মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতির কক্সবাজার জেলা শাখা সদস্যরা ষষ্ঠ দিনের মতো কেন্দ্র ঘোষিত কর্মবিরতি সকাল ৯ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত পালন করছে।

বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতির সদস্যদের কর্মবিরতিতে অচল হয়ে পড়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সকল কার্যক্রম।কর্মবিরতি চলাবস্থায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সকল শাখার কার্যক্রমে অচলাবস্থা পরিলক্ষিত হয়েছে। সহকারীর কার্যক্রমের অভাবে কর্মকর্তারা নিজ নিজ দপ্তরে অলস সময় পার করছেন। সেবা প্রার্থীরা অসহায় হয়ে ফিরে আসছে দপ্তর গুলো থেকে। জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, এমনিতেই কাজের তুলনায় লোকবল কম। তারমধ্যে সহকারীদের কর্মবিরতি এভাবে চলতে থাকলে ফাইলজট শুরু হবে। সেবাপ্রার্থীরা কাংখিত ও তাদের ন্যয্য সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। প্রশাসনের দুর্নাম হবে। এজন্য এবিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে সুরাহা হওয়া দরকার। অথচ যে কোন দপ্তরে মৌলিক কর্মঘন্টা হচ্ছে প্রতিদিন পূর্বাহ্ন।

মঙ্গলবার ২৮ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে এ কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে।

কর্মবিরতিতে
বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসন, উপজলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ের মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মচারিদের গ্রেড ১৩ -১৬ পদবি পরিবর্তন ও বেতন গ্রেড উন্নীতকরনের দাবিতে এ কর্মবিরতি গত ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সমিতির ১০৪ জন সদস্য নিয়ে কেন্দ্র ঘোষিত নিম্মোক্ত সময় অনুসারে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কর্মবিরতি চলছে। গত ২০ থেকে ২১ জানুয়ারি, ২২ থেকে ২৩ জানুয়ারি যথাক্রমে সকাল ৯ থেকে ১১টা এবং সকাল ৯টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালিত হয়েছে। ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি যথাক্রমে সকাল ৯টা থেকে ১টা এবং আগামী
২৫, ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি একটানা ৩ দিন পূর্ণদিবস এ কর্মবিরতি পালিত হবে বলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল আলম ফরিদ সিবিএন-কে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে কক্সবাজার কালেক্টরেট সহকারী সমিতির সভাপতি নাজির স্বপন কান্তি পাল বলেন, সারাদেশের মতো কক্সবাজারেও শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চলছে। ৩৩ বছর ধরে একই চেয়ারে একই পদে বসে আছি। আমাদের পরে এমএলএসএস পদে চাকুরীতে প্রবেশ করে সহকারি কমিশনার পর্যন্ত হয়ে গেছে। আমাদের অনেক জুনিয়রদের এখন স্যার ডাকতে হয়, উর্ধ্বতন কর্মকর্তা মানতে হয়। অথচ তাদের অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতা আমাদের চেয়ে অনেক কম। এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক ও মানহানিকর। দেশের হাজার হাজার কর্মচারি আমাদের মতো এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে চাকুরীতে আছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি ভালোভাবেই জানেন। তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনাও দিয়েছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জন্য আমাদের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবি পূরণ হচ্ছে না। কেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। তা আমরা বুঝে উঠতে পারছিনা। অথচ দেশের ভিন্ন ১৮ টি দপ্তরে এ দাবি ইতিমধ্যে এদাবি পূরণ পূরণ করা হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারীর ২৫-২৭ তারিখ ৩ দিনের পূর্ণদিবস কর্মবিরতির জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। এরমধ্যে সরকার আমাদের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবি মেনে নিলে আন্দোলনের কর্মসূচী কেন্দ্রীয়ভাবে প্রত্যাহার করা হবে।

কক্সবাজার জেলা কালেক্টরেট সহকারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফরিদুল আলম ফরিদ বলেন, জাতীয় দূর্যোগ মোকাবেলা থেকে শুরু করে সরকারের যেকোনো জরুরী সিদ্ধান্ত জেলা প্রশাসনের ৩য় শ্রেণীর কর্মচারীরা দিনরাত অফিস করে তা বাস্তবায়ন করে। ইতোমধ্যেই অনেক দপ্তরে এই দাবি বাস্তবায়িত হয়েছে। পদবী ও গ্রেড পরিবর্তনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি দিয়েছেন। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগও বার বার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা উপেক্ষা করে কালক্ষেপণ করে যাচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তাই সারা বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতিভুক্ত কর্মচারীরা কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তবে দাবি আদায়ে আমাদের আন্দোলন থাকবে অহিংস ও শান্তিপূর্ণ।