নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালিত হয়েছে। “আমরা একসাথে” এই স্লোগান নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য জায়গার মতো বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে দিবসটিতে বর্ণাঢ্য র‌্যালী বের হয়।
জাতিসংঘের অভিবাসন-বিষয়ক সংস্থা আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এ বছর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের বৈশ্বিক প্রতিপাদ্য ছিল ‘সামাজিক সহাবস্থান’ এবং বাংলাদেশে দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘দক্ষতা’ যা কক্সবাজারের মত অভিবাসী-প্রবণ এলাকার জন্য জরুরী। কক্সবাজার ২০১৭ সাল থেকে ৮৪০,০০০ এর বেশি রোহিঙ্গা মানুষদের আশ্রয় দিচ্ছে।
আইওএম কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) কে দিবসটি উপলক্ষে নানা আয়োজনে সহায়তা করে। একটি বড় শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিনটি শুরু হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, বিএমইটি, বিভিন্ন সরকারী দপ্তর, আইওএম এবং অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য এই শোভাযাত্রা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসন অফিসের সামনে শেষ হয়।
সকালে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় যেখানে বক্তারা বাংলাদেশী অভিবাসীদের গুরুত্ব এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেমিটেন্সের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা।
১১,৭০০,০০০ বাংলাদেশী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী হিসেবে আছেন জানিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার বলেনঃ “নিরাপদ ও বৈধ অভিবাসন এবং দক্ষতা বিকাশের পাশাপাশি রেমিট্যান্স বাড়াতে সর্বক্ষেত্রে দেশের মানুষকে সচেতন করতে হবে। এ বছর, ৬১৪,০০০ মানুষ বিদেশে গিয়েছে এবং তারা রেমিটেন্স-এর মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। আমাদের উচিত অভিবাসন মাইগ্রেশন সুবিধাগুলো কাজে লাগানো এবং দেশের মানুষকে সঠিক ও বৈধ উপায়ে অনুপ্রাণিত করা।“
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে উদযাপনে সহযোগীতা করায় কক্সবাজারবাসীকে ধনবাদ জানিয়ে আইওএম বাংলাদেশ মিশনের উপ-প্রধান ম্যানুয়েল পেরেইরা বলেনঃ “আজ আমাদের এই স্বীকৃতি দেওয়া উচিত যে অভিবাসন এমন এক উপকার যা সকলের পক্ষে কাজ করে। আজ আমরা অভিবাসীদের সাফল্য সহ অভিবাসনের ইতিবাচক দিকগুলি উদযাপন করছি। আমি সন্তুষ্ট যে আমরা যুবসমাজ সম্পর্কে, রেমিট্যান্স এবং সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা, সঠিক এবং নিরাপদ অভিবাসন পথ সম্পর্কে কথা বলছি এবং চিন্তা করছি।“
সেমিনার শেষে প্রধান অতিথি এডিসি আশরাফুল দিবসটি উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের মাঝে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন। দিবসটি উপলক্ষে গত ১৭ ডিসেম্বর, কক্সবাজার সরকারী কলেজ এবং কক্সবাজার ডিসি কলেজে একটি রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল যেখানে শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশী অভিবাসী ইস্যু এবং রেমিটেন্সের গুরুত্ব সম্পর্কে তাদের চিন্তাভাবনা প্রকাশ করে।
নিরাপদে অভিবাসনে কক্সবাজারের লোকদের অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে, আইওএম গ্লোবাল মাইগ্রেশন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের (জিএমএফএফ) অংশ হিসাবে ১৮ টি চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী, চিত্র-প্রদর্শনী, তিন দিনব্যাপী আর্ট কর্মশালার আয়োজন করেছিল। দিবসটি উপলক্ষে সামাজিক সংহতির বাড়ানোর জন্য স্থানীয় ও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের পারস্পরিক অংশগ্রহণে টেকনাফে একটি ফুটবল ম্যাচ আয়োজন করা হয়েছে।
২০১৮ সালে, ১৫.৫ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স গ্রহণ করে বাংলাদেশ শীর্ষ দশটি রেমিট্যান্স গ্রহণকারী দেশের তালিকায় স্থান নেয়। ২০০০ সালে ৪ ডিসেম্বর, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ, বিশ্বজুড়ে অভিবাসীদের বিশালতা এবং ক্রমবর্ধমান সংখ্যার কথা বিবেচনা করে ১৮ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস হিসাবে ঘোষণা করে।