ইমাম খাইর, সিবিএন:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক, বিশিষ্ট টিভি ব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ বিএনপি কারো কাছে গণতন্ত্র নিরাপদ নয়। তাদের নিজেদের ভেতরেই গণতন্ত্রের চর্চা নেই। স্বার্থের কাছে এসব দলের নেতারা অন্ধ। যে কারণে জনগণ হতাশ।
তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক অবস্থা খুবই নড়বড়ে। বাক স্বাধীনতা নেই। শুধু সংখ্যালঘু কেন? সংখ্যা গরিষ্টরা মুখ খোলতে পারে না। রাজনীতি হবে হবে সবার অংশগ্রহণমূলক। পরিবার ও গোষ্টিতান্ত্রিক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অবসান দরকার।
নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ ‘জন আকাঙ্খার বাংলাদেশ’-এর দুই দিনব্যাপী জাতীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. দিলারা চৌধুরী এসব কথা বলেন।
পর্যটন শহর কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেলের কনফারেন্স হলে শুক্রবার (৩ জানুয়ারী) সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের সংগঠকদের নিয়ে দুই দিনব্যাপী কর্মশালা শুরু হয়েছে। যা ৪ জানুয়ারি শেষ হবে।
দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগের দুই শতাধিক প্রতিনিধি ও সংগঠক এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছে। কর্মশালায় নতুন দলের নাম, নেতৃত্ব, কর্মসূচি, গঠনতন্ত্র ও ইশতেহার এর খসড়া নিয়ে আলোচনা ও প্রতিনিধিদের মতামত নেওয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ-বিএনপি যেন একে অপরের প্রতিপক্ষ। কেউ কাউকে মেনে নিতে পারে না। জাতিগত ঐক্য ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। মিয়ানমার এত অপরাধ করছে, আমরা কোন প্রতিবাদই করতে পারছি না। মুসলমানদের তাড়াতেই এনআরসি করেছে ভারত। ভারতীয় বাঙালী মুসলমানরা দলেদলে বাংলাদেশে ঢুকছে। নতজানু নীতির কারণে আমাদের দেশেরই ক্ষতি হচ্ছে। -মন্তব্য প্রধান অতিথির।
উপস্থিতির উদ্দেশ্যে ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, আমি রাজনীতি বিজ্ঞানের শিক্ষক। কিন্তু রাজনীতি করিনা। তবে, রাজনীতি নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করি। দেশের পক্ষে কথা বলি।
রাজনীতিতে তরুণদের অগ্রাধিকারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে ড. দিলারা বলেন, ফেসবুকে অনেক তরুণ গঠনমূলক সামলোচনা ও পরামর্শ দিয়ে থাকে। বিপ্লবের জন্য তরুণদের সঙ্গে নিতে হবে। এ জন্য তিনি ন্যায়-অন্যায়বোধের উপলব্ধি ও নিরন্তর জ্ঞানের অনুশীলনের পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক শূণ্যতা থেকে নতুন দলের জন্ম হয়। বিশ্বের বিভিন্ন ইতিহাস তাই বলে। দেশের শূণ্যতা পূরণে আমাদের কাজ করতে হবে। সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি ছাড়া স্থায়ী সমাধান আসবে না।
জন আকাঙ্খার বাংলাদেশের দুইদিন ব্যাপী এই কর্মশালার শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনটির অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, দেশের চলমানধারার রাজনীতি নিয়ে মানুষ হতাশ। আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। হতাশার মাঝেই আমরা রাজনীতিতে নতুন দ্বার উন্মোচন করবো।
তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক উদ্যোগ অনেক কঠিন। তবু শক্ত মনোবলে আমরা এগুচ্ছি। যেখানে শেষ সেখানেই শুরু। যেখানে অন্ধকার সেখানেই আলো।
অনেকে বলছে, আমরা নাকি কোন কোন দলের বি টিম, যা সত্য নয়। আমরা জ্ঞানভিক্তিক রাজনীতির স্বপ্ন দেখি। আমরা ইতিবাচক রাজনীতি করব।
জন আকাঙ্খার বাংলাদেশের অন্যতম সমন্বয়ক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী তাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় কর্মশালায় ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক এই সভাপতি বলেন, জনগণের চাহিদার আলোকে নতুন উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা সফল হবোই। বক্তারা বলেছেন- বাংলাদেশে দুইটি বিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশী রাজনীতি হয়েছে। একটি মুক্তিযুদ্ধ, আরেকটি ধর্ম।
বিশেষ অতিথি সাবেক সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী দেশকে এগিয়ে নিতে পরিবার ও গোষ্ঠিতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন। প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট আবুল আলা।
শুরুতে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন জন আকাঙ্খার বাংলাদেশ কক্সবাজারের অন্যতম সমন্বয়ক সাংবাদিক শামসুল হক শারেক। এরপর সমন্বিতভাবে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানে রংপুরের বিশিষ্ট জমিদার এরশাদ হোসেন সাজুকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় জন আকাঙ্খার বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে যোগদান করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কক্সবাজারের সভাপতি বাবু রবিন্দ্র বিজয় বড়ুয়া।
প্রথম অধিবেশনে জন আকাঙ্খার বাংলাদেশ কক্সবাজারের অন্যতম সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর কাশেম, মাস্টার শফিকুল হকসহ বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়করা অংশ গ্রহণ করেন।