শাহেদ মিজান, সিবিএন:
সাগরের করাল গ্রাসের মুখে থাকা দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া চলমান বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাতিল হচ্ছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে প্রকল্প বাতিল সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) থেকে চলমান কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে কুতুবদিয়ার তবলরচর, আনিচের ডেইল, জেলেপাড়া, মুরালিয়া, আমজাখালী, ওন্দরা মার্কেট, আকবর বলুর ঘাট, কায়নার পাড়া, পেয়ারা কাটা, কাহারপাড়া, পয়েন্টের চলমান বেড়িবাঁধ নির্মাণ ভেস্তে যাবে! দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। পাউবো বলছে, প্রকল্পের ধীরগতির কারণে প্রকল্পটি বাতিল করছে মন্ত্রণালয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড’র (পাউবো) ৭১ নং হোল্ডারের আওতাধীন কুতুবদিয়ার তবলরচর, আনিচের ডেইল, জেলেপাড়া, মুরালিয়া, আমজাখালী, ওন্দরা মার্কেট, আকবর বলুর ঘাট, কায়নার পাড়া, পেয়ারা কাটা, কাহারপাড়া, পয়েন্টের চলমান বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। গত ১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১০৭ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী। প্রকল্পের কাজের জন্য ‘ঈগল রিচ কনেক্ট্রাকশন বিডি লিমিটেড’ নামে এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয় নৌবাহিনী। ওই প্রতিষ্ঠান প্রকল্প বুঝে নিয়ে গত বছরের ১ নভেম্বর কাজ শুরু করে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের আওতায় ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে ৩০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কার্যাদেশ অনুসারে আগামী মার্চের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।

এদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘ঈগল রিচ কনক্ট্রাকশন বিডি লিমিটেড’ কর্তৃপক্ষ বলছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে তাদের জানানো হয়েছে- চলমান প্রকল্পটি বাতিল করা হচ্ছে। নতুন করে প্রকল্প গ্রহণ করার জন্য এই প্রকল্পটি বাতিল করতে বাধ্য হচ্ছে। তাই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ‘আপাতত’ কাজ বন্ধ রাখতে বলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু প্রকল্পটি বাতিল করা হলে সাগরের করাল গ্রাসে চরম হুমকির মুখে পড়বে জনপদ – এমনটি বলছেন কুতুবদিয়া মানুষ ।

তবে জানতে চাইলে কুতুবদিয়া বড়ঘোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ.ন.ম শহীদ উদ্দীন ছোটন এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে এই প্রতিবেদককে জানান।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাঝপথে চলমান প্রকল্পটি বাতিল করলে শীত মৌসুম পেরোলেই সাগরের পানিতে আঘাত হবে লোকালয়ে। এতে চরম দুর্দশা এবং দুর্ভোগে পড়বে হাজার মানুষ। তলিয়ে যাবে বিস্তীর্ণ এলাকা।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র দাবি করছে, অনুমোদিত প্রকল্পের একটি বিরাট অংশ লোপাট করে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় লোকজনসহ একটি সিন্ডিকেট। প্রতিটি প্রকল্প থেকে নির্দিষ্ট অংশ লোপাট করে ফেলে। তাই নতুন প্রকল্প হলে ওই সিন্ডিটেকটি বেশ লাভবান হয়! যতবার প্রকল্প অনুমোদন হয় ততবার সিন্ডিকেটটির পকেটস্থ হয় কাড়ি কাড়ি টাকা। তাই নতুন প্রকল্প বানিয়ে আবারো টাকা লোপাটের জন্যই চলমান প্রকল্পটি বাতিল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও জড়িত রয়েছে বলে এই সূত্রের দাবি।

এ প্রসঙ্গে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘ঈগল রিচ কনেক্ট্রাকশন বিডি লিমিটেড’র জিএম মোহাম্মদ মোরশেদ বলেন, ‘প্রকল্প বুঝে পাওয়ার সাথে সাথে আমরা কাজ শুরু করি। সেই থেকে অত্যন্ত দ্রুত গতির সাথেই কাজ চালাচ্ছি। আগামী মার্চ বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে আমরা সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে পারবো। ইতোমধ্যে আরো মালামাল আসার পথে রয়েছে।’

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড’র নির্বাহী প্রকৌলশী প্রবীর কুমার গ্বোসামী বলেন, নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ড সেকশনকে কুতুবদিয়ার ১৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয়। তারা বেসরকারি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজটি করছে। কিন্তু তিনবছর পেরিয়ে গেলেও তারা কাজটি শেষ করতে পারেনি। সে কারণে প্রকল্পটি বাতিল করতে প্রস্তাব করেছে মন্ত্রণালয় এবং চূড়ান্তভাবে সেটি বাস্তবায়ন হবে।

তিনি আরো বলেন,‘কাজ সম্পন্ন করতে ধীরগতির বিষয়টি ছাড়াও জলবায়ুর প্রভাবজনিত কারণে সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ার কারণে এই প্রকল্পটি বাতিল নতুন করে ‘সুপার ডাইক’ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। এর আগে জরুরী মুহূর্তে প্রয়োজন অনুসারে বেড়িবাঁধ মেরামত করা হবে।’