এম.এ আজিজ রাসেল:
ভাঙনের কবলে পড়ে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। চারপাশে টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় ভাঙনের কবলে পড়ে দ্বীপটি দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। ভাঙন রোধে সরকারের কোন উদ্যোগ নেই। উল্টো দ্বীপের চারপাশে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ও পাথর না ফেলার জন্য স্থানীয়দের কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ফলে দ্বীপটি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন এখন সেন্টমার্টিনবাসী।

সরেজমিনে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগরের করাল গ্রাসে ভেঙে আশংকাজনকভাবে ছোট হয়ে যাচ্ছে সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানচিত্র। সেন্টমার্টিন দ্বীপের উত্তর এবং পশ্চিম অংশে ভাঙছে বেশী। এমনিতেই স্বাভাবিক সময়েও পূর্ণিমা-অমাবশ্যার ‘জো’ চলাকালে সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে দ্বীপের বিভিন্ন অংশে নিত্য নতুন ভাঙন সৃষ্টি হয়। কয়েকটি ঘুর্ণিঝড়ের আঘাত এবং গত বর্ষার অবিরাম বর্ষণে বর্তমানে ভাঙন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দ্বীপের চারপাশে ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি হওয়ায় নতুন করে ভাবনায় পড়েছে দ্বীপের প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দা। গত এক বছরে বিলীন হয়েছে দ্বীপের উত্তর ও পশ্চিম অংশের প্রায় ২ হাজার নারকেলগাছ। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি, কবরস্থান, দোকানপাট, হোটেল-মোটেলসহ নানা অবকাঠামো। সরকারি-বেসরকারিভাবে এখানে অসংখ্য স্থাপনা নির্মিত হলেও নির্মিত হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ। পর্যটন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনা ধরে রাখতে মজবুত ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের।

গত ২৭ জানুয়ারী সেন্টমার্টিনের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সেখানে যান কক্সবাজারের পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’ এর ৫০ জনের একটি টিম। তারা সেখানে দ্বীপের পরিবেশসহ নানা সমস্যা নিয়ে স্থানীয়দের সাথে মতবিনিময় করেন। এছাড়া পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও পর্যটকদের মাঝে বিতরণ করেন সচেতনতামূলক লিফলেট। মতবিনিময়কালে তাদের কাছে স্থানীয়রা তুলে ধরেন নানা দুর্দশার কথা।

স্থানীয়রা জানান, দিন দিন দেবে যাচ্ছে দ্বীপটি। গত এক দশকে একাধিক ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের ধাক্কায় প্রায় ৫০ একর বালুচর, কবরস্থানের কিছু অংশ, একটি মাদ্রাসা, শতাধিক বসতঘর বিলীন হয়েছে। আরও শতাধিক পরিবার ভাঙনের কবলে পড়েছে।

সেন্টমার্টিন বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ আলম বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু সেন্টমার্টিনে কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। নানা বাহানায় এখানকার মানুষকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে।

ইউপি সদস্য আবদুল হক বলেন, এই দ্বীপের মানুষ চরম অবহেলিত। এখানে কিছুই করা যাচ্ছে না। করলেই পদে পদে বাধা। প্রতিনিয়ত ভাঙছে দ্বীপের চারপাশ। কিন্তু তাতে কারও মাথা ব্যথা দেখা যাচ্ছে না। এমন চলতে থাকলে অচিরেই হারিয়ে যাবে সেন্টমার্টিন।

পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’র প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘প্রভাবশালীরা দ্বীপের পরিবেশ ধ্বংস করে অবৈধভাবে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছে। ইতোমধ্যে দ্বীপে শতাধিক পাকা স্থাপনা নির্মাণ হয়ে হয়ে গেছে। কিছু কিছু হোটেল-মোটেলে পর্যটকেরা যাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে সমুদ্র দেখতে পারে, এ জন্য দ্বীপের রক্ষা কবচ খ্যাত কেয়াবন কেটে ফেলা হচ্ছে। এছাড়াও নানাভাবে পরিবেশকে ধ্বংস করা হচ্ছে- যা দ্বীপটিকে বাঁচিয়ে রাখা নিয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুর আহমদ বলেন, সেন্টমার্টিনের আয়তন ছিল ৯ বর্গ কিলোমিটার। এখন দ্বীপটি বিলীন হতে হতে সাড়ে ৭ বর্গকিলোমিটারে ঠেকেছে। জোয়ারের ধাক্কায় আরও ঘরবাড়ি ভেঙে যাচ্ছে। উপড়ে পড়ছে নারকেলগাছ। নানা চেষ্টা করেও জোয়ারের প্লাবন ঠেকানো যাচ্ছে না। দ্বীপের ১০ হাজার বাসিন্দাকে রক্ষা করতে হলে চারদিকে স্থায়ী পাথরের প্রতিরক্ষা বাঁধ দিতে হবে। কিন্তু বর্তমানে স্থানীয়দের সামান্য জিও ব্যাগও ফেলতে দেয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে দ্বীপবাসী।