সিবিএন ডেস্ক:
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানির দিকে তীক্ষ্ম নজর রাখছে বিএনপি। তার আইনজীবী ও বিএনপি নেতাকর্মীরা আশায় বুক বেঁধে আছেন। আজ পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের শুনানিতে জামিন মিলবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর। তবে আইনী মারপ্যাচে জামিন আটকে দেয়া হতে পারে এমন আশঙ্কাও রয়েছে তাদের।

নেতাকর্মীরা বলছেন, এতদিনে জামিন না হলেও এবার সর্বোচ্চ আদালত থেকে বয়স ও শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় নিয়ে ‘ন্যায় বিচার’ পাবেন খালেদা জিয়া।

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী কায়সার কামাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জামিন শুনানির দিকে নজর রাখছি। বেগম খালেদা জিয়া একজন বয়স্ক নারী, হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জামিনের জন্য এর থেকে ভালো কোনো গ্রাউন্ড হয় না। তাই প্রত্যাশা করি অতীতে সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হলেও এবার উচ্চ আদালত থেকে তিনি ন্যায় বিচার পাবেন।’

জানা গেছে, দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসনের জামিন হবে নাÑ এমনটা ভাবতেই চান না বিএনপি নেতাকর্মী ও খালেদার আইনজীবীরা। যদিও জামিন না হলে এ নিয়ে আইনি লড়াইয়েরও সুযোগ থাকবে না। তখন হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার করা আপিলের শুনানি করতে হবে।

এদিকে গত সোমবার খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীনও জামিনের বিষয়ে আশার কথা জানিয়েছিলেন। তার ভাষ্য ছিলো, ‘আমরা ন্যায়বিচার আশা করি। এটা সর্বোচ্চ আদালত। আল্লাহর রহমতে খালেদা জিয়া জামিন পাবেন।’

দুর্নীতির পৃথক দুটি মামলায় দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছেন। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। একইবছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় হয়। রায়ে খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।

ওই সাজা বাতিল ও খালাস চেয়ে গত বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল করেন খালেদা জিয়া। পরে গত ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে ওই মামলায় খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালতে দেওয়া জরিমানার আদেশ স্থগিত করেন।

পরে গত ২০ জুন বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠালে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। পরে গত ৩১ জুলাই বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ জামিন আবেদন খারিজ করেন।

পরে এর বিরুদ্ধে গত ১৪ নভেম্বর আপিল করেন খালেদা জিয়া। পরে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে ২৫ নভেম্বর শুনানির দিন ধার্য করা হয় শুনানির জন্য। কিন্তু আজকের দিন নতুন করে ধার্য করা হয়। সে অনুযায়ী পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে জামিনের শুনানি হবে।

যদি কোনো কারণে জামিন না হয় সেক্ষেত্রে পরবর্তি করণীয় নিয়ে জানতে চাইলে কায়সার কামাল বলেন, ‘আমরা এই মুহুর্তে নেগেটিভ কিছু ভাবতেই চাই না। ’

গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়া মুক্তি আইনজীবী আন্দোলনের চেয়ারম্যান তৈমুর আলম খন্দকার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এতদিন যা হয়েছে এবার আমরা বিশ্বাস করি বিচার বিভাগ প্রমাণ করবে তারা স্বাধীন এবং ন্যায় বিচারে বিশ্বাসী। কারণ সামান্য দুই কোটি টাকার একটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী, একজন বয়স্ক মানুষ জামিন না পেলে এটা দেশে খারাপ উদাহরণ হয়ে থাকবে।’

জামিন আটকে গেলে পরবর্তি পদক্ষেপ কি হবে সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তখন আস্থাহীনতার জন্ম নেবে। যদিও আদালত ছাড়া আমাদের উপায় থাকবে না। এমনটা হবে সেটা ভাবিও না। তারপরও হলে সিনিয়ররা বসে সিদ্ধান্ত নেবে কোন প্রক্রিয়ায় চলবেন। আর আন্দোলনের পথ তো খোলাই থাকবে।’

-ঢাকাটাইমস