ইয়াবা পাচার যেন থামছেই না

বলরাম দাশ অনুপম, কক্সবাজার :

আইন শৃংখলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও সাঁড়াশি অভিযানেও যেন থামানো যাচ্ছে মাদকের আগ্রাসন। আইন শৃংখলা বাহিনীর অভিযানে মাদক কারবারীরা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেও মিয়ানমার থেকে যেন অপ্রতিরোধ্য ভাবে আসছে মরননেশা ইয়াবা। মূলতঃ রোহিঙ্গারাই ইয়াবাসহ নানা মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছে।

বিশেষ করে কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবাগুলো প্রবেশ করে পাচারকারীদের হাত বদলের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এরমধ্যে কিছু কিছু ইয়াবার চালান আইন শৃংখলা বাহিনীর অভিযানে উদ্ধার এবং ইয়াবা বহনকারীরা আটক হলেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে জেল থেকে বেরিয়ে পুনরায় সেই পথেই পা বাড়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা।

অথচ ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী সকল প্রকার জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে জেলার তালিকাভুক্ত ১০২ ইয়াবা কারবারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আত্মসর্মপন করেছিল। কিন্তু এরপরও বন্ধ হয়নি ইয়াবা পাচার।

জানা যায়-আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারীর মাঝেও নিত্য নতুন কৌশলে সংঘবদ্ধ শক্তিশালী ইয়াবা পাচারকারীরা সড়ক ও নৌ-পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে যাচ্ছে মনণনেশা ইয়াবা। আর এ কাজে দেশব্যাপি মাকড়সার জালের মতোই বিস্তৃত রয়েছে তাদের নেটওয়ার্ক। জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহেই শুধুমাত্র কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে ৫ লক্ষ ৭৮ হাজার ৮১৫ পিস ইয়াবা। পাশাপাশি বিদেশী মদ, বিয়ারসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যও রয়েছে। এসব ঘটনায় ৭ মাদক কারবারীকে আটক করা হয়। আর পুলিশ ও বিজিবির সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় মহিলাসহ ৩ মাদক কারবারী। আটক ও বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের বেশীর ভাগই রোহিঙ্গা।

এরমধ্যে সর্বশেষ ৬ জানুয়ারী (সোমবার) সকালে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের পূর্ব ফাঁড়িরবিল এলাকায় বিজিবির সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে দুই রোহিঙ্গা। এরা হলো-মিয়ানমারের উনচিপ্রাং এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে উখিয়া রোহিঙ্গা শিবিরের ২২নং ব্লকে আশ্রয় নেয়া মৃত সুলতান আহমদের পুত্র মোহাম্মদ ইসমাইল ও মোঃ আবু সৈয়দের পুত্র মোঃ হেলাল উদ্দিন। এসময় ২০ হাজার ইয়াবা, একটি একনলা ও দুই রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।

এছাড়া ৫ জানুয়ারী টেকনাফের জাদিমুড়া ওমর খান পয়েন্ট থেকে দেড় লক্ষ ইয়াবাসহ দুই রোহিঙ্গা মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে র‌্যাব। এরা হলো-টেকনাফ দমদমিয়া ন্যাচার পার্ক ২৭নং ক্যাম্পের ডি ব্লকের ফজল হকের পুত্র আব্দুর লতিফ ও একই এলাকার হোসেন আহমদের পুত্র জাবেদ ইকবাল।

একইদিন রাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালী লবণের মাঠ এলাকায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে সমুদা বেগম (৪০) নামের মহিলা মাদক ব্যবসায়ী নিহত। সে হোয়াইক্যং সাতঘরিয়াপাড়ার মৃত নুরুল ইসলামের স্ত্রী। এসময় ৬ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

৪ জানুয়ারী সন্ধ্যায় পুলিশ টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের মহেশখালীয়া পাড়ায় অভিযান চালিয়ে ২০ হাজার ইয়াবাসহ আটক করা হয় ওই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার জাহিদ হোসেনকে। সে মহেশখালীয়া পাড়ার আব্দুস সাত্তারের পুত্র। ৪ জানুয়ারী উখিয়ার কুতুপালং বাজার থেকে ৩৯০০ ইয়াবাসহ দুই রোহিঙ্গা পুলিশের হাতে আটক হয়। আটককৃতরা হলো-বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রশিদ আহমদের ছেলে চাঁন মিয়া ও একই এলাকার দিল মোহাম্মদের নুরুল আলম।

২ জানুয়ারী রাতে টেকনাফ স্থল বন্দর এলাকা থেকে বিদেশী মদসহ ২ মাদক পাচারকারীকে আটক করে কোস্টগার্ড। ৩১ ডিসেম্বর দুপুরে টেকনাফের হৃীলা জাদিমুড়া এলাকা থেকে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৯১৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে বিজিবি। তবে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা বলছেন ইয়াবা কিংবা মাদক পাচারকারীরা যতই শক্তিশালী কিংবা প্রভাবশালী হোক না কেন তাদের কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না।

র‌্যাব-১৫ টেকনাফ ক্যাম্পের ইনচার্জ লে. মির্জা শাহেদ মাহতাব বলেন-ইয়াবা ও অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযানে অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি ইয়াবা পাচার ও অপরাধ কর্মকান্ড ঠেকাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে র‌্যাবের তৎপরতাও চোখে পড়ার মত।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ টেকনাফস্থ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল ফয়সল হাসান খান (পিএসসি) মঙ্গলবার দুপুরে জানান-সরকার ইয়াবাসহ সকল মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। যাতে কোন মাদক দেশে প্রবেশ করতে না পেরে। তিনি জানান মাদকের বিরুদ্ধে বিজিবির অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম জানান-ইয়াবাসহ সকল প্রকার মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীরা যতই শক্তিশালী হোক তাদের কোন ছাড় দেয়া হবে না। আগের তুলনায় ৭০ শতাংশের বেশী ইয়াবাসহ সকল মাদক পাচার কমে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন-যেকোন মূল্যে ইয়াবা পাচার বন্ধ করা হবে।