রাইজিং বিডি:
মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা তরুণ-তরুণীদের সুস্থ্য জীবনধারায় ফিরিয়ে আনতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এজন্য তাদের কম্যুনিটি সেবা সম্পর্কিত দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এ বিষয়ে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি) আর্থিক সহায়তা দেবে। প্রকল্পে ব্যয় হবে ২৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা(আইডিএ) ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে অনুদান চুক্তির শর্তানুযায়ী এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এ জন্য ডব্লিউএফপি’র সঙ্গে খুব শিগগরই একটি ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে। চুক্তিটি অনুমোদনের জন্য পরবর্তী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।

বৈঠকের সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, ‘২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট প্রায় সাত লক্ষাধিক বলপূর্বক বাস্তুচ্যূত মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে। তারা কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় স্থাপিত ক্যাম্পে বসবাস করছে। এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিপুলসংখ্যক তরুণ রয়েছে যাদেরকে উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত না করলে সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডে (যেমন-মাদক, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি) লিপ্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদেরকে উৎপাদনশীল কাজে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে ক্যাম্পের মৌলিক সুবিধাদির উন্নয়ন করা, সামাজিক কর্মসূচী বাস্তবায়ন ও উদ্বুদ্বকরণ কর্মসূচী বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই এই প্রকল্পটি প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়।’

সার-সংক্ষেপে আরো বলা হয়েছে, ‘প্রকল্পটির মাধ্যমে ক্যাম্পের ভূমিক্ষয় রোধে ৯০ হেক্টর জমিতে দেশি প্রজাতির ঘাস রোপণ ও সংরক্ষণের সহায়তা কাজ, ক্যাম্পের পরিবেশ-পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ৬ কিলোমিটার ঢাল সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের সহায়তা কাজে বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের নিয়োগ করা হবে। এ ছাড়া ২ দশমিক ৪ কিলোমিটার পায়ে চলার পথ ও বাঁশের সাঁকো নির্মাণ, পুনর্বাসন, সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজও সম্পন্ন করা হবে। ৬০ হাজার রোহিঙ্গা তরুণ ও তরুণীকে কম্যুনিটি সেবা প্রদান সম্পর্কিত ডব্লিউএফপি কর্তৃক ব্যবহৃত দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান প্রভৃতি কাজ সম্পাদন করা হবে। প্রকল্পটির মেয়াদ ৩ বছর (সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে আগষ্ট ২০২১ পর্যন্ত)।’

জানা গেছে, প্রকল্পটির কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-ডব্লিউডি-০১ এ বর্ণিত কম্যুনিটি ওয়ার্কফেয়ার অ্যান্ড সার্ভিস সার্পোট কর্মকাণ্ডের জন্য ৩০৫ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রাণালয়ের সার-সংক্ষেপে দেখা যায়, ‘প্রকল্পটি বাস্তব কাজ সম্পাদানের জন্য জাতিসংঘের কোনো অঙ্গসংস্থা বা কোনো এনজিওকে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সংস্থান রাখা হয়েছে। এ প্রকল্পে উপকারভোগীদের কাজের বিনিময় অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের নগদ অর্থ প্রদানের বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত নিরুৎসায়িত করা হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা কক্সবাজারে অবস্থিত ক্যাম্পসমূহে রোহিঙ্গাদের ‘ই-ভাউচার’ এর মাধ্যমে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে থাকে। এ বিষয়ে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার অভিজ্ঞতা, সামর্থ ও প্রয়োজনীয় বুথ স্থাপন ইতোমধ্যে রয়েছে। তাই এ বিষয়ে গত বছরের ২৩ অক্টোবর দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার কাছে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রস্তাব আহবান করে। পরবর্তীতে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা সাড়ে ৩ কোটি মার্কিন ডলারের একটি প্রস্তাব গত ২৭ অক্টোবর দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়।’

এই প্রস্তাবের ব্যয় বিভাজনে উল্লেখ করা হয়, ‘স্টাফ ও পার্সোনাল কাজে ব্যয় করা হবে ১৭কোটি ৩০ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। জেনারেল অপারেটিং কস্ট ৫ কোটি ৯৬লাখ ৯ হাজার টাকা। বিভিন্ন দ্রব্যাদি ও সেবাখাতে ২৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। কোঅপারেটিং পাটনার্সখাতে ২২ কোটি ৬৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা এবং ইনডাইরেক্ট কস্টখাতে ধরা আছে আরো ১১ কোটি ৪২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। মোট ব্যয় হবে ২৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।’