আতিকুর রহমান মানিকঃ

কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও বাসষ্টেশনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের মূল্যবান জমি দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে ভূমিগ্রাসী দখলবাজরা। বিগত দুই দশকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মূল্যবান সরকারী জমিতে প্রভাবশালী ও দখলবাজরা ভাড়াবাসা, দোকান, গোডাউন, হোটেল-রেস্তোরা ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মান করে ভাড়া আদায় করে আসছে। রাস্তার উপর গড়ে উঠেছে একাধিক ট্যাক্সি ষ্ট্যান্ডও। শুধু তাই নয় বেপরোয়াভাবে দখল করা উক্ত জমিগুলি পৈত্রিক সম্পত্তির মত ভাগ-বাটোয়ারা করে হজম করে নিচ্ছে ভূমিদস্যুরা।

সরেজমিন দেখা গেছে, ঈদগাঁও বাসস্টেশন সংলগ্ন লাল ব্রীজের উত্তর পার্শ্বে খোদাইবাড়ী এলাকা থেকে শুরু করে বাস স্টেশনের দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত মহাসড়কের পশ্চিম পাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় চলছে এ দখলবাজি।

এলাকার প্রবীণরা জানান, বৃটিশ আমলে ১৯৪০-৪১ সালে ২য় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক যোগাযোগ চালু হয়। এ সড়ক দিয়েয়ে তখন মূলতঃ সৈন্য, রসদসামগ্রী ও গোলাবারুদ পরিবহন করা হত। আরকান রোড নামে পরিচিত এ সড়ক দিয়ে যুদ্ধকালীন বার্মা ফ্রন্টে যুদ্ধ সরঞ্জাম পরিবহন করা হত। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষ হলে এ সড়কে যানবাহনের চাপ ক্রমশঃ বাড়তে থাকে। পরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে কক্সবাজার শহর পর্যটন নগরী হিসেবে দেশ-বিদেশে খ্যাতি লাভ করে ও কক্সবাজার মুখী পর্যটকবাহী যানবাহনের চাপে উক্ত সড়কের গুরুত্ব আরো বৃদ্ধি পায়। বিগত নব্বই দশকে তৎকালীন সরকার পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র মায়ানমারের সাথে সীমান্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করলে টেকনাফ স্থল বন্দর দিয়ে মালামাল আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়। তখন সীমান্তবাণিজ্যের মালামাল পরিবহন ও পর্যটকদের যাতায়তের সুবিধার্থে ১৯৯৪-৯৫ সালে তৎকালীন সরকার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক প্রশ্বস্তকরণ প্রকল্প হাতে নেয়। মহাসড়কের ঈদগাঁও বাসষ্টেশন অংশে সড়কের বাঁক সোজা করনার্থে ভূতপূর্ব লালব্রীজের উত্তর প্রান্তের খোদাইবাড়ি থেকে শুরু হয়ে বাসষ্টেশনের দক্ষিণ প্রান্তে বার আউলিয়া গেইট পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক পূর্ব দিকে সরিয়ে নতুন করে নির্মাণ করা হয়। একই সাথে ঈদগাঁও নদীর উপর লালব্রীজের ৫০ গজ পূর্বে কংক্রিটনির্মিত আরেকটি আরসিসি ব্রীজ স্থাপন করা হয়। নবনির্মিত ব্রীজ ও রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হলে আগের প্রায় ১ কিলোমিটার ব্যাপী রাস্তা এবং ঐতিহ্যবাহী লালব্রীজ পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে, যা সড়ক ও জনপথ বিভাগের সরকারী সম্পত্তি।

পরবর্তীতে মূল্যবান এ জমির উপর লুলোপ দৃষ্টি পড়ে স্থানীয় চিহ্নিত প্রভাবশালীদের। এখন সরকারী এসব জমি দখল করে হোটেল-রেস্তোরা, দোকানপাট, মার্কেট ও গুদামসহ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে রীতিমত বাণিজ্যিকভাবে ভাড়া দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে ভাসমান হকার, ভ্রাম্যমান ভ্যানগাড়ির উপর স্থাপিত চনা-মুড়ির দোকান, অবৈধ সিএনজি টেক্সী/মাহিন্দ্রা/টমটম ষ্টেশনসহ আরো বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা।
স্হানীয় বিভিন্ন ভূঁইফোড় ও কথিত শ্রমিক সংগঠন এখানে গড়ে তুলেছে অবৈধ টেক্সীষ্ট্যান্ড। ভূঁইফোড় শ্রমিক সংগঠন গুলো বিভিন্ন যানবাহন থেকে দৈনিক হারে চাঁদা আদায় করে বলে জানা গেছে।
এভাবে মূল্যবান সরকারী জমি বেহাত হয়ে গেলে ইতিপূর্বে এসব অবৈধ দখল নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে লোক দেখানো অভিযান চালিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে প্রশাসন। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে সওজের মূল্যবান এসব জমি দখলমুক্ত করার দাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল।