শাহীন মাহমুদ রাসেল :

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে করোনার ভয়ে যখন জেলার সর্বত্র অনেকটা ফাঁকা হয়ে গেছে ঠিক তখন কক্সবাজার সদরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে গরু চোরেরা। তাদের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে এলাকার মানুষ। প্রতিরাতেই কোনো না কোনো এলাকায় হানা দিচ্ছে সংঘবদ্ধ চোরের দল। গত দেড় মাসে প্রায় অর্ধশতাধিক গরু চুরি হয়েছে সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে।

গভীর রাতে গোয়াল ঘর থেকে গরু চুরি করে নম্বরবিহীন ট্রাক, চাঁদের গাড়ি, পিকাপ, সিএনজিতে উঠিয়ে নিয়ে যায় চোরেরা। আর এসব ঘটনায় খুব কম সংখ্যক মামলাই রেকর্ডভুক্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তরা প্রতিকার পাবেন না এ আশংকা বা পুলিশি হয়রানির ভয়ে থানায় অভিযোগও দেন না। ফলে চোরের দল পার পেয়ে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে।

পুলিশের নজরদারির অভাব আর রাত্রিকালীন টহল না থাকার কারণে চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না বলে অনেকের অভিযোগ। সংঘবদ্ধ চোরের দল নানা কৌশলে চুরি করে যাচ্ছে। ঝিলংজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, প্রতি রাতে গরুর ঘরে চোরের দল হানা দিয়ে থাকে। যাদের গরু আছে তারা রাত জেগে পাহারা দেয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ গরুর দুধ বিক্রি করে পরিবারের খরচের টাকা যোগায়। কৃষি নির্ভর পরিবারগুলো গরু দিয়ে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে। আর গরু চোরেরা যখন এসব মূল্যবান গরু চুরি করে নিয়ে যায় তখন হতদরিদ্র এসব পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে পড়ে। রাতের বেলায় যেসব সড়কে আলো থাকে না কিংবা অনেকটা নির্জন ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশি উন্নত বিশেষ করে সে সব এলাকায় চুরির ঘটনা বেশি ঘটছে।

ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক ব্যক্তি জানান, গরুর ঘর থেকে রশি কেটে অথবা খুলে গরু গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। রাতে গাড়ির ভেতরে গরু দেখলে আটক করতে ভয় পায় জনতা। কারণ পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হয়। ফলে কাউকে আটক করা হয় না। যে কারণে সহজে পার পেয়ে যায় সংঘবদ্ধ চোরের দল।

জানা গেছে, কক্সবাজার জেলায় ৭১টি ইউনিয়নে ৯৯২টি গ্রাম আছে। প্রতিদিন কোন না কোন গ্রাম থেকে গরু চুরির ঘটনা ঘটছে। চুরির ঘটনা আপাতদৃষ্টিতে মামুলি মনে হলেও গ্রামের হতদরিদ্র মানুষগুলো পথে বসছে। সহায় সম্বল বিক্রি করে গ্রামের স্বল্প পুজির মানুষগুলো গরু পালন করে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরানোর স্বপ্ন দেখলেও চোরের উপদ্রবে তাদের চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে সদরের পিএমখালী ও ঝিলংজা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় অর্ধশত গরু চুরি হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে মধ্য আব্দুর রশিদের ২টি, জহির আহাম্মদের ১টি, হাবিব উল্লাহ ২টি, মো. লেদুর ৩টি এবং ইয়াছিনের মায়ের ১টি। তাছাড়া সদরের বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে সম্প্রতি আনুমানিক ৪২টির মতো গরু চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝে গরু চোর আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সর্বশেষ গত বুধবার (১৮ মার্চ) দিবাগত রাতে ঝিলংজা ইউনিয়নের পশ্চিম মুক্তারকুল এলাকার আজিজুল মোস্তফার বাড়ি থেকে ১টি অস্ট্রিয়ান গরু নিয়ে গেছে চোরের দল। এই ঘটনার আগের রাতে একই এলাকার মোজাফফর আহাম্মদের বাড়ি থেকে ২টি এবং খরুলিয়া সিকদার পাড়া এলাকার হাবিব উল্লার গোয়াল ঘর থেকে ৩টি গরু নিয় যায়।

গরুর মালিক আজিজুল মোস্তফা বলেন, প্রতিদিনের মতো রাতে গোয়ালঘরে গরুগুলোকে খাবার দিয়ে দরজা বন্ধ করে চলে যাই। রাতে কোনো একসময় চোরের দল গোয়ালঘরে ঢুকে চারটি গরু নিয়ে পালিয়ে যায়। সকালে গোয়ালঘরে গরুগুলো দেখতে না পেয়ে চারদিকে খোঁজাখুঁজি করি। কিন্তু সারাদিনেও কোনো খবর না পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানাই।

গরু চুরি বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মাদ শাহাজাহান কবির বলেন, থানায় গরু চুরির কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে।