মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

ছৈয়দ নুর। পিতার নাম-ছৈয়দ হোছন। টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গীখালী গাজীপাড়া এলাকায় বাড়ি। ছৈয়দ নুরের মাথাগোঁজার ঘরটির মাটির দেয়াল (স্থানীয় ভাষায় মাটির গুদাম ঘর), ঘরটির ছাউনির কিছু অংশ টিন, আর কিছু অংশ পলিথিন দেওয়া। ছৈয়দ নুর পরিবার পরিজন নিয়ে কোন রকমে থাকেন এ কুঁড়েঘরে। ছৈয়দ নুর পেশায় একজন টমটম (ই-বাইক) চালক। টমটম চালিয়ে ছৈয়দ নুর কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করে। এ অবস্থায় ছৈয়দ নুরকে দেখে বুঝার উপায় নাই যে, সে আসলে কতটুকু স্বচ্ছল। কত টাকার মালিক, কি পরিমান সম্পদের অধিকারী।

অবাক বিস্ময়ের কথা হলো-একজন সাধারণ টমটম (ই-বাইক) চালক হয়ে, মাটির তৈরী ঘরের দেয়াল, পলিথিনের ছাউনির কূড়েঘরে থেকে শ্রমজীবী ছৈয়দ নুর কিভাবে স্ত্রীকে ১৩ লক্ষ টাকা দামের ২২ ভরি ওজনের গলায় পরার স্বর্ণের গয়না (স্থানীয় ভাষায় মেয়েদের গলায় পরার হার) ও কানের দুল কিনে দিতে পেরেছেন!

কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে ইয়াবাকারবারীরা কৌশল পাল্টিয়ে ইয়াবাপাচারের অর্থ দিয়ে আর বাড়ি, গাড়ী, নারী ক্রয় করছেনা, জমিও কিনছেনা, ব্যাংকেেও জমা করছেনা। ইয়াবাকারবার করে অর্জিত অবৈধ অর্থ দিয়ে স্বর্ণালংকার ক্রয় করছেন। কুঁড়েঘরে থাকা টমটম চালক ছৈয়দ নুরও এমনটি করে তার স্ত্রীর জন্য ইয়াবাকারবার করে অর্জিত অর্থ দিয়ে একটি গলার হার ও এক জোড়া কানের দুল ক্রয় করেছেন। এ দু’পদের স্বর্ণালংকারের ওজন হলো ২২ ভরি। ক্রয়মূল্য হলো-১৩ লক্ষ টাকা। টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা পুরাতন বাজার রোডের উস্মী জুয়েলার্স থেকে ৯১৯ নাম্বার ক্যাশ মেমো মূলে গত ৩০ ডিসেম্বর এই স্বর্ণালংকার ক্রয় করা হয়েছে। আগে ধৃত ইয়াবাকারবারীদের স্বীকারোক্তি ও পুলিশের গোয়েন্দা রিপোর্টে টমটম চালক ছৈয়দ নুরের অস্বাভাবিক লেনদেন ও বিপুল সম্পদ অর্জনের বিষয়টি টেকনাফ মডেল থানা পুলিশের নজরে আসায় তাকে গ্রেপ্তার করে ইতিমধ্যে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বিপিএম (বার) সিবিএন-কে জানিয়েছেন। ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বিপিএম (বার) সিবিএন-কে আরো জানান, গত দেড় বছরে ইয়াবা ও মাদক বিরোধী অভিযানে ইয়াবাকারবারীদের সম্পদ রাখার কৌশল পাল্টানোর এটা একটা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী ঘটনা। সন্দেহজনকভাবে টমটম চালক লোকদেখানো শ্রমজীবী ছৈয়দ নুরের কুঁড়ে ঘরে অভিযান চালাতে গিয়ে তল্লাশীর সময় এই স্বর্ণালংকার ও জুয়েলার্সের ক্যাশমেমো তাদের চোখে পড়ে। পরে তদন্তে বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত উঠে আসে।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার) বৃহস্পতিবার ২ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬’৪৫ মিনিটে তাঁর নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। লাইক, কমেন্ট, শেয়ারে ভরে গেছে স্ট্যাটাসটি। বিশেষ করে ইয়াবাকারবারীরা তাদের অর্জিত অর্থ নতুন নতুন পদ্ধতিতে জমা রাখার কৌশল রাষ্ট্র ও আইনের চোখ থেকে ফাঁকি দিতে পারবেনা মনে করে, তারা এখন আতংকিত হয়ে পড়েছেন।

নিন্মে এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার) এর ফেসবুক আইডিতে দেওয়া স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো :

“কক্সবাজার জেলার টেকনাফের বেশিরভাগ ইয়াবা ব‍্যবসায়ীর একসময়কার পেশা ছিল টমটম চালনা, অটো রিক্সা ড্রাইভার, ভ‍্যান চালক, জেলে, চাষী, বাসের হেলপার, ড্রাইভার বা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব‍্যবসায়ী। ইয়াবা ব‍্যবসা করে রাতারাতি কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা এবং বানিয়েছেন আলিশান বাড়ি। এসব তথাকথিত ব‍্যবসায়ীদের এখন দিনকাল খুব খারাপ যাচ্ছে। কেউ আত্নসমর্পন করেছে, কেউ গ্রেফতার হয়ে জেলখানায় আছে, কেউ ক্রসফায়ারে দুনিয়া থেকে চলে গেছে কেউ বা পলাতক জীবনযাপন করছে। তাদের অনেকের আলিশান বাড়ি ঘর স্থানীয় সচেতন জনতা ভেঙ্গে দিয়েছে। ফলে নতুন করে এই ঘৃণ্য পেশায় আসা কিছু ইয়াবা ব‍্যবসায়ী জনগণের চোখকে ধোকা দেওয়ার কৌশল হিসেবে এখন আর আলিশান বাড়ি বানাচ্ছে না। ভিন্ন কৌশলে টাকা জমানো শুরু করেছে। তাদেরই একজন টেকনাফের হ্নীলা এলাকার সৈয়দ হোসেনের পুত্র সৈয়দ নুর। পেশায় একজন টমটম চালক সৈয়দ নুরের বাড়িঘর দেখে উপায় নাই যে তিনি কত টাকার মালিক!! স্ত্রীর জন্য কিনেছেন লাখ লাখ টাকার অলংকার। তার মধ্যে একটিরই ওজন ২২ ভরি!! অবশেষে ধরা পড়েছে তথাকথিত এই নিরীহ টমটম চালক।”