ইমাম খাইর, সিবিএন:
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মাহবৃুব আলম তালুকদার বলেছেন, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলার কার্যকর সমাধান হতে পারে।
একটা সময়ে স্থানীয়রা বলবে, রোহিঙ্গাদের আগমনের কারণেই অবকাঠামোগত প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। কক্সবাজারের বেকার লোকজন চাকুরি পেয়েছে।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ট্রাস্টের প্রকল্প পরিচিতি সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহাবুব আলম তালুকদার বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে এক বিরল নজির স্থাপন করেছে। আমাদের এই সংকট মোকাবেলায় আরও সহনশীল হতে হবে। উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয় জনগণই সর্ব প্রথম এই সংকট মোকাবেলায় ঝাঁপিয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, প্রত্যেক সংকট একটি সুযোগ তৈরি করে যেটির মাধ্যমে কোন অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। এই সংকটের পর, এখন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রতি দৃষ্টি দেয়ার সময় এসেছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের পাসাপাশি এই সংকট থেকে কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করতে হবে। তিনি কোস্ট ট্রাস্টকে ধন্যবাদ জানান এবং সহযোগিতার আশ্বাস দেন ।
দাতা সংস্থা, এনজিওগুলোর উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথি বলেছেন, স্থানীয়দের বঞ্চিত করে যাতে কোন কাজ না হয়। ক্যাম্পে কাজের বেলায় শতভাগ সততা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। কোথাও নয়ছয় করে পার পাওয়া যাবে না।
রোহিঙ্গাদের স্থান দিয়ে প্রথম দিকে একটু খারাপ লাগলেও সময়ে লাভের বিষয়টি সবাই বুঝতে পারবে মন্তব্য শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি ঘোষণায় আমরা নিজেদের ঘরবাড়ি উজাড় করে রোহিঙ্গাদের থাকার জায়গা দিয়েছি। নিজেরা না খেয়ে তাদের খাইয়েছি। যে কারণে আমরা গরীব দেশের নাগরিক হলেও বিশ্ব দরবারে মর্যাদাবান। বাংলাদেশ অনেক ‘বড় হৃদয়ের দেশ’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
একই সঙ্গে প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আমরা যে আশ্রয় দিতে পেরেছি, সেটি বড় ক্রেডিট। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ একটি মানবিক দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, যা পৃথিবীর অনেক বড় দেশও পারেনি।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোঃ মাহবুব আলম তালুকদার বলেছেন, প্রত্যাবাসন একটি আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া। আমরা চাইলেই হঠাৎ হবে না।
তবে, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে ‘ফেক আচরণ’ করছে মিয়ানমার। মিটিংয়ের পর মিটিং হলেও আপাততঃ আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। এ জন্য জাতিসংঘের সহায়তা নিতে হবে। প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টায় আছে বলেও মন্তব্য আরআরআরসির।
সভায় বক্তব্য রাখেন – কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপ-পরিচালক মো. আবুল কাশেম, ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স কক্সবাজারের উপসহকারী পরিচালক মোঃ আব্দুল মালেক, দাতা সংস্থা মাল্টিযার ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তা হাবিবা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, উখিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাহাব উদ্দিন।
কোস্ট ট্রাস্টের প্রকল্প সমন্বয়কারী তাহরিমা আফরোজ টু¤পার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় স্বাগত বক্তৃতা রাখেন আঞ্চলিক টিম লিডার জাহাঙ্গীর আলম, সমাপনী বক্তৃতা করেন সহকারী পরিচালক মো. মজিবুল হক মনির।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সহসশীলতা বৃদ্ধি প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন তাহরিমা আফরোজ টুম্পা। তিনি জানান, এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে টেকনাফের হ্নীলা ও উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের ১০০০ পরিবারের টেকসই আয় বৃদ্ধি, নিজস্ব পারিবারিক উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি, ৬৫টি আত্ননির্ভরশীল সংগঠন তৈরি এবং দুর্যোগ মোকাবেলা প্রস্তুতির সক্ষমতা বৃদ্ধি।
উপজেলা প্রাণী স¤পদ কর্মকর্তা ডা. সাহাবউদ্দিন বলেন, কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আর্থ সামাজিক উন্নয়নে সকল এনজিও এর সমন্বিতভাবে কাজ করা উচিত।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ আবুল কাশেম বলেন, জনগন এই প্রকল্প থেকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষনের মাধ্যমে আয়বর্ধনশীল কর্মকান্ডে যুক্ত হবে এবং তাদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাবে।
ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স কক্সবাজারের উপসহকারী পরিচালক মোঃ আব্দুল মালেক বলেন, এই প্রকল্প দুর্যোগ মোকাবেলা প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করবে। এতে করে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।
মাল্টিযার ইন্টারন্যাশনালের হাবিবা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, কোস্ট ট্রাস্ট স্থানীয় জনগোষ্ঠী জন্য কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করেছে বলেই আমরা তাদের সাথে কাজ করছি। আমরা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার উন্নয়নে কোস্টের সাথে আরও কাজ করতে চাই।
উন্মুক্ত আলোচনায় হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী তার বক্তব্যে বলেন, কোস্ট ট্রাস্টের এই প্রকল্প স্থানীয় জনগণকে যেন সময়োপযোগী দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষনের মাধ্যমে আয়বর্ধনশীল কর্মকান্ডে যুক্ত করে,এবং তবেই তাদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। তাঁর পক্ষ হতে এই প্রকল্পের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
উখিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি সরওয়ার আলম শাহিন বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান প্রকল্প অবহতিকরন সভা করলেও অগ্রগতি নিয়ে আর কোন সভা করেনা। শুধু মাত্র কোস্ট ট্রাস্ট সবসময় প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে সভার আয়োজন করে।
কক্সবাজার নিউজ ডটকম (সিবিএন) এর বার্তা সম্পাদক ইমাম খাইর বলেন, কোস্ট ট্রাস্টের এই প্রকল্পকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা চাই, কোস্ট ট্রাস্টের মত অন্য প্রতিষ্ঠান এবং সরকারী পর্যায়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে আরও প্রকল্প নেয়া হোক।
নয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মুহাম্মাদ মুজিবুল হক বলেন, ‘রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ফলে ইউনিয়নের স্থানীয় জনগোষ্ঠী অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তাদের অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন।
এছাড়া ভয়েস অব উখিয়ার সম্পাদক নুর মোহাম্মদ সিকদার, পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোজাফফর আহমদ, বালুখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সবুজ সেন বক্তব্য রাখেন।