কুতুবদিয়া প্রতিনিধি:

দেশের প্রচলিত আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দিনে দুপুরে ঘর-বাড়িসহ বসতভিটে দখলে নিয়েছে দখলবাজরা। এ সময় দুর্বৃত্তদের হামলায় এক জেএসসি পরীক্ষার্থীসহ দু‘জন আহত হয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগীতায় আহতদের উদ্ধার করে কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

গত ১১ নভেম্বর মধ্যযুগীয় কায়দায় দখলবাজির এ ঘটনাটি ঘঠেছে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার দক্ষিণ ধূরুং ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে। এসময় ভুক্তভোগী পরিবারের আহাজারীতে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। ইতোমধ্যে এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

এর প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে অবশেষে গত ১৯ নভেম্বর কুতুবদিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা (সি.আর-৩৪৯/২০১৯ইং) দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী অসহায় নাছির উদ্দিন। আদালত ওই দিনই থানাকে মামলাটির প্রাথমিক তথ্য বিবরনী প্রেরণের নির্দেশনা দেন।

জানা গেছে, ধূরুংবাজারে একটি ছোটখাটো ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকান চালায় দক্ষিণ ধূরুং ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের মৃত সাইফুর রহমানের ছেলে নাছির উদ্দিন (৪৫)। ২ ছেলে, ২ মেয়েসহ ৬ সদস্যের সংসার তার। ওই দোকান থেকেই ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা ও সংসারের যাবতীয় খরচের যোগান দিচ্ছিলেন তিনি। দিনে দিনে ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে ওঠায় থাকার ঘরটি বড় করাও একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়ে তার।

তখনই (২০১২ সালে) নিজের দখলে থাকা ৯ শতক ভিটেজমি বিক্রির প্রস্তাব দেয় তারই আপন বড়ভাই জামাল উদ্দিন। ভাইয়ের প্রস্তাবে এবং নিজের প্রয়োজনে তৎসময়ে ৯ শতক ভিটেজমি ৪৫ হাজার টাকায় কিনতে রাজি হয় নাছির। কথামতো ২০১২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ১৩ ফর্দের বায়নানামা সম্পাদন করে সরল বিশ্বাসে নগদ ৩০ হাজার টাকা স্থানীয় স্বাক্ষীদের সামনে বড়ভাই জামালকে বুঝিয়ে দেন। কথা হয় জমি রেজিষ্ট্রির সময় বাকী ১৫ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেয়ার। এরপর যথারীতি ছোটভাইকে জমির দখল বুঝিয়ে দেন জামাল। ওই জমিতে টিনের বেড়া ও খড়ের ছাউনি দিয়ে দোচালা একটি ঘর তুলে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখেই দিন কাটাচ্ছিলেন নাছির।

কিন্তু সরলমনা নাছিরের কপালে সে সুখ আর সয়নি। তার বসতভিটের ওই জমিটুকু গত ২৫ অক্টোবর গোপনে একই এলাকার রশিদ আহমদের ছেলে সাইফুল ইসলাম প্রকাশ গুন্নু মাঝি নামে এক নব্যধনীকে আবারও চড়াদামে বিক্রি করে দিয়েছেন জামাল উদ্দিন। এরপর সাইফুল জামাল দু‘জন মিলে ওই জমি থেকে নাছিরকে উচ্ছেদের জন্য উঠে পড়ে লাগে। বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি ধমকি দিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে তাকে। উপায়ান্তর না দেখে স্থানীয় গণ্যমান্যদের সরনাপন্ন হয় নাছির। এতে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে তারা।

এক সময়ে দস্যুতার দায়ে কয়েক দফা জেলখাটা ফিশিং ট্রলারের মাঝি সাইফুল ইসলাম প্রকাশ গুন্নুর এলাকায় এখন দোর্দন্ড প্রতাপ। অদৃশ্য আয়ে প্রচুর টাকা ও ক্ষমতার মালিক সে। টাকার জোরে থানা পুলিশ সবই এখন তার পকেটে।। তাই গত ১১ নভেম্বর সকাল ৮টার দিকে ২ভাই এহছান ও এরফান এবং আরো ৩৫/৪০ জনকে সাথে নিয়ে প্রকাশ্য হামলা চালিয়ে নাছিরের মূল্যবান জিনিসপত্রসহ বসতঘর ভেঙ্গে নিয়ে যায়। এতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করায় দুর্র্বৃত্তরা নাছিরের স্ত্রী ফাতেমা বেগম এবং জেএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে জান্নাতুন নাইম রুবিকে বেধড়ক পিঠিয়ে আহত করেছে বলে মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় মৌলভী নুরুল আমিন বলেন, ৯ শতক জমির মূল্য ৪৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে বিগত ২০১২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ধূরুং বাজারে বায়নানামার মাধ্যমে নগদ ৩০ হাজার টাকা আমাদের উপস্থিতিতে জামাল উদ্দিনের হাতে তুলে দেয় নাছির। নাছিরের সাথে প্রতারণা করে জামাল পুনরায় ওই জমি বিক্রি করে যে সংঘাতের জন্ম দিয়েছে তা কারোই কাম্য নয়।