলী নতুন ব্রীজের কাছাকাছি পৌছেছেন বলে জানান। রোববার রাতে তারা তাদের গ্রামের বাড়ি চকরিয়ার খুটাখালী দক্ষিণ পাড়ায় এসে সেখানে থাকবেন বলে সাফিয়া বেগম জানিয়েছেন।

সৌদী আরব থেকে উমরাহ হজ্জ করে এসে ৭৮ বছর বয়স্কা মুসলিমা খাতুনকে গত ১৮ মার্চ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি করানো হয়। গত ২২ মার্চ চিকিৎসকেরা মহিলাটির তার শরীরের স্যাম্পল সংগ্রহ করে করোনা ভাইরাস টেস্টের জন্য ঢাকার আইইডিসিআর ল্যাবে পাঠিয়ে দেন। গত ২৪ মার্চ টেস্ট রিপোর্ট আসলে সেখানে তার শরীরে করোনা ভাইরাস জীবাণু ধরা পড়ে। এখান থেকে শুরু হয়, করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত কক্সবাজার জেলাবাসীর চরম অস্থিরতা। এনিয়ে গণমাধ্যম সরব হয়ে যায়। করোনা আক্রান্ত মহিলার বৃহত্তর পরিবার ও স্বজনদের মাঝে নেমে আসে অন্ধকারের ঘনঘটা।

পরে মহিলাটির অবস্থান করা কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ টেকপাড়া ও সিকদার মহলের পাশ্ববর্তী পল্লবী লেইনের একটি গলি এবং সেখানে ২ টি বাড়ি লকডাউন করে দেওয়া হয়। এছাড়া উক্ত মহিলা অবস্থান করেছিলো বলে চট্টগ্রাম শহরের ২ টি বাড়ি ও মহিলার খুটাখালী দক্ষিণ পাড়ার বাড়িটিও লকডাউন করে দেওয়া হয়।

এ অবস্থায় হোম কোয়ারান্টাইনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়-কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ৮ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ৬ জন নার্স, ৩ জন ক্লিনারকে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে উক্ত মহিলার সন্তান, স্বজন ও তাদের সংস্পর্শে আসা প্রায় একশ’ লোককে হোম কোয়ারান্টাইনে চলে যেতে হয়। এসব তৎপরতা নিয়ে কক্সবাজারে জনমনে চরম আতংক ছড়িয়ে পড়ে। সবাই ভাবতে থাকে, কখন জানি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছি।

পরে কক্সবাজারে করোনা ভাইরাস জীবাণু আক্রান্ত মুসলিমা খাতুনের চিকিৎসায় নিরবিচ্ছিন্নভাবে জড়িত থাকা কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরীরের স্যাম্পল টেস্ট করে তাদের শরীরে কোন করোনা ভাইরাস জীবাণু ধরা পড়েনি। চিকিৎসক ৩ জন হলেন-ডা. মো. ইউনুস, ডা. আবু মোঃ শামসুদ্দিন ও ডা. মোহাম্মদ শাহজাহান।

মুসলিমা খাতুনের সন্তান ও হোম কোয়ারান্টাইনে থাকা এডভোকেট হেফাজতুর রহমান ও তার সহধর্মিণী নার্গিস জান্নাতের শরীরের স্যাম্পল টেস্ট করে গত ৩০ মার্চ তাদের শরীরেও কোন করোনা ভাইরাস জীবাণু পাওয়া যায়নি।

শনিবার ২৮ মার্চ সকালে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কক্সবাজার সদর হাসপাতালে উক্ত মহিলার স্বাস্থ্যের একটু অবনতি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকাস্থ কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে রেফার করেন জেলা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখানে ৩১ মার্চ উক্ত মহিলার দ্বিতীয় দফায় করোনা ভাইরাস টেস্ট করলে মুসলিমা খাতুনের দেহে করোনা ভাইরাস জীবাণু ধরা পড়েনি। ফলে কক্সবাজার জেলা সেদিন থেকে সম্পূর্ণ করোনা ভাইরাস জীবাণুমুক্ত হয়ে যায়।