ফেসবুক কর্ণার:
হিজড়া আদরীকে চেনেনা খুব কম লোক আছে কক্সবাজার শহরে। শহরের দক্ষিণ কলাতলী তার পৈতৃক নিবাস। কলাতলীর মৃত আব্দুল জলিলের সন্তান সে। নিজের এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়ে বর্তমানে পেশকার পাড়ায় বাস করে আদরী। আরো দুয়েকজন হিজড়া সাথী নিয়ে পাড়া মহল্লায়, গ্রামগঞ্জ, হাটবাজার ও অন্যান্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভিক্ষাবৃত্তির নামে জোর জবরদস্তি কিংবা চাঁদাবাজি করে জীবন নির্বাহ করে।

আদরী তার এই হিজড়া জীবন এবং অসামাজিক পেশা নিয়ে সীমাহীন বিরক্ত অসন্তুষ্ট ও বিমর্ষ। সে চায় না এই অভিশপ্ত পেশা নিয়ে জীবন ধারণ করতে। সে চায় উঠে দাঁড়াতে, মানুষের মত মানুষ হয়ে বেঁচে থাকতে। কিন্তু সমাজ তাকে বার বার লাত্থি দিয়ে নর্দমায় ফেলে দেয়। তাই সে নর্দমার কীটের মত কোন না কোন ভাবে বেঁচে বর্তে আছে।

আদরীর বয়স বর্তমানে ৪৯ বছর। ছোটকালে প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করে উচ্চ বিদ্যালয়ে কিছু পড়া লিখা করেছিল সে। কিন্তু সমাজের ভ্রুকুটির কারনে লেখাপড়ায় এগুতে পারেনি।

হিজড়াদের ব্যাপারে বর্তমান হাসিনা সরকারের উদার দৃষ্টিভঙ্গিতে আশান্বিত হয়ে কিছুদিন আগে আদরী তার পৈতৃক ভিটায় একটি ঘর উঠানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু তার চাচাতো ভাইয়েরা এসে তাকে মারধর করে ঘরটি ভেঙ্গে দেয়। এব্যাপারে অনেক শালিসির চেষ্টা করেও কোন ফল পায়নি। উপরন্তু মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়ে।

আদরীর আসল নাম আনোয়ার করিম। হিজড়া বলে তার ডাকনাম আদরী। তবে পুরুষ বেশে ছবি সম্বলিত জাতীয় পরিচয় পত্রে তার নাম রয়েছে আনোয়ার করিম, পিতা মৃত আব্দুল জলিল, মাতা আছিমা খাতুন, গ্রাম দক্ষিণ কলাতলী, কক্সবাজার।

আদরীরা চার ভাইবোন। আদরী ছাড়া বাকী তিনজনই মেয়ে। হিজড়া হলেও নিজেকে সে ‘পুরুষ হিজড়া’ বলে দাবী করে। অন্য তিনজন হচ্ছে তার বোন। হিজড়া হওয়ার কারেন আদরী সমাজচ্যুত। তাই চাচাতো ভাইয়েরা তার পৈতৃক জমিজমা ভিটেমাটি সব দখল করে নিয়েছে। সে এখন অন্য এলাকায় অন্যের বাড়িতে ভাড়া ঘরে থাকে।

বর্তমান সরকার হিজড়াদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছেন। সে অনুযায়ী এখন দেশে তিন ধরণের নাগরিক রয়েছে— (১) পুরুষ, (২) নারী ও (৩) বৃহন্নলা (হিজড়া)। এই হিজড়াদের সার্বিক কল্যাণ ও অধিকার রক্ষার জন্য সমাজ সেবা অধিদপ্তরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অথচ সমাজসেবা কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে এখনো কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহন করেনি।

এব্যাপারে কক্সবাজার জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের দায়িত্বরত উপ পরিচালক হাসান মাসুদের সাথে আলাপ করলে তিনি জানান— হিজড়াদের জীবনমান উন্নয়নে সমাজসেবা ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহন করেছে। সেলাই বুটিকপ্রিন্ট কম্পিউটার ট্রেনিং সহ হিজড়াদের আর্থিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
হিজড়াদের পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকার সম্পর্কে হাসান মাসুদ বলেন— এব্যাপারে এখনো তিনি তেমন কোন সরকারি নির্দেশনা পাননি। সরকার চেষ্টা করছেন শরিয়া আইন ও রাষ্ট্রীয় বিধির সমন্বয়ে স্থায়ীভাবে হিজড়াদের অধিকার বাস্তবায়ন করতে। অবশ্য বিষয়টি একান্তই আইনগত।

হিজড়াদের পরিবেশ পরিস্থিতি ও অধিকার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কিছুদিন আগে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে একটি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। কক্সবাজার থিয়েটার আয়োজিত নাট্যোৎসবে রাজধানীর মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় প্রযোজিত নাটকটির নাম ছিল “শিখণ্ডী কথা”। নাটকের সংলাপ কাহিনী ও অভিনয় দর্শক মহলে অত্যন্ত আলোড়ন সৃষ্টি করে। কিন্তু এতটুকুই। কক্সবাজারের হিজড়া সম্প্রদায় আগে যেমন ছিল তেমনই আছে। তাদের কোন পরিবর্তন হয়নি কিংবা তাদের খোঁজ খবরও কেউ নেয়নি।

এব্যাপারে কক্সবাজার থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট তাপস রক্ষিতের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে খুবই আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং হিজড়া আদরীর জন্য প্রয়োজনে আইনগত সহযোগিতা দেবেন বলেও প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।

কথা প্রসংগে হিজড়া আদরী হিজড়া শিশুদের জন্য কক্সবাজারে একটি পৃথক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী জানান এবং লেখাপড়া শেষে সঠিক কর্মসংস্থানেরও দাবী জানান। তাছাড়া হিজড়াদের যেহেতু উত্তরাধিকার সৃষ্টি হয় না সেহেতু বয়স্ক হিজড়াদের জন্য আলাদা আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণেরও দাবী জানান আদরী। তিনি হিজড়াদের জন্য চিকিৎসা, শিক্ষা, পৈতৃক ও মাতৃক সম্পত্তির অধিকার সহ সকল নাগরিক অধিকার প্রদান করে হিজড়া সমাজের শৃঙ্খলা বিধানের দাবী জানান।

প্রবীণ সাংবাদিক নজরুল ইসলাম বকশীর টাইমলাইন থেকে।