একজন কামাল চৌধুরী ও কক্সবাজার ছাত্রলীগের ইতিহাস

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

৪ জানুয়ারি উদযাপিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী কেন্দ্র থেক জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়েও পালন হয়ে থাকে। কিন্তু কক্সবাজারে ছাত্রলীগের পথচলা কখন, কিভাবে শুরু হয়েছে-তা বর্তমান প্রজন্মের অনেকের কাছে এখনো অজানা।কক্সবাজারে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি-সম্পাদক কে কে? সেই কমিটিতে কারা কারা নেতৃত্বে ছিলেন? তাও হয়তো নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছে জানা নেই।

১৯৬২ সালের ১১ই আগষ্ট কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসেম্বলি হলে এক ছাত্র সমাবেশে কামাল হোসেন চৌধুরী কে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি
করে ৩৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়। এটিই ছিল কক্সবাজারে ছাত্রলীগের পথচলার প্রারম্ভিক শুরুর কমিটি। এ কমিটিতে তাঁর নেতৃত্বাধীন আরো যাঁরা ছিলেন তাঁরা হচ্ছেনঃ

সহ সভাপতি ছিলেন- প্রফেসর ড. আনসারুল করিম (পরবর্তীতে তিনি ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন)। সাধারন সম্পাদক ছিলেন-এডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফা (চৌফলদন্ডী-অবসরপ্রাপ্ত বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা), সহ সাধারণ সম্পাদকঃ সুনীল কুমার বড়ুয়া।
সাংগঠনিক সম্পাদকঃ মরহুম জয়নাল আবেদীন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদকঃ মরহুম মোজাম্মেল হক (মরহুম ডাঃ আবুলের ছেলে), সহ সাংগঠনিক সম্পাদকঃ সৈয়দ হোসেন চৌধুরী। প্রচার সম্পাদকঃ নজরুল ইসলাম চৌধুরী (জেলা আওয়ামীলীগ সাবেক সাধারন সম্পাদক)।
সাংস্কৃতিক সম্পাদকঃ সমীর কুমার চক্রবর্তী, সহ সাংস্কৃতিক সম্পাদকঃ মং ওভা থিং, সহ সাংস্কৃতিক সম্পাদকঃ ফকির আব্দুর রহিম (কৃষি অফিসারের ছেলে)।
ক্রীড়া সম্পাদকঃ আহমদুর রহমান, সহ ক্রীড়া সম্পাদকঃ সুনীল কুমার দে (সাবেক জাতীয় ফুটবলার),
সাহিত্য সম্পাদকঃ মাহবুব ছিদ্দিক এবং
কোষাধ্যক্ষঃ মমতাজুল আলম চৌধুরী প্রমুখ।

এ কমিটি বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন শাখা কমিটি গঠন করে। পরে যুগপৎ ভাবে (১৯৬৪-১৯৬৭) কামাল হোসেন চৌধুরী মহকুমা (সাংগঠনিক জেলা শাখার মর্যাদা) তথা কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের পাশাপাশি কক্সবাজার কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিও ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কৃষ্ণ প্রসাদ বড়ুয়া (ব্যাংকার)। এর মধ্যে তিনি পুরো কেবিনেট নিয়ে (১৯৬৪-১৯৬৫) সালে কক্সবাজার কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রথম নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হন।

বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, কামাল হোসেন চৌধুরীর হাত ধরেই কক্সবাজারে ছাত্রলীগের রাজনীতির সূচনা হয়েছে। বলা যায়, তিনি কক্সবাজারে ছাত্ররাজনীতির জনক।পরবর্তীতে তিনি বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের (তৎকালীন পূর্ব-বাংলা ছাত্রলীগ) যুগ্ম সম্পাদক ও সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

ইতোমধ্যে ১৯৬৭ সালে মরহুম নেজামুল হক (সাবেক পৌর কমিশনার) কে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনোনীত করা হয়। পরবর্তীতে শাকের আহমদ (এম.এন.এ. এডঃ নুর আহমদ এর ভাই, টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক) কে জেলা সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এরই মধ্যে ১৯৬৩ সালের শেষের দিকে ছাত্র ইউনিয়ন সংগঠিত হয়। ১৯৬৪ সালের শুরুর দিকে কক্সবাজার কলেজ ছাত্র সংসদের প্রথম নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে কক্সবাজার কলেজ ছাত্র শক্তিকে এক মিটিং করার সুযোগ করে দেওয়া হয়।

১৯৬৫ সালের পরেই তাঁর সভাপতিত্বে কক্সবাজার কলেজে ইসলামী ছাত্র সংঘকে এক ছাত্র সমাবেশের সুযোগ দিয়ে কামাল হোসেন চৌধুরী কক্সবাজার কলেজে ছাত্রদের মৌলিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকার উম্মুক্ত করে দেন।

সেই সময়ে কামাল হোসেন চৌধুরীর সাহসী নেতৃত্বে ও সংগ্রাম মুখর প্রতিবাদী কর্মসূচীর মাধ্যমে সংগ্রামী ছাত্র জনতা পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আয়ুব খান, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে জীবন মরণপন আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

(কামাল হোসেন চৌধুরীর কাছে রক্ষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের তৎকালীন বিভিন্ন কমিটির ডকুমেন্টস, কার্যবিবরনী, কেন্দ্রের চিঠি ও তাঁর বক্তব্য মতে কক্সবাজারে ছাত্রলীগের এই ইতিহাস ৭২ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর ঊষালগ্নে তুলে ধরা হলো।)