ইমাম খাইর, সিবিএন
কক্সবাজারের নিত্যপণ্যের বাজারের কোন স্থিতিশীলতা নেই। যে যার মতো সওদা করছে। দশ দোকানে দশ দাম। একই পণ্য, কিন্তু একেক দোকানে নেয়া হচ্ছে একেক দাম। পাইকার ও খোচরা বিক্রেতা সবাই লাভবান। কেবল ক্ষতিগ্রস্ত ক্রেতা বা ভোক্তারা। অভিযান চালালে কিছুক্ষণের জন্য দাম কমে। অভিযানকারীরা চলে যাওয়ার পরপরই বেড়ে যায়। চিত্র শুধু জেলা শহর নয়, উপজেলা সদর কিংবা গ্রামীন বাজারগুলোর একই অবস্থা। সিন্ডিকেট ব্যবসা ও প্রশাসনের দুর্বল মনিটরিং এর কারণে এমন দশা বলে অভিযোগে ভোক্তাদের।
বিশেষ করে, গত কয়েকদিন ধরে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর বাজারের এমন পরিস্থিতি। দাম বৃদ্ধির শঙ্কা থেকে মজুদ গড়ে তুলেছে অসাধু মজুদদারেরা। পেঁয়াজ, আদা, রসুন থেকে শুরু করে প্রায় সব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। জেলার প্রায় মুদির দোকানে সকালে এক দাম, বিকালে অন্য দাম। যেন মগের মুল্লুক।
খুটাখালী বাজার থেকে আব্দুল আজিজ নামে এক ভোক্তার অভিযোগ, শুক্রবার সকালে যে পেঁয়াজের কেজি ৩৫ টাকায় কিনেছেন, একই পেঁয়াজ বিকালে বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকায়। রসুনে বেড়েছে প্রতি কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। একইভাবে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপন্যের দাম বাড়ানো হয়েছে।
পর্যাপ্ত যোগান, গোদামে খাদ্যপণ্য থাকার পারও বাজারদর চড়া। যে কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে পড়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে জরুরী ভিত্তিকে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তিনি।
শনিবার (২১ মার্চ) সকালে কক্সবাজার বড়বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র ৩ টাকার লেবু বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। ছোট সাইজের লেবু দুইটি কিনলে ২৫ টাকা। দুই দিনে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে দ্বিগুন। রসুন, আদা, তেল, ডালের দামও বাড়তি। সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে পুরো বাজার। অকারণেই বৃদ্ধি পাচ্ছে শাকসবজি-তরিতরকারীর দামও। বেড়েছে চাল-মাংসের দাম। মাঝেমধ্যে অভিযান চালানোর পরও নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না বাজার।
ভোক্তারা বলছেন, মাঝেমধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হলে কিছুটা দাম কমে। প্রশাসনের টিম চলে গেলেই সেই একই হালত। দ্বিগুণ-তিনগুণ মূল্য বাড়িয়ে নেয়া হয় প্রায় খাদ্যপণ্যে। সব মিলিয়ে দ্রব্যমূল্যের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছে রক্তচোষা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।
এদিকে, আমদানিমূল্য না বাড়লেও খুচরা বাজারে দাম বাড়ানোর অভিযোগে কক্সবাজার শহরের সবচেয়ে বড় পাইকার ও খুচরা বাজার ‘বড়বাজার’ এর বিভিন্ন দোকানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে।
শনিবার (২১ মার্চ) দুপুরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ শাহরিয়ার মোক্তারের নেতৃত্বে এই অভিযানে ৭ দোকানদারকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ১ জন পাইকারকে দেয়া হয়েছে ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড।
জরিমানাপ্রাপ্ত দোকানগুলো হলো- ইমন স্টোর ৫০ হাজার, বার আওলিয়া স্টোর ও মোক্তার স্টোর ৩০ হাজার, হাসান ট্রেডার্স, রিমা স্টোর ও হমেল ট্রেডার্স ২০ হাজার এবং রাসেল ট্রেডার্স ১০ হাজার টাকা।
একই অভিযোগে কাশেম এন্ড সন্সের মিজানুর রহমানকে আটক ও ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাহরিয়ার মোক্তার। এ সময় বড় বাজার ও আশপাশের অন্যান্য দোকানদারদের সতর্ক করা হয়েছে।
অভিযানকালে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)’র ওসি শেখ আশরাফুজ্জামান, ইন্সপেক্টর মানস বড়ুয়া, পৌর প্যানেল মেয়র মাহবুবুর রহমান, কক্সবাজার দোকান মালিক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি মোস্তাক আহমদসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।