ফাইল ছবি

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আসা লোকজনের মাধ্যমে প্রাণঘাতী রোগ ‘করোনা ভাইরাস’ দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা থাকায় সেখানে গত ৩ দিন ধরে মেডিকেল টিম সার্বক্ষনিকভাবে কাজ করছে। সর্তক রাখা হয়েছে, উচ্চ পর্যায়ের আরো মেডিকেল টিম। করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণে টেকনাফ বন্দরে কি ব্যবাস্থা নেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মোঃ মাহবুবুর রহমান সিবিএন-কে এ তথ্য জানান।

সিভিল সার্জন আরো বলেন, স্বাস্থ্য সদর দপ্তর হতে গত ৩০ জানুয়ারি করোনা ভাইরাস সম্পর্কে নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকেই জরুরীভিত্তিতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়ন্ত্রণে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা এ বিষয় সরাসরি নিয়মিত তদারক করছেন।

চীনে ‘করোনা ভাইরাস’ ব্যাধি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে ‘করোনা ভাইরাস’ এ আক্রান্ত হয়ে ৩ শতাধিক চীনা নাগরিক মৃত্যুবরণ করেছে। আক্রান্ত হয়েছে লক্ষ লক্ষ চীনা নাগরিক। মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। সে সীমান্তের নির্ধারিত পয়েন্ট দিয়ে উভয় দেশের নাগরিক নিয়মিত আসা যাওয়া করে। আর মিয়ানমার থেকে ট্রলারে করে বিভিন্ন ধরনের পণ্য প্রতিদিন আসছে টেকনাফে। সাথে আসছে মিয়ানমারের লোকজন। পণ্য খালাস হচ্ছে টেকনাফ স্থলবন্দরে। এ অবস্থায় ‘করোনা ভাইরাস’ সহ স্পর্শকাতর রোগ নির্ণয় ও সনাক্তকরণে টেকনাফ স্থলবন্দরে স্বাস্থ্য হেলপ ডেস্ক স্থাপন করে তাদের সার্বক্ষনিক সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। টিমে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ২ জন নার্স, ২ স্টাফ ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা সামগ্রী রয়েছে।

টেকনাফের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা টিটু চন্দ্র শীল সিবিএন-কে বলেন, টেকনাফ স্থলবন্দরে তিনদিনের পাসটি এখন বন্ধ থাকলেও পণ্যবাহী ট্রলারে করে প্রতিদিন মিয়ানমারের কিছু মাঝিমাল্লা বাংলাদেশে আসছে। এজন্য করোনা ভাইরাস সহ অন্যান্য স্পর্শকাতর রোগ সনাক্ত করণের সতর্কতা হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগের হেলথ ডেস্ক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তারা সেখানে পুরোদমে কাজ করছে।

টেকনাফ স্বাস্থ্য বিভাগের আর একজন কর্মকর্তা সিবিএন-কে জানান, টেকনাফ স্থলবন্দরে রোগ নির্ণয়ের জন্য থার্মাল স্ক্যানার মেশিন বসানো সম্ভব হয় নাই। তাই সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ ও যাদের শরীরে জ্বর-সর্দি ও কাশি আছে, তাদের পরীক্ষার আওতায় আনা হচ্ছে। স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা বলেন, চীনে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় আমার সতর্ক রয়েছি।।
তবে ব্যবসায়ীদের মতে, মিয়ানমার থেকে প্রতিনিয়ত ট্রলারে মাঝিমাল্লারা টেকনাফে আসছেন। প্রয়োজনীয় আধুনিক উপকরণ ও যন্ত্রপাতি ছাড়া এভাবে রোগ প্রতিরোধ ও নির্ণয় করা পুরোপুরিভাবে সম্ভব নয়। তাই তারা কর্তৃপক্ষকে আরও সচেতন এবং যুগোপযোগী রোগ সনাক্তকরণে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। প্রাণঘাতী এই করোনা ভাইরাস পরীক্ষা ও নির্ণয়ে শুধু জিজ্ঞাসাবাদ নয়, পরীক্ষা করেই তা সুনিশ্চিত হতে হবে বলে তাদের ধারণা।

এ প্রসঙ্গে টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ডপোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) মো. জসিম উদ্দিন সিবিএন-কে বলেন, ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর মিয়নমারের রাখাইন রাজ্যের সীমান্তের কাছে সীমান্ত রক্ষীদের তিনটি ছাউনিতে হামলার জের ধরে সেদিন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে অভিবাসন
কেন্দ্র (ইমিগ্রেশন তিনদিনের বর্ডার পাস) বন্ধ রয়েছে। এ বর্ডার পাসের মাধ্যমে যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার ও বাংলাদেশে পারাপার করে আসছিলেন।
তিনি বলেন, এখন প্রতিনিয়ত মিয়ানমার থেকে পণ্যবাহী ট্রলার টেকনাফ স্থলবন্দরে আসছে। ওইসব মাঝি-মাল্লারা তাদের নৌযানে অবস্থান করে। ট্রলার থেকে পণ্য খালাসের পর তারা পুনরায় মিয়ানমারে ফিরে যান। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে স্বাস্থ্য বিভাগের হেলথ ডেস্ককে স্থলবন্দরে গত ৩১ জানুয়ারি থেকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।