মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

ড. মিজানুর রহমান আল আজাহারী। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা নন, পবিত্র কোরআনের একজন মুফাসসির। অর্থাৎ সুললিত কন্ঠে পবিত্র কোরআনের ব্যাখ্য করেন সুন্নাহ আর ইসলামি চিন্তা চেতনার আলোকে। মানুষের প্রশ্নের জবাব দেন কোরআন সুন্নাহকে ভিত্তি করে। ব্যাখ্যাগুলো তিনি মানুষকে এমনভাবে বুঝিয়ে মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেন, যাতে মানুষ তা প্রত্যাহিক জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ করতে পারে। আমল করতে পারে সঠিকভাবে।

এই ড. মিজানুর রহমান আল আজহারীর তাফসির মাহফিল ছিলো শুক্রবার ২৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাত্রে। কক্সবাজার সদর উপজেলার বৃহত্তর ঈদগাহ এলাকার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ইউসুফেরখিল গ্রামে। ইউসুফেরখিল সীরাত কমিটি পূর্ব ইউসুফেরখিল সীরাত ময়দানে প্রতিবছরের মতো এই আয়োজন করে। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঈদগাহ বাস স্টেশনের একটু উত্তরে গিয়ে পশ্চিমমুখী গোমাতলী সড়ক হয়ে পশ্চিম উত্তর দিকে যেতেই প্রায় ১২ একর বিশিষ্ট পূর্ব ইউসুফেরখিল সীরাত ময়দান।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে এই বিশাল ময়দান কানাই কানাই পূর্ণ হয়ে যায়। মাহফিলমুখী মানুষের ঢল তখনো আরো বাড়ছে। মানুষের ঢল নয়, যেন বাঁধভাঙ্গা স্রোত। স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবেনা। আয়োজকেরা রাত ৮ থেকেই মাইকে বার বার ঘোষনা দিতে থাকে মাঠের আশেপাশের জায়গায় দাঁড়িয়ে হলেও কোন রকমে ড. মিজানুর রহমান আল আজহারীর বয়ান শোনতে। সীরাত কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আজিম সিবিএন-কে জানান, এ এলাকায় এর চেয়ে বড় মাঠ আর নেই। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। কিন্তু এই তীব্র শীতেও আমাদের ধারণার চেয়ে কয়েকগুণ মানুষ বেশী হয়েছে। আয়োজকদের পক্ষে মাইকে বার বার ক্ষমা চাচ্ছিলেন তিনি, মাহফিলে বসতে দিতে নাপারা মানুষের কাছ থেকে। অবিশ্বাস্য স্রোত হলেও কোন বড় আওয়াজ নেই, নেই কোন উশৃংখলতা। শৃঙ্খলায় পরিপূর্ণ। ৫/৬ টি প্রজেক্টরের মাধ্যমে মাহফিলের বয়ান লাইফ দেখানো হচ্ছে। মাহফিল আয়োজক কমিটি ইউসুফেরখিল সীরাত কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাফেজ সাইফুল ইসলাম সিবিএন-কে বলেন, পূর্ব ইউসুফেরখিল সীরাত ময়দানের বাহিরে চারপাশে এসব প্রজেক্টর বাসানো হয়েছে। তারপরও এসব প্রজেক্টর এরিয়া উপচিয়ে উত্তরে উত্তর ইউসুফেরখিল, দক্ষিণে বাঁশঘাটা ও ঈদগাহ বড়বাজার, পশ্চিমে বোয়ালখালী গোমাতলী সড়ক, পূর্বে হরিপুর এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে। রাত সাড়ে ৯ টা বাজার আগেই কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঈদগাহ বাস স্টেশনের উত্তরে হজরত ডুলাফকিরের গেইট, দক্ষিণে গরুবাজার পর্যন্ত মানুষ ও গাড়িতে বল্ক হয়ে যায় মহাসড়ক। চকরিয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, লোহাগাড়া, আলীকদম, লামা, আজিজনগর, রামু, নাইক্ষ্যংছড়ি, উখিয়া, টেকনাফ থেকেও হাজার হাজার মানুষ মাহফিলে যোগ দিতে এসেছেন। নিজেদের উদ্যোগে আসা -যাওয়া গাড়ি ভাড়া করে। ইউসুফেরখিল সীরাত কমিটির সভাপতি হুমায়ুন কবির শইদু সিবিএন-কে জানান, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশ ও আনাসার রয়েছে ২ শতাধিক। মাহফিল আয়োজকদের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে প্রায় ৩ শ’। তারপরও আয়োজক কমিটি হিমশিম খাচ্ছেন, আগত লোকজনকে সামাল দিতে। স্থানীয় লোকজনের ধারণা ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজারের মতো মানুষ হয়েছে এই বিশাল তাফসির মাহফিলে। স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ মুরব্বিদের মতে, এতো বড় মাহফিল তারা কখনো দেখেননি। ড. মিজানুর রহমান আল আজহারী তাফসির শুরু করার আগে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল ও বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন, ব্যারিস্টার নুরুল আজিম, ঈদগাহ আলমাসিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হেফাজুতুর রহমান নদভী। মাহফিলের এই অংশে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় মুরব্বি মাষ্টার আমান উল্লাহ। রাত ৯’৪০ মিনিটের দিকে ড. মিজানুর রহমান আল আজহারী তাঁর বয়ান শুরু করেন। সুনশান নিরবতা। শুধু ড. মিজানুর রহমান আল আজহারী বয়ানের মাঝে স্রোতাদের কাছ থেকে যা জানতে চান, শুধু তাহাই স্রোতারা স্বেচ্ছায় জবাব দিচ্ছেন। ড. মিজানুর রহমান আল আজহারী জঙ্গিবাদ, মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাফসির করেন। এভাবে টানা প্রায় দেড় ঘন্টা বয়ানের পর মোনাজাতের মাধ্যমে ১১’০৫ মিনিটে মাহফিল শেষ হয়।