আবদুল নবী:
কক্সবাজার সিটি কলেজ, কক্সবাজার:
স্বার্থ ছাড়া আমরা কিছুই বুঝি না আজকাল। বুঝতেও চাই না। যাদের অস্তিত্ব ছাড়া আমাদের অস্তিত্ব চিন্তা করা যায় না এবং মৃত্যু অনিবার্য আমরা তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়ায়। প্রতিনিয়ত আমরা খাদ্য, বাসস্থানের আসবাবপত্র, বিভিন্ন ঔষধের উপকরণ, অক্সিজেন, ফল, ফুল ইত্যাদি ভোগ করি। অথচ এই জিনিসগুলো আমাদের জীবনকে রক্ষা করার জন্য বৃক্ষ নিজে সমস্ত কিছু উজাড় করে দিছে। সে আমাদের ছায়া দেয়, খাবার দেয়, অক্সিজেন দেয়। এসব কিছুর পরেও কথা হচ্ছে আমরা #বৃক্ষকে কি দিই?

পরিবেশ থেকে আমরা জীবনের সিকিউরিটি প্লাগ অক্সিজেন গ্রহণ করি আর কার্বন ডাই অক্সাইড নামক বিষাক্ত গ্যাস ত্যাগ করি। আর এই নিঃসৃত বিষাক্ত গ্যাস যদি বৃক্ষ শোষে না নিত তাহলে পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যেত। পৃথিবীর সকল প্রাণির নিঃসৃত কার্বন ডাই অক্সাইড বৃক্ষ গ্রহণ করে পরিবেশকে ঠান্ডা রাখে। আমাদের বসবাসের উপযোগী করে রাখে পরিবেশকে। আমাদের জীবন রক্ষার জন্য আমাদেরকে খাদ্য দেয়। থাকবার জন্য বাসস্থান তৈরীর উপাদান দেয়। নিজের সব কিছু আমাদের জন্য বিলিয়ে দেয়। কিন্তু আমরা আমাদের ক্ষুদ্র স্বার্থের বিচারে নির্বিচারে প্রকৃতির প্রাণ এবং আমাদের জীবন রক্ষার প্রধান সহযোগীদের ধ্বংস করে ফেলতেছি। নগরায়নের উদ্দেশ্যে বন উজাড় করে সেখানে দালান করা হচ্ছে, বড় বড় শপিংমল করা হচ্ছে, শিল্পকারখানা, স্টেডিয়াম করা হচ্ছে। ফলে আজ পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। অসাধু গাছ ব্যবসায়ীরা বনের গাছ কেটে বিক্রি করে স্বার্থ হাসিল করতেছে অর্থের আর ধ্বংস করতেছে নিজের জীবনের নিরাপত্তা প্রহরীদের। যেমনঃ বর্তমানে সুন্দরবনের অবস্থার কথা বলতে গেলে খুবই কষ্ট লাগে। “বিশ্ব ঐতিহ্য” এর মধ্যে এই সুন্দরবনও ছিল একটি। কারণ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বৃক্ষরাজির সমাহার, পশু-পাখি সহ সকল ধরনের প্রাণীর অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখার জন্য। কিন্তু বর্তমানে শিল্পায়নের করাল ঘ্রাণে ধ্বংস হয়ে গেল সুন্দরবন। গাছ ব্যবসায়ীরা বনের গাছ কেটে বনকে ধ্বংস করেছে। পশুপাখি শিকারিরা পশু শিকার করতে করতে পরিবেশের ভারসাম্য ধ্বংস করেছে।

কোন একসময় একটি প্রবাদ বাক্য পড়েছিলাম, “একেকটা গাছ অক্সিজেনের একেকটা ফ্যাক্টরি”। এটাকে যদি বিশ্লেষণ করি তাহলে একটা জিনিস বুঝা যায়। আর সেটা হলো, ” অক্সিজেন উৎপাদন হওয়ার একমাত্র উৎস হচ্ছে বৃক্ষ”। যদি এই বৃক্ষ অরণ্য অক্সিজেন নামক উপাদান উৎপাদন না করতো তাহলে তো আমাদের অস্তিত্ব বজায় থাকতো না। জীবন রক্ষার্থে আমরা বৃক্ষ ছাড়া অচল। গরমে বৃক্ষের ছায়া নিয়ে স্বস্তি পায়, বৃক্ষের দেওয়া খাদ্য খেয়ে জীবন বাঁচায়, ডালপালা দিয়ে ঘরবাড়ি করি। আর আমরা তার প্রতিদান হিসেবে বৃক্ষকে ধ্বংস করতেছি।

একটি দেশের পরিবেশ রক্ষার জন্য দেশের মোট আয়তনের ২৫% বন প্রয়োজন। অথচ বর্তমানে সেই পরিমাণ বনের চিহ্ন নাই। বিগত কয়েক বছর আগে যেখানে ১৮% বন ছিল সেখানে আজ ১২% কিংবা ১৩% বন আছে। পাহাড় কেটে ফেলা হচ্ছে, বন উজাড় করা হচ্ছে। নদী ভরাট করা হচ্ছে। অর্থাৎ পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। বর্তমানের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো “আমাজান বন” যেটাকে পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয়। অথচ সেই আমাজান বন দাবানলের আগুনে জ্বলেপুড়ে শেষ। এটাকে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা অসম্ভব বলে ধারণা করেছেন বিজ্ঞানীরা(বিবিসি নিউজ)। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এটার জন্য কে বা কারা দায়ী? অবশ্যই আমরা। কারণ, এটা আপনাআপনি ধ্বংস হয়নি। মনুষ্য সৃষ্ট কারণে এটা ধ্বংস হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের মধ্যে যে কটি দেশ হুমকির মুখে তাদের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার উর্ধ্বে। তাই আমাদের উচিত প্রথমে আমাদের মা ও মাটিকে রক্ষা করা। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, “পৃথিবীর জলবায়ুর ভারসাম্য অর্জনের জন্য ৩শত কোটি গাছ লাগাতে হবে”। এটার অর্থ এই নয় যে সবকিছু সরকার করবে। একজন নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে গেলে কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়। আর দেশকে রক্ষা করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। আমাদের দেশকে হুমকির মুখ থেকে উদ্ধার করা মানে বিশ্বের জলবায়ুর ভারসাম্য অর্জনে ভুমিকা পালন করা। তাই সবার উচিত বন উজাড় না করে, নির্বিচারে বৃক্ষ না কেটে পরিবেশকে বাঁচাতে হবে। দেশকে রক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে গাছ কাটতে হলে একটা গাছের জন্য ৪ টি গাছ রোপণ করতে হবে।

এবার চলোন আমার লেখা কবিতার ছন্দে বলিঃ-

অরণ্য গঠন
-আবদুল নবী
ওহে মনুষ্য জাত দেখ একটু চাহিয়া,
অর্থ স্বার্থে জীবন বৃক্ষ কাটিয়া
অরণ্য উজাড় করে ধ্বংস লীলায় নেচে
তুমি কি পেয়েছ কী ক্ষতি ছাড়া আর,
কেটেছ তবে লাগাও বৃক্ষ গড় অরণ্য
একটির পরিবর্তে ৪ গাছে কর বৃক্ষ সমাহার।
জেগে উঠে দেখ তুমি ভেবে
অক্সিজেন ছাড়া থাকবে কি ভালো,
বৃক্ষ হাতে যাও এবার লাগিয়ে কর বন
অরণ্য গড়তে দায়িত্ব পালনে সবাই চলো।
ঘুম ভেঙ্গে উঠে চলো সবাই,
মা মাটি মাতৃভূমিকে বাঁচায়।

(সংক্ষেপিত)