মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর হাইকোর্টের প্রদত্ত এক রীট মামলার আদেশের কারণে কক্সবাজার জেলার ৭১ টি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের জন্য হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে যাচ্ছে।

ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারে উদ্যোক্তা পদে বর্তমানে কর্মরতদের রাজস্ব খাতে আত্তীকরণ না করে ডিজিটাল সেন্টারে হিসাব সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ কার্যক্রম শুরুর বিরুদ্ধে কক্সবাজার সহ দেশের ৪ টি জেলার ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের ১১৯ জন উদ্যোক্তা পদে কর্মরতরা হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহমুদ হাসান তালুকদার সমন্বয়ের গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ ২ টি পৃথক রীট আবেদন করেন। এ রীট আবেদনটির শুনানি শেষে আবেদনকারী ১১৯ জনের জন্য ১১৯ টি পদ আগামী ৬ মাসের জন্য সংরক্ষনের নির্দেশ প্রদান করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ইউপি ডিজিটাল সেন্টারে উদ্যোক্তা পদে কর্মরতদের রাজস্ব খাতে আত্তীকরণ না করে হিসাব সহকারী-কাম-কম্পিউটার পদে প্রকাশিত নিয়োগ প্রক্রিয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ডিজিটাল সেন্টারে উদ্যোক্তা পদে কর্মরতদের রাজস্ব খাতে আত্তীকরণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্টের উক্ত বেঞ্চ। মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর ইউনিয়ন পরিষদে হিসাব সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটরদের পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা পৃথক দুইটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহমুদ হাসান তালুকদার সমন্বয়ের গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। দীর্ঘ ৯ বছর ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারে কর্মরত আছেন রিট আবেদনকারীরা। অথচ তাদের রাজস্ব খাতে আত্তীকরণ না করে হিসাব সহকারী-কাম-কম্পিউটার পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে।

হাইকোর্টের এই আদেশের ফলে ইউনিয়ন পরিষদে হিসাব সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটরদের এই ১১৯ টি পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বন্ধ রেখে পদগুলো সংরক্ষণ করতে হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রথম দফায় ১২ জন, দ্বিতীয় দফায় ৩৪ জন ও তৃতীয় দফে ২৫ জন সহ কক্সবাজার জেলার মোট ৭১ টি ইউনিয়ন পরিষদের জন্য মোট ৭১ জন হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এই ৭১ জন হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ পাওয়ার জন্য প্রায় ৭ হাজার আবেদন জমা পড়ে। আবেদন গুলো যাচাই বাচাই করে আগামী ২০ ডিসেম্বর শুক্রবার কক্সবাজার শহরের বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমিতে লিখিত পরীক্ষা গ্রহনের জন্য বাচাইয়ে উত্তীর্ণ আবেদনকারীদের কাছে প্রবেশপত্র প্রেরণ করা হয়েছে।

কিন্তু কক্সবাজার জেলা সহ ৪ টি জেলার ইউনিয়ন পরিষদে হিসাব সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটরদের পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা পৃথক দুইটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের প্রদত্ত আদেশের কারণে এই নিয়োগ সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে গেছে। রীটে কক্সবাজার জেলার রিট আবেদনকারিগণ হলেন-আহমেদ আনোয়ার, মুরশেদুল করিম, জিয়াউল হক বাপ্পি, এহসান, গিয়াস উদ্দিন টিটু, আনোয়ারুল কবির, আব্দুল হাকিম, মোঃ মহিউদ্দিন, রুপন নাথ, শাহেদা পারভিন ও অন্যান্যরা।

এখন নিয়োগ কর্তৃপক্ষকে হাইকোর্টের আদেশ মতো পদ সংরক্ষিত রেখে অবশিষ্ট পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রাখা সম্ভব হবে কিনা, নাকি নতুন করে প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে, নাকি হাইকোর্টের রীট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ কর্তৃপক্ষকে অপেক্ষা করতে হবে, সেটা এখন প্রশ্ন সাপেক্ষ বিষয়। আর নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা গ্রহনের আরো যথেষ্ট সময় থাকায় ইউনিয়ন পরিষদে বর্তমানে কর্মরত অন্যান্য উদ্যোক্তারাও হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়ে একই আদেশ আনতে পারেন। তখন এই নিয়োগ প্রক্রিয়া আরো জটিল আকার ধারণ করবে।

এ বিষয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা সিবিএন-কে বলেন, হাইকোর্টের সহিমুহুরী পুরো আদেশ অফিসিয়ালি না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছেনা। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে উক্ত কর্মকর্তা সিবিএন-কে বলেন, আদেশের সার্টিফাইট কপি ফেলে মন্ত্রনালয়, রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে হাইকোর্টের আদেশের কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একটা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে সেটা বলা যায়।

কক্সবাজার জেলা ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারে কর্মরত সাথে অন্যান্য যেসব জেলার উদ্যোক্তা পদে কর্মরতরা মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রীট আবেদন করেছেন সেসব জেলা হলো-নারায়নগঞ্জ, সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহ।