অধ্যাপক আকতার চৌধুরী

(৪র্থ পর্ব)

করোনা হোম কোয়ারেন্টাইন টাইমে কক্সবাজারে অনেক কিছু ঘটে গেছে। তা কম বেশী সবার জানা । তবু ডায়েরী লিপিবদ্ধ করতে গিয়ে এগুলো উল্লেখ না করলে অপূর্ণতা থেকে যায়। এ ছাড়াও গত ২ দিনের ঢিমে তালের হোম কোয়ারেন্টাইন  বৃহস্পতিবার কিছুটা কড়া মেজাজে দেখা গেল। সেনাবাহিনী  মাঠে নেমেছে। আপনার সুস্থতাই আমাদের কাম্য । বুঝিয়ে ঘরে পাঠানোর চেষ্টার সাথে ত্রাণও বিলি করেছে ।

গতকালের একটা সংবাদ উল্লেখ না করলে নয় । “করোনার উপসর্গ নিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে ১৯ জনের মৃত্যু”-(সুত্র: যুগান্তর অনলাইন ০২.০৪.২০২০)। মানে জ্বর, সর্দি, কাশি ,শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমা রোগ নিয়েই তাদের মৃত্যু! তাহলে করোনার চেয়ে এসব রোগ আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে!
পাশাপাশি আরেকটি সংবাদও আতকে উঠার মত । কোন উপসর্গ ছাড়াই চীনে নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে। তাহলে কী বহুরুপী করোনা (কভিড ১৯) আরেক ছদ্মবেশ ধারণ করেছে? মানবজাতি কী সত্যি ধ্বংসের পথে ?
টিভিতে গতকাল ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আলোচক  মাওলানা সাহেবকে বলতে দেখলাম , মানুষ যত ডিজিটাল হচ্ছে , ভাইরাসও ডিজিটাল হচ্ছে! আসলেই তাই। হা আমরা যত আধূনিক হচ্ছি , ভাইরাসও অত্যাধূনিক হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের বহু রুপ তা-ই প্রমাণ করে। কথাটা বিজ্ঞান ভিত্তিক না হলেও মনে ধরেছে। তবে আশাবাদী হতে ক্ষতি কী , অদুর ভবিষ্যতে যতই রুপ বদলাক তার ভ্যাকসিন অথবা ঔষধ আবিস্কার হবেই ।

অনেকে বাংলাদেশে করোনা মহামারীর প্রকোপ কম বলে উষ্মা প্রকাশ করছেন বা ইশারা ইংগিতে কর্তৃপক্ষ সংখ্যা দেখাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করছেন। অন্যদিকে আজকে আরো একটা সু-খবর পেলাম অনলাইন ও টিভিতে । যে সব দেশে বিসিজি টিকা দেয়া আছে সে সব দেশে করোনার প্রকোপ কম দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশও বিসিজি টিকা প্রদানকারী দেশ।  এ সংবাদে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করলাম । নিজের বাম হাতের টিকার দাগটাকেও কয়েকবার দেখলাম ঠিক আছে কিনা ।   টিকার ভয়ে অনেকদিন স্কুল ফাঁকি দিয়েছি। যেদিন দেয়া হল তারপর দিন থেকে গায়ে জ্বর উঠল। টিকাওয়ালাকে কতনা গালি দিয়েছি। অথচ আজ নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।

করোনা হোম কোয়ারেন্টাইন সময়ে কক্সবাজারে গত ১৫দিনে অনেক সংবাদেরও জন্ম দিয়েছে। এর মধ্যে খুবই আলোচিত হচ্ছে নির্জন সৈকতে ডলফিনের খেলা। আমার জীবদ্দশায় কক্সবাজার সৈকতে কখনো ডলফিন খেলা করতে দেখিনি । তবে মাঝে মধ্যে মরা ডলফিন তীরে ভেসে উঠতে দেখেছি। জনশূন্য সৈকতে ডলফিনের প্রথম দেখা মেলে গত ২৩ মার্চ ২০২০। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলি ও সুগন্ধা পয়েন্টের কাছে ডলফিনের দুটি দলকে খেলা করতে দেখেন উপস্থিত কয়েকজন। সে সময় ডলফিনের ভেসে বেড়ানোর দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেন সায়মন বিচ রিসর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব রহমান। তিনি তার ফেসবুক ওয়ালে ডলফিনের ভিডিওটা প্রকাশ করলে কিছুক্ষণের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। আমি মনে করি ডলফিনের দেখা মেলা আমাদের জন্য একটা ভাল দিক । সাগরদেশের জীব বৈচিত্র হয়তো আবার ফিরে আসবে। এটা পর্যটন শিল্পের জন্য ও ভাল দিক। তবে পরিকল্পিতভাবে পর্যটনকে সাজাতে হবে। সাগরের একটা অংশকে অভয়ারণ্যের মত অভয়াতীর বা কূল সৃষ্টি করতে হবে।

একটা বিষয় লক্ষ্যণীয় । সরকার মহামারী করোনা থেকে রক্ষার জন্য গেদারিং নিষিদ্ধ করেছে অথচ আমরা ত্রাণ প্রদানের নামে গেদারিং বা জনসমাবেশের সৃষ্টি করছি। এরকম বেশ কিছু ঘটনার জন্ম দিয়েছে।  যেন বিশাল সমাবেশ। ত্রাণ দিতে গেলে হুমড়ি খেয়ে পড়বেই । এটাই আমাদের ন্যাচার। ত্রাণ নিতে গিয়ে বা মেজবান খেতে গিয়ে পদপৃষ্টে মানুষ মারা যাওয়ার রেকর্ড ও কম না। এ সময়ে সামাজিক দুরত্ব লংঘন না হয় মত ত্রাণকার্য পরিচালনা করতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের জনপ্রিয়তাও অনেক সময় কাল হয়ে যায়।  তারা অনেক কিছুকে না করতে পারেন না। তাই তালিকা করে করোনা সময়ে ত্রাণকার্য যথা সম্ভব ঘরে ঘরে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারলে ভাল হয়।   সামাজিক দুরত্ব লংঘন করে  মহামারীকে আমরা নিজের হাতে টেনে নিচ্ছি। সামনে থেকে এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া খুব জরুরী ।

আমরা জেলায় ব্যক্তিগত , প্রাতিষ্ঠানিক ও সরকারী উদ্যোগে  প্রচুর ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর সংবাদ পাচ্ছি।  অনেকে ত্রাণ প্রদান করার পর অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে নিউজ করা বা ফেসবুকে প্রচার করাকে সমালোচনা করছেন। তবে মনে রাখতে হবে,  এই মহামারীর সময়ে একজন অভুক্ত অনাহারী লোকও যদি এতে উপকৃত হয় সেটাকে বাহবা দেয়া উচিত। করোনা সংকট এত সহজে কাটবে বলে মনে হয়না তাই আমাদের দীর্ঘ মেয়াদি প্রস্তুতি নিতে হবে। হয়তো এমনও পরিস্থিতি আসতে পারে যখন ফটোসেশনের জন্য ত্রাণ দেয়ার মানুষও পাওয়া যাবেনা। যারা দিচ্ছে তাদের উৎসাহিত করা আমাদের কর্তব্য।

চরম বিপদে মহান আল্লাহ ছাড়া কোন উপায় নেই। ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো বিশেষ করে জুমা বারে মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়া মুসল্লির সংখ্যাও বাড়ছে । সরকার জনসমাগম নিষেধ করলেও ধর্মীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত যার যার উপরে অনেকটা ছেড়ে দিয়েছে। তাই যথা সম্ভব কম সময়ে ফরজটা আদায় করে বাকীগুলো বাসায পড়ার জন্য আলেমগণ মতামত দিয়েছেন। অন্য যারা অসুস্থ তারা যাতে একদম মসজিদে না যান তারও পরামর্শ দিয়েছেন। তাবলিক জামাত এর মসজিদে মসজিদে চিল্লাগুলোও এখনো চলমান। এই পর্যায়ে ভালমন্দ নিজ বিবেচনায় আত্মরক্ষার প্রটেকশন গ্রহন করা বুদ্ধিমানের কাজ । সামাজিক দুরত্ব মানুন, জনসমাবেশে অংশগ্রহণের মত আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত না নিয়ে পরিবার পরিজনকে রক্ষা করাও ধর্মীয় বিধান পালনের মতই আল্লাহর কাছে গন্য হবে বলে মনে করি।

[করোনা থেকে আত্মরক্ষায় হাত মুখ চোখ ধরা থেকে বিরত থাকি। হাত পরিস্কার রাখি। যেখানে সেখানে হাঁচি কাশি থুথু ফেলা বন্ধ রাখি। সামাজিক দুরত্ব (কমপক্ষে ৩ফুট দুরত্ব) বজায় রাখি। জনসমাগম এড়িয়ে চলি। ১৪দিন হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে ঘরে অবস্থান করি।-সিবিএন।]