নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজার :

 

পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার, বিশ্বের  সবদেশের মানুষ এখানে আসে সমুদ্র বিলাসে। কক্সবাজারের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চলে আসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখো পর্যটকগণ। বর্তমানে কক্সবাজারের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো রোহিঙ্গা সংকট। এই রোহিঙ্গাদের সেবায় জেলায় বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করছে হাজারো বিদেশী। আর এতেই বর্তমান করোন ভাইরাস এর আশংকা বেশি বলে মনে করছে সধারণ জনগণ। তাদের অগাত চলাফেরা ওরোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাতায়াত বন্ধ না হওয়া এসব স্থানীদেন প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছে তারা ।

সাারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন মহামারী। বিশ্বের আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্। এরইমধ্যে ঝরে গেছে দশ হাজারেরও বেশি প্রাণ। পর্যায়ক্রমে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বাংলাদেশেও। একজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে যেন চাপা আতঙ্ক ভর করেছে গোটা দেশে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআর-এর তথ্য অনুযায়ী- গতকাল নতুন তিনজনসহ দেশে এ পর্যন্ত নিশ্চিত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২০ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। আর গতকাল পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন একজন। তবে আক্রান্তদের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনা আক্রান্তদের বেশিরভাগই ইতালি ফেরত। কেউ ইতালি ফেরতদের পরিবারের সদস্য। আর কেউ ইতালি ফেরত কারও সংস্পর্শে আসা। মোটকথা ইতালি ফেরত প্রবাসীদের মাধ্যমেই দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।

কিন্তু ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে প্রস্তুতি গ্রহণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদাসীন ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজার সিভিল সোসাইটিস ফোরামের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী। করোনা ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কার কথা জেনেও তা মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়া হয়নি দাবি করে প্রবীণ এই দুই চিকিৎসক বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি নেয়া হলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যেতো।

প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ওই সময় সেখানে আটকে পড়া তিন শতাধিক বাংলাদেশিকে নিয়ে এসে বাধ্যতামূলকভাবে আশকোনা হজ ক্যাম্পে রাখা হয়। দুই সপ্তাহ (১৪দিন) পর্যবেক্ষণে রেখে তাদের বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়।

কিন্তু পরবর্তীতে ইতালিসহ অন্যান্য দেশ থেকে আসা প্রবাসীদের বিষয়ে এরূপ কোন ব্যবস্থা দেখা যায়নি জানিয়ে ডাঃ মহিউদ্দিন বলেন, কক্সবাজারেও যারা বিদেশ ফেরত তাদের আমরা চিহ্নিত করে হোম কোয়েরাইনটাইনে থাকার পরামর্শ দিয়েছি এবং উপজেলা পর্যায়ে টিম তদারকি করছে।আমরা প্রস্তুত আছি যেকোন সমস্যা আমরা মোকাবেলা করতে পারবো।

করোনা মোকাবেলায় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে স্বাস্থ্য প্রশাসন দফায়-দফায় বৈঠক করলেও এখনো পর্যন্ত কার্যকর কোন ব্যবস্থা দৃশ্যমান নয় কক্সবাজারে। যদিও করোনা মোকাবেলায় সিটি কর্পোরেশন, বিভাগীয় পর্যায় উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করে দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন এর সভাপতিত্বে ২০ মার্চ সর্বশেষ বৈঠক করে বলা হয়েছে যারা বিদেশ ফেরত তাদের সংষ্পর্শে যারা আসবে তাদেরও হোম কোয়ারেইটাইনে থাকতে হবে , যদি অমান্য করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে এ পর্যন্ত কতজন বিদেশ ফেরত তা জানতে চাইলে সঠিক কোন তথ্য দিতে পারেনি জেলা প্রশাসন বিভাগ।

হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর ফলে বিদেশ ফেরতরা যার যার বাসা-বাড়িতে চলে যাওয়াতে দেশ তো বটেই কক্সবাজারও বিপর্যয়ের সম্মুখীন বলে মনে করেন চিকিৎসক ডা. মহিউদ্দিন। তিতিন আরো বলেন আমরা সরকারি আদেশ মোতাবক সদও হাসপাতালে ১০ বেড করোনা আক্রান্ত হলে তাদেও চিকিৎসার জন্য সবসময় প্রস্তুত রেখেছি এবং রামু উপজেলাতে ৫০ বেড প্রস্তুত রেখেছি আমাদেও এই হাসপাতালে যদি সংকুরান না হয় তবে আমরা রামু হাসপাওে বদলি করতে পারবো অতবা সরকারি নির্দেমা মোতাবেক আরো বেড বাডানো হবে। তাঁর অভিমত- হোম কোয়ারেন্টাইন মানে তো আমরা দেখেছি, এলাকায় গিয়ে কেউ বাজার করতে গেছেন, কেউ শপিংয়ে গেছেন। কেউ আত্মীয়-স্বজন নিয়ে বেড়াতে গেছেন। তাতে ওই ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা তো বটেই, যারাই তাদের সংস্পর্শে এসেছেন সবাই কিন্তু আক্রান্তের ঝুঁকিতে।

চীন থেকে আনা বাংলাদেশিদের মতো করে অন্যান্য দেশ থেকে আসা প্রবাসীদের ক্ষেত্রেও এরকম সিদ্ধান্ত নেয়া হলে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতোনা। অন্যান্য অঞ্চলের পাশাপাশি কক্সবাজারেও ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারে শঙ্কা প্রকাশ করে এই চিকিৎসক বলছেন,যেহেতু কক্সবাজার পর্যটন এলাকা এখানে বিভিন্ন এরাকার মানুষ আছে তাই সংক্রমণ ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হলো আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত আলাদা করে ফেলা। সেটি করতে হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হয়। কিন্তু ঢাকার বাইরে তো কোথাও এই পরীক্ষার সুবিধাও নেই।চট্রগ্রাম বিমানবন্দর হয়ে সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী দেশে ফিরেছেন। তাদের মধ্যে ইতালি ফেরতও রয়েছেন। কিন্তু সবাই তো এলাকায় গিয়ে মানুষের সাথে মিশে গেছেন। কেউ কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম মানেননি। এতে করে পরিবারের পাশাপাশি এলাকাবাসীও কিন্তু আক্রান্ত হতে পারেন। পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলে হয়তো নিশ্চিত হয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা করা যেতো। কিন্তু এখন কেউ তো বলতে পারছেনা, কে আক্রান্ত। ফলে আক্রান্তের ঝুঁকি আরো বেশি। এটাই বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

এদিকে করোনা আক্রান্তের চিকিৎসা সেবার প্রস্তুতির পাশাপাশি সেবাদানকারী চিকিৎসক ও নার্সের সুরক্ষা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য প্রশাসন যদিও বলছে, করোনা আক্রান্ত পাওয়া গেলে তাদের চিকিৎসা হবে আলাদা একটি কক্ষে রেখে।এদিকে কক্সবাজার সদর হাসপালে আইসিইউ পর্যাপ্ত নয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। অথচ করোনা আক্রান্ত রোগীর আইসিইউ সাপোর্ট খুব দরকার বলে জানান চিকিৎসকরা

জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন জানিয়েছেন, আমরা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সব জায়গায় নজরদারি বাড়িয়েছি ইতিমধ্যে কক্সবাজাওে পর্যটক আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। হোটেল মোটেল মালিকদেরসচেতণ থাকতে বলা হয়েছে। এবং গত কয়েকদিনে লক্ষ করা গেছে সমুদ্রে কোন ধরনের জনসমাগম হয়নি এবং কক্সবাজারে পর্যটক সংখ্যা কমেছে বলে আমার ধারনা।আর যার বিদেশ থেকে আসছে তাদের বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যদি তারা তা অমান্য করে তা হলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে । আশা করছি আমরা এটি কাটিয়ে উঠতে পারবো।

পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, পর্যটক যেন কক্কাজারে আসতে না পারে সেজন্য আমরা চকরিয়াতে চেকপোষ্ট বসিয়েছি সার্বক্ষনিক তারা প্রতিটি বাস চেক কওে পর্যটক বাস হলে তাদেও বুঝিয়ে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এদিকে জেলা বা উপজেলা কোথাও যেন জনসমাগম না হতে পাওে আমরা সবসময় সেদিকে খেয়াল রাখছি।