সিবিএন ডেস্ক:

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছে বাংলাদেশের আপিল আদালত।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের বেঞ্চ শুনানি শেষে সর্বসম্মতিক্রমে এই আদেশ দেন।

আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছে, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও এ বিষয়ে তার অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি সম্মতি দিলে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে তাকে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

জামিন আবেদন খারিজ করে দেয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা।

খালেদা জিয়া উপযুক্ত চিকিৎসা চাইছেন দাবি করে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন গণমাধ্যমকে বলেন, “আদালতে জমা দেয়া মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়েছে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার দরকার। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে যে তার প্রপার ট্রিটমেন্ট হচ্ছে না আজকের মেডিকেল রিপোর্টে তাই প্রতিফলিত হয়েছে।”

সরকারি নেতারা উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যান, এছাড়া পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমোদন দিয়েছিল সে দেশের আদালত।, বিএনপির আইনজীবীরা এসব যুক্তি আদালতের সামনে উপস্থাপন করলেও তা আমলে নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন, মি. আবেদিন।

এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের দাবি খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে।

তিনি অনুমতি না দেয়ার কারণে তার উন্নত চিকিৎসা শুরু করা যাচ্ছেনা বলে জানান তিনি।

গণমাধ্যমকে মি. আলম বলেন, “আদালতের সামনে তিনটি মেডিকেল রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনটি রিপোর্টে তার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। আদালত তার পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল রিপোর্ট যাচাই বাছাই শেষে এবং দুই পক্ষের আইনজীবীর যুক্তিতর্কের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।”

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
এজলাসে প্রবেশের আগে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল আবেদনের ওপর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আপিল বিভাগে শুনানি হয়।

শুনানিকে কেন্দ্র করে পুরো হাইকোর্ট এলাকাজুড়ে ছিল নিরাপত্তার কড়াকড়ি।

আদালতের প্রবেশের আগে নিরাপত্তাবাহিনী সবার তল্লাশি চালায়।

প্রধান বিচারপতির এজলাসেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বসানো হয় আটটি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা।

আদালতকক্ষের ভেতরে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ছাড়া আর কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।

এদিকে শুনানি চলাকালে আইনজীবী পরিষদ চত্বরে পাল্টাপাল্টি মিছিল করেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা।

আজ আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ১২ নম্বরে ছিল খালেদা জিয়ার এই আপিল আবেদন শুনানি।

বুধবার বিকেলে জাতীয় ঈদগাহ, হাইকোর্ট মাজার গেট ও বার কাউন্সিল ভবনের সামনে তিনটি মোটরসাইকেল পোড়ানোর ঘটনা ঘটে।

এর জেরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ ১৩৫ জনের বিরুদ্ধে আজ সকালে শাহবাগ থানায় দুটো মামলা করে পুলিশ।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদিনসহ অন্যান্য আইনজীবীরা।এজলাসে প্রবেশ করছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদিনসহ অন্যান্য আইনজীবীরা।

গত পাঁচই ডিসেম্বর এই শুনানির কথা থাকলেও সেদিন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন জমা না দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সময় চাইলে আদালত শুনানি পিছিয়ে ১২ই ডিসেম্বর অর্থাৎ আজকের দিন নির্ধারণ করে।

শুনানি পিছিয়ে দেয়ার প্রেক্ষাপটে আদালতকক্ষে সেদিন ব্যাপক বিক্ষোভ ও হট্টগোল করেন খালেদা জিয়ার সমর্থক আইনজীবীরা।

তাদের বিক্ষুব্ধ অবস্থানের কারণে টানা তিন ঘণ্টা ধরে আপিল বিভাগের কার্যক্রমে কার্যত অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।

এই পরিস্থিতিকে নজিরবিহীন হিসেবে বর্ণনা করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

তবে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের দাবি, তারা আইনের মধ্যে থেকেই প্রতিবাদ করেছেন।

খালেদা জিয়ার আরও কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাকি থাকায় এই শুনানি পেছানো হয়েছে বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

শুনানি উপলক্ষে আদালতে ছিল নিরাপত্তার কড়াকড়ি।
শুনানি উপলক্ষে আদালতে ছিল নিরাপত্তার কড়াকড়ি।

গত ২৮শে নভেম্বর বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট তলব করে আপিল বিভাগ।

৫ই ডিসেম্বর জামিন আবেদনের ওপর শুনানির দিন এই প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হলেও এর জন্য আরও সময় চান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

পরে আদালত ১১ই ডিসেম্বরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল প্রতিবদন আদালতে জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।

সেই বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে অর্থাৎ বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ মেডিকেল রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয় বলে জানা গেছে।

সেখানে জানানো হয় যে, খালেদা জিয়া আথ্রাইটিস রোগের পাশাপাশি ডায়াবেটিস এবং রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন।

২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া।

ওই মামলায় গত ২৯শে অক্টোবর খালেদা জিয়ার সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে হাইকোর্ট।

তার আগে ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠায় আদালত।

শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে গত বেশ কয়েকমাস যাবৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে কেবিন ব্লকে চিকিৎসাধীন আছেন।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা রয়েছে। ইতোমধ্যে ৩৫ টি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন হয়েছে। গত প্রায় দুই বছর ধরে জামিনের চেষ্টা করছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার প্রতিবেদন দিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

জামিন আবেদনের ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তার শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছেন আদালতের সামনে।