আতিকুর রহমান মানিকঃ

কক্সবাজার জেলাব্যাপী উপকূলে প্রজনন মৌসুমেও ডিমওয়ালা মা কাঁকড়া শিকারের মহোৎসব চলছে। দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী-কুতুবদিয়াসহ পেকুয়া, চকরিয়া, উখিয়া, টেকনাফ ও সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ উপকূলে প্রতিদিন শত শত মণ মা কাঁকড়া অবাধে আহরণ করা হচ্ছে। এসব এলাকার উপকূলীয় প্যারাবন ও ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সমূহে অবাধে চলছে মা কাঁকড়া শিকার। এভাবে প্রজনন মৌসূমে কাঁকড়া শিকার চলতে থাকলে চিংড়ির চেয়েও উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় এ মৎস্যসম্পদ অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, গুরুত্বপূর্ণ মৎস্যজাত পণ্য কাঁকড়ার প্রধান প্রজননক্ষেত্র হলো উপকূলীয় এলাকা ও ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। অন্যদিকে বিশ্বের প্রধানতম ম্যানগ্রোভ এলাকা হলো কক্সবাজারসহ দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকা। এখান থেকে সংগৃহীত কাঁকড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়ে থাকে। এ থেকে প্রতিবছর অর্জিত হচ্ছে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা। অন্যতম রপ্তানীপণ্য কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি দুই মাস। প্রজনন মৌসুমে উপকূল ও ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের লোনা পানিতে এরা ডিম ছাড়ে। মাঘ মাসের প্রথম অমাবস্যায় সবচেয়ে বেশি ডিম দিয়ে থাকে স্ত্রী কাঁকড়া। বাংলা দিনপঞ্জিতে এখন চলছে মাঘ মাস।

অন্যদিকে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এ দু’মাসজুড়ে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, হংকং ও চীনসহ বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এসব উৎসবের খাদ্য তালিকায় ডিমওয়ালা কাঁকড়ার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারেও ডিমওয়ালা কাঁকড়ার চাহিদা সবচেয়ে বেশি এবং এ সময় দামও থাকে সর্বোচ্চ। তাই বেশি দামের আশায় এবং সুন্দরবন ছাড়া অন্য ম্যানগ্রোভ এলাকায় প্রজননকালীন সময়ে কাঁকড়া শিকার বন্ধের সরকারি উদ্যোগ না থাকার ফলে ডিমওয়ালা কাঁকড়া শিকারে চলছে মহোৎসব।

কক্সবাজার উপকূলে প্রতিদিন শত শত শিকারি ডিমওয়ালা কাঁকড়া শিকার করছে। এ ছাড়া নদ-নদী মোহনা ও সমুদ্র উপকূলজুড়ে যত্রতত্র পেতে রাখা অবৈধ বেহুন্দি জাল, চরজাল ও মশারী জালে ধরা পড়ছে ডিমওয়ালা মা কাঁকড়া। নিষিদ্ধ এসব জালে কাঁকড়ার রেনু পোনাও হরদম মারা যাচ্ছে। জেলার উপকূল জুড়ে বিস্তৃত প্যারাবনেও প্রতিদিন ভাটার সময় মা কাঁকড়া শিকার করছে শত শত শিকারী। এক কাঁকড়া শিকারি জানান, প্রতিদিন ৩/৪ কেজি কাঁকড়া পান। ৪/৫ টি কাঁকড়ায় এক কেজি হয় এবং প্রতি কেজি চার- পাঁচ শ’ টাকায় বিক্রি করেন। এখন কাঁকড়া বেশি ধরা পড়ছে এবং দামের দিক দিয়েও ভালো। সদর উপজেলার গোমাতলীর কাঁকড়া আহরণকারী জেলে গিয়াস উদ্দীন ও রফিক জানান, গত একমাস যাবৎ বিভিন্ন আড়ত থেকে ডিমওয়ালা কাঁকড়ার অর্ডার আসছে।

কাঁকড়ার আড়তদার কালু জানান, এখন ডিমওয়ালা কাঁকড়া পাওয়া যায় বলে ঢাকা-চট্টগ্রামের আড়তে এসব কাঁকড়ার বেশ চাহিদা রয়েছে এবং দামও বেশ চড়া। অন্য সময় ডিমওয়ালা কাঁকড়া পাওয়া যায় না বলে তেমন চাহিদা থাকে না। চকরিয়া- মহেশখালী, টেকনাফ, কক্সবাজার ও আশপাশ এলাকার শতাধিক আড়তদার প্রতিদিন কয়েকশ’ মণ ডিমওয়ালা কাঁকড়া ঢাকায় পাঠান বলেও জানান। উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ অঞ্চল কাঁকড়ার প্রজনন ক্ষেত্র ও এখান থেকে হরদম শিকার করা হলেও বনবিভাগ এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, কাঁকড়া শিকার সম্পর্কে মৎস্য অাইনে কোন নির্দেশনা না থাকায় জেলা মৎস্য দপ্তর থেকে এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্হা নেয়া যাচ্ছে না।