শাহী কামরান:
সরকার আমাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কের জন্য বানিয়েছে বলে দাবী বিট কর্মকর্তা মাজহারুলের। অভিযোগের ভিত্তিতে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক পরিদর্শনে গেলে বিট কর্মকর্তা মাজহারুল সাংবাদিকদের এই কথা বলেন। বিগত ১৭ বছর ধরে তিনি একই পদবীতে একই স্থানে বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কে কর্মরত আছেন। কীভাবে একই স্থানে কোন রকম বদলী ছাড়া এতদিন বহাল থাকেন তা নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। তিনি কেনো বদলি হননি প্রশ্ন ছুড়লে তিনি অহংকারের সাথে এমন উত্তর দিয়েছেন। তার দাবী সরকার তাকে এই সাফারী পার্কের জন্য তৈরী করেছেন।
ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার ডুলাজাহারা স্থানে অবস্থিত। কক্সবাজার জেলায় আগত দর্শকরা একবারের জন্য হলেও উক্ত পার্কে বেড়াতে আসেন।তাছাড়া স্থানীয়রা বিনোদনের জন্য অন্যতম স্থান হিসেবে প্রথমে এই সাফারী পার্ক বেছে নেন।মনোরম পরিবেশ ও পশু প্রাণীতে ভরা এই পার্ক নজর কাড়ে অনেকের।প্রতি বছর লাখ লাখ পযর্টকে মুখরিত থাকে এই পযর্টন স্থানটি। অথচ দেখতে ঝরাজীর্ণ অবস্থায় অভিভাবকহীন সাফারী পার্ক।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, আগের মত নেই কোন উপচে পড়া পর্যটক। সামনের শীতের মৌসুম নিয়েও তাদের নেই কোন মাথাব্যথা। হরিনের সংখ্যা দিন দিন কমে আসতেছে। সিংহ দুইটা দেখতে যেন অনেক দিনের উপোস। এছাড়া অফিস চলাকালীন বন্য প্রাণী মিউজিয়াম, প্রকৃতি বীক্ষন কেন্দ্র, তথ্য ও শিক্ষা কেন্দ্র তালাবদ্ধ ছিল। এই তিনটি অফিসের বেহাল অবস্থা নেই কোন সংরক্ষন। সাফারী পার্কের আভ্যন্তর সড়ক জুড়ে খানাখন্দ ভাঙ্গা রাস্তার কোন সংস্কার হয়নি প্রায় ১০ বছর। চলাচলের দুটি বাসের অবস্থাও নাজুক।
জনমনে প্রশ্ন রয়ে যায়, গত ৫ বছরেও কি কোন বাজেট আসেনি এই সাফারী পার্কে? বাজেট দিলেও এই টাকা কোথায় গেল?
সাফারী পার্কে কর্তব্যরত আছেন একজন অফিসার্স ইনচার্জ আব্দুল মালেক, যিনি সদ্য যোগদান করেছেন।
তারপরে রয়েছেন মাজহারুল ইসলাম যিনি প্রথম এই সাফারী পার্কে যোগদান করেন। সেই থেকে ১৭ বছর তার চাকরী জীবন কেটেছে সাফারী পার্কে বিট কর্মকর্তা হিসেবে।
স্থানীয়দের দাবী, দীর্ঘদিন এক যায়গায় কাজ করায় মাজহারুলের একঘেয়েমি চলে এসেছে। মাজহারুল পুরাতন কর্মকর্তা হওয়ায় একটি সিন্ডিকেট তৈরী হয়েছে। উক্ত সিন্ডিকেটের ইশারায় সাফারী পার্কে রাজত্ব কায়েম করে বেড়াচ্ছেন।অনিয়ম দুর্ণীতি করে চলছেন অহর্নিশ। নিজ এলাকায় একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ডেইরী ফার্মসহ আরো অনেক কিছু করেছেন। মাদার ট্রী বিক্ররি অভিযোগও আছে। সব থেকে বড় অভিযোগ টেন্ডার বাণিজ্য বলে স্থানীয়দের দাবী। তাছাড়া পাগলিরবিল নামক স্থান হতে প্রতিদিন তোলা হয় ড্রেজার দিয়ে অবৈধ বালি। সেই টাকা যায় মাজহারুলের পকেটে।পাগলিরবিল নামক স্থানে সাফারী পার্কের সীমানায় ড্রেজার মেশিনসহ বালি উত্তোলেন চিত্র চোখে পড়ার মত। তাছাড়া গেইট ইজারা,খাদ্য ইজারা সহ সব কিছু তার নিয়ন্ত্রনে রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতি বছর বদলী ঠেকানোর জন্য লাখ লাখ টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নামেন তাই কোন ধরনের বদলী সম্ভব হয়নি বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
বেশ কয়েক বছর ধরে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় অনিয়মের অভিযোগের প্রমানসহ খবর ছাপানো হয়েছিল। কিন্তু এতে মাজহারুলের বদলী তো দূরে অনিয়মের বিরুদ্ধেও কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
সদ্য যোগদান করা রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল মালেক জানান, আমি এখনো নতুন যোগদান করেছি। সার্বিক পরিস্থিতি এখনো বুঝে উঠতে পারিনি। তিনি ৩৭ বছর চাকরী জীবনে ১৫টির অধিক জেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন।
যখন প্রশ্ন করা হয়েছে, একজন বিট কর্মকর্তা ১৭ বছর ধরে এক যায়গায় কীভাবে সরকারী চাকরী করে? তখন তিনি, হেসে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এবং বলেন বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বন্য প্রাণী সংরক্ষন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিষয়।