বার্তা পরিবেশক :
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ২০০৯ (সংশোধিত) অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে মূল দলের সকল পর্যায়ের কমিটির গুলোতে বাধ্যতামূলকভাবে ৩৩ শতাংশ নারী অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে নারী কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি থাকলেও ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত দলের নেতৃত্বস্থানীয় পদগুলোতে নারীর অংশগ্রহণ খুবই নগণ্য। এসকল বাঁধা দূরীকরণে উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য নারীনেত্রীরা সকল রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশনের কাছে ১৩টি সুপারিশ তুলে ধরেছেন।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) কক্সবাজার প্রেসক্লাবে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ‘মূলধারার রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সুপারিশগুলো তুলে ধরেন কক্সবাজার জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হামিদা তাহের ও জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক হুমায়রা বেগম।
সুপারিশগুলো হল- ১, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ২০০৯ (সংশোধিত) ধারা ৯০ বি বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে। এই সেল রাজনৈতিক দলের মূল ধারার কমিটিতে নারীর অংশগ্রহণ প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে কিনা তা নিয়মিতভাবে মনিটর করবে।
২, খুব শিগগিরই দলগুলো তাদের কাউন্সিল করবে। সুতরাং নির্বাচন কমিশন থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে নারী অন্তর্ভুক্তির সময় সীমা স্মরণ করিয়ে চিঠি দিতে হবে।
৩, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতির উপর রাজনৈতিক দলগুলো থেকে নির্বাচন কমিশনে বাৎসরিক প্রতিবেদন পেশ করার বাধ্যবাধতা থাকতে হবে। সেখানে কমিটিতে নারীর অন্তর্ভুক্তর অগ্রগতি বিষয়ে উল্লেখ থাকতে হবে।
৪, কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে তৃণমূলে ৩৩ শতাংশ নারীর অন্তর্ভুক্ত বাস্তবায়নের জন্য একটা নির্দেশনা প্রদান করতে হবে। একইভাবে জেলা বা মহানগর থেকে উপজেলা এবং থানা পর্যায়ে এই আইন বাস্তবায়নের জন্যে নির্দেশনা প্রদান করতে হবে।
৫, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক দলে একটা মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে। মহিলা বিষয়ক সম্পাদককে প্রধান করে একটি সাব কমিটি তৈরী হতে পারে দলে যারা তৃণমূলের কমিটিতে নারীর অন্তর্ভুক্তি অগ্রগতি মনিটরিং করবে।
৬, সকল পর্যায়ে কমিটিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক নারী অন্তর্ভুক্ত না থাকলে কমিটি অনুমোদন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
৭, দলের মধ্যে সকল কার্যক্রমে নারীদেরকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিভিন্ন মিটিং এর সময় এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারে। সর্বোপরি নারী-বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
৮, সম্পাদকীয় পদসহ সকল নেতৃত্বস্থানীয় পদের বিস্তারিত দায়িত্ব নির্দিষ্ট করতে হবে এবং দলের গঠনতন্ত্রে উল্লেখ থাকতে হবে। নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের সকল কমিটিতে নারীদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।
৯, আগ্রহী নারীদেরকে উৎসাহী করতে উঠান বৈঠক করতে হবে। তাদেরকে দলের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।
১০, রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে আচরণবিধি থাকতে হবে। পাশাপাশি নারী-বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে নারীর প্রতি অসম্মানজনক আচরণের বিধির বিষয়টি বিধিমালাতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মীমাংসার জন্যে একটি পদ সৃষ্টি করা যেতে পারে। ফলে নারীর প্রতি যেকোন অসৌজন্যমূলক আচরণ রোধ দরা সম্ভব হবে এবং নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বাড়বে।
১১, কাউন্সিল প্রস্তুত কমিটিতেও নারীর অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে হবে।
১২, নারীদের রাজনৈতিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
১৩, রাজনৈতিক দলগুলোতে নারী রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারকে বিভিন্ন প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন অর্থ অথবা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে। আবার আইনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলসমূহকে উদ্বুদ্ধ করতে যে দল নির্বাচনে নির্দিষ্ট সংখ্যক নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিবে তাদেরকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রণোদনা হিসেবে প্রদান করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে তারা আরও জানান, দেশে দুটি প্রধান দলের শীর্ষ পদে নারী নেতৃত্ব থাকা স্বত্বেও আমাদের রাজনৈতিক কাঠামো নারীর ক্ষমতায়নের সহায়ক নয়। রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে এমন উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে যেখানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণে আগ্রহী হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র রাজনৈতিক ফেলো ইউসুফ বদরী, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চট্টগ্রাম বিভাগের জোনাল ম্যানেজার সদরুল আমিন, কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহেনা আক্তার পাখি, রামু উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফরিদা ইয়াসমিন, কক্সবাজার পৌরসভার সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ইয়াছমিন আক্তার প্রমুখ।