মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

মো. মাহবুব উল আলম। পিতা-মরহুম নজীর আহমদ। কক্সবাজার শহরের উত্তর বাহারছরার ঐতিহ্যবাহী বুনিয়াদি পরিবারের সন্তান। দেশকে হানাদার মুক্ত করে স্বাধীন দেশে লাল সবুজের পতাকা উড়ানোর দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ১৯৭১ সালে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধে কর্ণফুলী কন্টিনজেন্ট-১ এ গেরিলা বেন্ড কেসি-১ এর কমান্ডার ও গেরিলা যুদ্ধ সমন্বয়কারীর দায়িত্বে ছিলেন ডা. মো. মাহবুব উল আলম।

রণাঙ্গনের এই অকুতোভয় সৈনিক ডা. মাহবুব উল আলম প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে স্বাধীন করে আর বসে থাকেননি। নিজেকে নিয়োজিত করেছেন চিকিৎসা সেবার মতো মহান পেশায়। ডা. হিসাবে সেবা দিয়েছেন মানুষকে নিরন্তর। পরে পক্ষাঘাত রোগে ডা. মাহবুব উল আলমের ডান হাত অবশ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে চিকিৎসকের মতো মহৎ পেশা তাঁকে ছেড়ে দিতে হয়।
ডা. মাহবুব উল আলমের ছোট ভাইয়ের নাম আহমদ উল্লাহ। ছোট ভাই আহমদ উল্লাহ’র কাছ থেকে ৮ লক্ষেরও বেশী টাকা কর্জ পেতেন, ডা. মো. মাহবুব উল আলম। ২০১৭ সাল থেকে ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে পাওনা টাকা চাইতে চাইতে ডা. মাহবুব উল আলম অনেকটা হাঁপিয়ে উঠছেন। সেন্ডেল, জুতো অনেক কিছু ক্ষয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজন, পারিবারিকভানবও পাওনা টাকা আদায় করতে ডা. মো. মাহবুব উল আলম কম চেষ্টা তদবির করেননি। দেনাদার আপন ছোটভাই হিসাবে ভাইয়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আদালতে মামলাও দায়ের করতে পারছেননা। তারপরও নিরূপায় হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহবুব আলম যখন পাওনা টাকা আদায়ে ভাইয়ের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, ঠিক তখনি লিগ্যাল এইড কক্সবাজার অফিসের একজন উপকারীভোগী তাঁকে পরামর্শ দেন মামলা না করেও লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে পাওনা টাকা আদায় করা যায়। লিগ্যাল এইড অফিসের উপকারভোগীর এই পরামর্শ নিয়ে জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান ডা. মো. মাহবুব উল আলম শরণাপন্ন হন, কক্সবাজার জেলা জজ আদালত ভবনের নীচ তলায় অবস্থিত জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির (জলা আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা) কার্যালয়ে। সেখানে তিনি সাক্ষাত করেন জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ শ্রীমতী মৈত্রী ভট্টাচার্যের সাথে। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার মৈত্রী ভট্টাচার্য ভুক্তভোগী ডা. মো. মাহবুব উল আলম কথা মনযোগ দিয়ে শুনে এ বিষয়ে তাঁকে নিয়মানুযায়ী আবেদন করতে বলেন। ডা. মো. মাহবুব উল আলম লিগ্যাল এইডের নির্ধারিত ফরমে জেলা আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সভাপতি, কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ খোন্দকার হাসান মোঃ ফিরোজের বরাবরে গত ৩০ সেপ্টেম্বর আবেদন করেন। একইদিন তাঁর আবেদনটি ৪২৬০ নম্বরে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে নিবন্ধিত হয়। সে অনুযায়ী জেলা আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার উদ্যোগে বিরোধ মিমাংসা সভায় জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে গত অক্টোবর মাসের ১০ তারিখ উপস্থিত হওয়ার জন্য বাদী মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহবুব উল আলম ও বিবাদী আহমদ উল্লাহ কে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার শ্রীমতী মৈত্রী ভট্টাচার্য মিমাংসা সভার নোটিশ প্রদান করেন। যার বিরোধ মিমাংসা এডিআর নম্বর ৩৮৪/২০১৯। নোটিশ পেয়ে উভয় পক্ষ জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে নির্ধারিত মিমাংসা সভায় এসে উভয় পক্ষ নিজ নিজ বক্তব্য জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ শ্রীমতী মৈত্রী ভট্টাচার্যের কাছে তুলে ধরেন। বক্তব্যে উভয় পক্ষ ‘কেউ কারে নাহি ছাড়ে, সমানে সমান’। দু’পক্ষই নিজ নিজ অবস্থানে অনড়। ছাড় দিতে রাজি নয়, কেউ কাকে। এ অবস্থা দেখে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও মিমাংসা সভার সভাপতি শ্রীমতী মৈত্রী ভট্টাচার্য সময় দিয়ে বুঝাতে বুঝাতে একটা পর্যায় নিয়ে আসেন উভয়কে। এরই মধ্যে মিমাংসা সভার আরো ক’টি তারিখ পড়ে। শেষ পর্যন্ত গত ২৪ নভেম্বর রোববার কিছু কিছু ছাড় দিতে রাজি করানো হয় দু’জনকে। এতে বিবাদী আহমদ উল্লাহ বাদীকে ৮ লক্ষ টাকা ফেরত দিতে সম্মতি প্রদান করেন। একইসাথে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মো. মাহবুব উল আলম তাঁর কিছু জমিও ছোটভাই আহমদ উল্লাহ’র দখলে থাকার অভিযোগ করেছিলেন। বড় ভাই ডা. মো. মাহবুব উল আলমের সে জমিও বিবাদী আহমদ উল্লাহ ছেড়ে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। বাদী ডা. মো. মাহবুব উল আলমও পাওনা টাকা কিছু ছাড় দিয়ে ৮ লক্ষ টাকা ও বেদখলে থাকা জমি বিবাদী আহমদ উল্লাহ থেকে নিতে রাজী হয়ে যায়। উভয় পক্ষের সম্মতিতে শেষ পর্যন্ত বছরের পর বছর ঝুলে থাকা বিরোধ কোন মামলা-মোকদ্দমা, উকিল-মুন্সী, টাকা-পয়সা ইত্যাদি ছাড়াই নিষ্পত্তি হয়ে যায়।
এভাবেই একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর সেনানী ডা. মাহবুব উল আলম তাঁদের জীবনবাজি রেখে করা স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের লিগ্যাল এইডের এডিআর প্রক্রিয়া অর্থাৎ রিরোধ নিস্পত্তি বিধির মাধ্যমে দীর্ঘ কোন প্রক্রিয়া ছাড়াই তাঁর পাওনা টাকা ফেরতের নিশ্চয়তা পেলেন।
জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ শ্রীমতী মৈত্রী ভট্টাচার্য সিবিএন-কে জানান, এভাবে মামলা দায়ের নাকরে লিগ্যাল এইডের এডিআর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চলতি বছরের বিগত ১০ মাসে মোট ৩৮১টি রিরোধ সন্তোষজনকভাবে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। যা সরকারের এডিআর প্রক্রিয়ার বিরাট একটা সাফল্য। এডিআর প্রক্রিয়ার কারণে মামলা নাকরে বিরোধীয় বিষয় সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে মিমাংসার সুযোগ পাওয়ায় মানুষ আইনের বিভিন্ন লম্বা প্রক্রিয়া হতে একদিকে রেহায় পাচ্ছে, অন্যদিকে, বিরোধীয় বিষয় আদালত পর্যন্ত না যাওয়ার কারণে আদালতে মামলার জট কিছুটা হলেও কমছে। যা লিগ্যাল এইডের এডিআর প্রক্রিয়ার প্রত্যক্ষ সুফল বলে উল্লেখ করেন জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ শ্রীমতী মৈত্রী ভট্টাচার্য।