এ কে এম ইকবাল ফারুক, চকরিয়া
চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় সরিষার আবাদ হয়েছে। হলুদে হলুদে ছেয়ে গেছে দু’উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা। মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের তেমন গন্ধ না ছড়ালেও সরিষা ক্ষেতের দৃশ্য আকৃষ্ট করছে প্রকৃতিপ্রেমি লোকদের। এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ভাল ফলনেরও আশা করছেন দু’উপজেলার চাষিরা।

চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, এ বছর চকরিয়া উপজেলায় ১৭০ হেক্টর ও পেকুয়া উপজেলায় ১৩০ হেক্টর জমিতে বারী-১৪ ও বীনা-৯ জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে। চকরিয়া উপজেলার উপজেলার সাহারবিল, কোণাখালী, চিরিংগা ও নতুন করে উপকুলীয় বদরখালী ইউনিয়নে এবং পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের মেহেরনামা, শিলখালী ও টৈটং ইউনিয়নে এসব সরিষার আবাদ করা হয়েছে। জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে এবং ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে আবাদকৃত এসব সরিষা কৃষকরা ঘরে তুলবেন বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ। এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ভাল ফলনেরও আশা করছেন কৃষি বিভাগের পাশাপাশি চাষিরাও।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চকরিয়া-বদরখালী-মহেশখালী সড়কের সাহারবিল রামপুর ষ্টেশন পার হয়েই সড়কের উত্তর পার্শ্বের চোখে পড়ে বিস্তৃর্ণ এলাকায় সরিষার আবাদ। বিশাল এলাকাজুড়ে ফোটা সরিষা ফুল বাতাসে হেলেদুলে সুভাষ ছড়াচ্ছে। আর প্রকৃতিপ্রেমী লোকজন এ সড়ক দিয়ে যাতায়তের পথে কিছু সময়ের জন্য হলেও মনমুগ্ধকর এ পরিবেশ দেখছেন। এছাড়া চকরিয়া উপজেলার উপকুলীয় বদরখালী ইউনিয়নে দীর্ঘ ৪০ বছর পর পরীক্ষামুলকভাবে ১০ একর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। কারিগরি জ্ঞান ও প্রশিক্ষনের মাধ্যমে ১৪জন কৃষক দিয়ে এ আবাদ করা হয়।

বদরখালী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল আল আসাদ বলেন, বদরখালী ইউনিয়নে প্রথম বারের মতো সরিষার আবাদ হওয়ায় হলুদে হলুদে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। সরিষার আবাদ এলাকায় আলোড়ন সৃষ্ঠি করেছে। সরিষা ফুলের সৌন্দর্য দেখে অনেকেই মুগ্ধ হয়ে আগমীতে সরিষা আবাদের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আবার অনেকেই ধারনা নিচ্ছেন সরিষা ক্ষেতের আবাদ সম্পর্কে। এছাড়া চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ও চিরিংগা ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকায় সরিষার আবাদ হয়েছে।

অন্যাদিকে পেকুয়া উপজেলার শিলখালী, টৈটং ও পেকুয়া সদর ইউনিয়নের প্রায় ১৩০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। আবাদকৃত এসব সরিষা ক্ষেতের হলুদ ফুলে ফুলে ঢেকে গেছে এসব ইউনিয়নের পুরো গ্রাম। প্রকৃতিপ্রেমি লোকজনও চলার পথে এসব আবাদকৃত সরিষা ক্ষেতের পাশে দাঁড়িয়ে সরিষা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। এছাড়া পেকুয়া উপজেলার আরো বিভিন্ন ইউনিয়নে সরিষার আবাদ হয়ে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ।

শিলখালী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অপরূপ দে বলেন, উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের মতো এ ইউনিয়নে আবাদকৃত সরিষা ক্ষেতের প্রতি সার্বক্ষনিক নজরদারি বাড়াতে উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ নির্দেশনা মতো কৃষকদের আবাদকৃত সরিষা ক্ষেতে নিয়মিত মনিটরিং ও কৃষকদের নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ভাল ফলনেরও আশা করছেন তিনি।

পেকুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তপন কুমার রায় বলেন, পেকুয়া উপজেলায় নানা জাতের সবজি আবাদের পাশাপাশি সরিষারও আবাদ হয়েছে। এবছর পেকুয়া উপজেলার টৈটং, শিলখালী ও পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মেহের নামা এলাকা ছাড়াও উপজেলার আরো বিভিন্ন ইউনিয়নে সরিষার আবাদ হয়েছে। সরিষা ক্ষেতের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে কৃষকদেরকে বিনামূল্যে বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়। তিনি আরো বলেন, মাঠ পর্যায়ের কৃষি বিভাগের লোকজনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কৃষকদের আবদকৃত সরিষা ক্ষেতে কোন সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত কার্যকরি ব্যবস্থা নিতে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এস এম নাসিম হোসেন বলেন, মুলত: চকরিয়া উপজেলাটি হচ্ছে কৃষি প্রধান একটি উপজেলা। এখানে নানান জাতের সবজি আবাদের পাশাপাশি সরিষারও আবাদ হয়েছে। সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে তাদেরকে বিনামূল্যে বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কৃষকদের আবদকৃত সরিষা ক্ষেতের প্রতি সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখার জন্য। সরিষা ক্ষেতে কোন সমস্যা দেখা দিলে উপজেলা কৃষি বিভাগের সাথে পরামর্শ করে দ্রুত কার্যকরি ব্যবস্থা নেয়ার জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বারি-১৪ জাতের সরিষা কৃষকের স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এস এম নাসিম হোসেন।