মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজারবাগ পুলিশ সদর দপ্তরে ঘুমন্ত অবস্থায় এদেশের পুলিশ বাহিনীকে বর্বরোচিত আক্রমণ করে সর্বপ্রথম আঘাত হেনেছিল। সেই ভয়ংকর আক্রমণ প্রতিরোধ করতে গিয়ে শহীদ হয়েছিলেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর গর্বিত অনেক সদস্য। বিশেষ করে এ ভয়াবহ আক্রমণ প্রতিরোধ করতে গিয়ে কনস্টেবল আবদুস সালাম ও মোঃ জাহাঙ্গীর পাক হানাদার বাহিনীর গোলাবারুদের আগুনে পুড়ে নির্মমভাবে শহীদ হন। পরে আর্ম সাব ইন্সপেক্টর বদরুদ্দীন ও সার্জেন্ট মুর্তুজা অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতায় শহীদ হওয়া এই ২ জন পুলিশ সদস্যের মৃতদেহ উদ্ধার করে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের ২ নম্বর মাজার গেইটের পেছনে সমাহিত করেন। কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার মুন্সী কবির উদ্দিন আহমদকে কুমিল্লা সেনানিবাসে ডেকে নিয়ে সেনানিবাসের বিগ্রেড কমান্ডারের নির্দেশ মানতে এবং এসপি মুন্সী কবির উদ্দিন আহমদকে পুলিশের অস্ত্রাগারের চাবি দিয়ে দিতে বললে এসপি মুন্সী কবির উদ্দিন আহমদ তাতে অস্বীকার করায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তাঁকেও পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করতে হয়। এছাড়া অনেকে পুলিশ সদস্য মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। যাঁদের আত্মত্যাগে দেশ আজ স্বাধীন। পুলিশ বাহিনী আজ সমৃদ্ধ। যাঁরা আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস, সাহসের বাতিঘর। তাই এই বিজয়ের মাসে পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে।

রোববার ১৫ ডিসেম্বর কক্সবাজার জেলা পুলিশের মাসিক কল্যান সভায় সভাপতির বক্তব্যে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর বীর শহীদদের এ ত্যাগের ইতিহাস তুলে ধরেন। তিনি বলেন,
বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের প্রথম দিনে গত ১ ডিসেম্বর কক্সবাজার পুলিশ লাইনে কক্সবাজারে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মহান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ণাঢ্য সম্বর্ধনা দিতে পেরে কক্সবাজার জেলা পুলিশ গর্বিত।

সভাপতির বক্তব্যে পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন তাঁর বক্তব্যে, “স্বাধীনতা তুমি স্বপ্নের ভুবন শ্যামল পরিবেশ,
স্বাধীনতা তুমি সকলে মিলে সাজাই এই দেশ” কবির এই অমিয়বাণী উল্লেখ করে বলেন, অতীতের কোন সরকার মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানীদের যথার্থ মূল্যায়ন করেনি। অথচ এই বীর সন্তানদের কারণেই জাতি একটি স্বাধীন দেশ, একটি ভূখন্ড, একটি পতাকা পেয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে অবহেলিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরোচিত মর্যাদা দিয়েছেন। সর্বক্ষেত্রেই তাঁদের মূল্যায়ন করছে সরকার। আগে তাঁরা সম্পূর্ণ অবহেলিত ছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান প্রদর্শন ও যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে জাতি, দেশ ও প্রতিটি নাগরিক আজ গর্ববোধ করছেন। একটি স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ হিসাবে বিশ্ব পরিমন্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বেড়েছে ব্যাপকভাবে।

কক্সবাজার পুলিশ লাইন্সের ড্রিল শেডে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) রেজওয়ান আহমেদ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মাসিক কল্যাণ সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ আদিবুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) নিহাদ আদনান তাইয়ান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ইনসার্ভিস) বজলুর রহমান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) কাজি মতিউল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (মহেশখালী সার্কেল) রতন বরণ দাশ গুপ্ত, সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক বিভাগ) বাবুল চন্দ্র বণিক, জেলার ৮টি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সহ জেলার অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।

উক্ত কল্যান সভায় ভাল কাজে কৃতিত্বের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ সার্কেল, শ্রেষ্ঠ থানা, শ্রেষ্ঠ অস্ত্র উদ্ধারকারী, শ্রেষ্ঠ মাদক উদ্বারকারী ও শ্রেষ্ঠ ওয়ারেন্ট তামিলকারী সহ বিগত অক্টোবর মাসের মোট ১১ জন ও বিগত নভেম্বর মাসে মোট ৮ জনকে সার্টিফিকেট ও অর্থ পুরষ্কার, জেলার বিভিন্ন থানার বিগত অক্টেবর মাসে ১৩ জন (এএসআই ও এসআই) অফিসারদেরকে ও বিগত নভেম্বর মাসে ১৩ জন (এএসআই ও এসআই) অফিসারদেরকে মাসিক মূল্যায়নের উপর সম্মাননা স্মারক ও জেলার বিভিন্ন থানার ৮ জন চৌকিদার, দফদার, ২ জন কমিউনিটি পুলিশিং এর সদস্য এবং জেলার বিভিন্ন সেরেস্তাদার ৩ জন পুলিশ সদস্যসহ সকলকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়। জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় আসামী, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের গ্রেফতার এবং অপরাধ দমনে চৌকিদার, দফাদার ও কমিউনিটি পুলিশিং এর সদস্যগণ বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করায় সভার সভাপতি এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম তাদেরকে ধন্যবাদ জানান। সভাপতি মাসিক কল্যাণ সভায় বিভিন্ন আবেদন-নিবেদনের মাধ্যমে উপস্থাপিত সকল সমস্যার খুবদ্রুত সমাধান হবে বলে আশ্বাস দেন। পুলিশ সুপার তাঁর বক্তব্যে জেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় সভায় উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

পরে একইদিন বেলা ১২ টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।