মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
২০১৮ সালে বিভিন্ন কারণে কক্সবাজার জেলা পুলিশের ভাবমূর্তি যখন প্রায় শূণ্যের কোঠায় নেমে এসেছিলো, সে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার একজন সেনাপতিকে কক্সবাজার জেলার দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি কক্সবাজার যোগদান করেছিলেন। তাঁর যোগদানের পর অনেকে মনে করেছিলেন, তাঁকেও বশে আনা যাবে। কারণ রসুনের কোয়া সবটার একই স্বাদ, একই উপাদানে ভর্তি, কোন ভিন্নতা থাকেনা। অনুরূপভাবে অফিসের এক কর্তা গেলে, একই চেয়ারে আর এক কর্তা আসলে তিনিও একই কাজে স্বাভাবিকভাবে জড়িয়ে পড়েন। প্রবাদ বাক্য হলো, ‘যায় দিন ভালো, আসবে দিন আরো খারাপ।’ কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও হয়। যে ব্যতিক্রম গত এক বছরে কক্সবাজার জেলা পুলিশের ক্ষেত্রে ঘটেছে। এক দুঃসাহসিক অভিযাত্রার কর্ণধার করে কক্সবাজারে তিনি যখন আসলেন, তখন পথটা ছিলো খুবই অন্ধকারাচ্ছন্ন। দুর্গম পথে সামনে এগিয়ে যাওয়াটা ছিল খুবই কঠিন। কিন্তু এ কঠিন কাজটি তাঁকে ঝুঁকি নিয়ে করতেই হবে। কারণ একাজ যিনি করতে পারবেন বলে নীতিনির্ধারকদের আস্থা ও বিশ্বাস তাঁর উপর আছে বলেই তাকেই দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে। শুরুতেই এসে তিনি তাঁর সহকর্মী ও প্রশাসনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে তাঁর কঠিন দায়িত্বের বার্তা দিয়ে দিলেন। শুরু করলেন একের পর এক দুঃসাহসি অভিযান। ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর মহেশখালী এলাকার ভয়ংকর ৪৩ জন সশস্ত্র জলদস্যুকে মহেশখালী হাইস্কুল মাঠে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেছিলেন। র‍্যাব প্রধান বেনজির আহমেদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে সেই সফল আত্মসমর্পণ হয়েছিলো। যে ৪৩ জন পেশাদার জলদস্যু এখন স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে এসেছে।
ইয়াবা সহ সবধরনের মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সর্বত্র তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। পালাতে থাকে ইয়াবার গডফাদার, খুচরা বিক্রেতা, ইয়াবা সেবীরা। চরম আতংকিত হয়ে গাঢাকা দেয় ইয়াবার পৃষ্ঠপোষকতাকারীরা। ইয়াবাকারবারীরা নিজেরা নিজে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে এবং ভাগবাটোয়ারা নিয়ে কথিত বন্ধুক যুদ্ধে নিহত হতে থাকে প্রতিদিন। আইনী পদক্ষেপের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতাও গড়ে তোলা হয় সর্বত্র। টিকতে না পেরে শেষ পর্যন্ত অনেক ইয়াবাকারবারী সরকারের কাছে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেয়। সে ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ হাইস্কুল মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী (বিপিএম-বার) সহ অনেকের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ১০২ জন আত্মস্বীকৃত ইয়াবাকারবারী আত্মসমর্পণ করে। যা ছিলো এ দেশের মাদককারবারী আত্মসমর্পণের প্রথম রেকর্ড। আভ্যন্তরীন সংঘর্ষে নিহত হয় মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আনার প্রথম জনক ও মিয়ানমারের ২৩ টি ইয়াবা কারখানার ডিলার বলে খ্যাত সাইফুল করিম। এভাবে গত এক বছরে নিহত হয় প্রায় একশ’ চিহ্নিত ইয়াবাকারবারি ও জগন্য অপরাধী। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির আলোকে এ সাড়াশি অভিযান এখনো চলমান রয়েছে। গত একবছরে স্থানীয়ভাবে ইয়াবা সহ মাদক ব্যবসা অধিকাংশ ক্ষেত্রে দমন করা সম্ভব হয়েছে।
পুলিশ বিভাগে নিয়োগ মানে বস্তা ভরে ভরে অনৈতিক লেনদেন করা। গত ২ জুলাই কক্সবাজার জেলা পুলিশের ব্যবস্থাপনায় ৩৮৬ জন টিআরসি (ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল) নিয়োগ দেয়া হয়েছে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে। এ নিয়োগে দারুণ প্রশংসিত হয়েছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। কক্সবাজার জেলার উপজেলা পরিষদের নির্বাচন সমুহ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করে জেলা পুলিশের ভাবমূর্তির ব্যারোমিটারের পারদকে উপরে উঠিয়েছেন। এভাবে একের পর এক সফলতা আর রাষ্ট্রের দেয়া এজেন্দা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন যিনি-তিনি হলেন কক্সবাজারের স্বনামধন্য, নির্লোভ নিরহংকার পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম।
জাতীয় পুলিশ সপ্তাহে এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন সহ জেলা পুলিশের ৫ জন কর্মকর্তা পেয়েছেন পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার বিপিএম (বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল) এবং পিপিএম (প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল)। এদের মধ্যে পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন পেয়েছেন বিপিএম (সাহসিকতা), টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ পেয়েছেন বিপিএম-(সাহসিকতা), কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার পেয়েছেন পিপিএম (সাহসিকতা), টেকনাফ থানার এসআই মোঃ শরিফুল ইসলাম পেয়েছেন পিপিএম (সাহসিকতা) এবং একই থানার এসআই রাসেল আহমদ পেয়েছেন বিপিএম (সাহসিকতা)। জাতীয় পর্যায়ের এ পাঁচটি পদকই অন্যান্যদের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারা দেশে সর্বোচ্চ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক উদ্ধারে পৃথক ২ টি আইজিপি পদক পেয়েছেন জাতীয় পুলিশ সপ্তাহে। এ দুটো জাতীয় পদকও আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী (বিপিএম বার) এর কাছ থেকে গ্রহন করেছেন এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম।
গত একবছরে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ টি জেলার মধ্যে সার্বিক সাফল্য বিবেচনায় ৫ বার চট্টগ্রাম রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ জেলা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশ। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক (বিপিএম-বার, পিপিএম) এর কাছ থেকে এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম নিয়েছেন শ্রেষ্ঠ জেলার পদক, সম্মাননা ও সনদ। থাইল্যান্ড, জাপান ও ফিলিপাইন থেকে এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম নিয়েছেন আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ। রোহিঙ্গা শরনার্থী ব্যবস্থাপনা ছিলো কক্সবাজার জেলা পুলিশের জন্য একটা বড় কঠিন কাজ। এ চ্যালেঞ্জ সফলভাবে ব্যবস্থাপনায় সক্ষম হয়েছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। তবে রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের সাথে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কিছু সংখ্যক অসাধু লোকজন সম্পৃক্ত থাকায় অপরাধ দমনে বেগ পেতে হচ্ছে এখনো। গুজব প্রতিরোধ ও ডেঙ্গু রোগের বিস্তার রোধে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশ। জেলায় গুজবকে শূণ্যের কোঠায় নিয়ে এসেছেন স্বল্প সময়ে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশকে অবকাঠামো, যানবাহন, জনবল ও টেকনোলজিতে সমৃদ্ধ করতে গত এক বছর হার নামানা আত্মপ্রত্যয়ী এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম করেছেন অনেক কর্মযজ্ঞ। আইওএম-এর সহযোগিতায় ১০ টি ডাবল কেবিন আধুনিক পিকাপ, ৩২ টি মটর সাইকেল, রোহিঙ্গা শরনার্থী অধ্যূষিত এলাকায় ৫ টি নতুন পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করেছেন প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়ে। ইউএনডিপি’র সহযোগিতায় আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা সম্বলিত ১১ টি চেকপোস্ট স্থাপন, উখিয়া ও সদর উপজেলায় নারী সহায়তা কেন্দ্র নির্মান, পুলিশ লাইনে আধুনিক ডাইনিং রুম স্থাপন করা হয়েছে। ১৫০ জন মহিলা পুলিশের জন্য মেট্রেস সামগ্রী প্রদান ও পুলিশ লাইনে ড্রীল শেড নান্দনিক ডিজাইনে সংস্কার করা হয়েছে। এসপি কার্যালয় ও কনফারেন্স রুম, ও এসপি’র ভবন সংস্কার, পুরাতন পুলিশ লাইনে ক্যান্টিন ও সেলুন নির্মাণ, জেলার সকল পুলিশ সদস্যকে ডেঙ্গু ও মশা প্রতিরোধকারী ইপিল্যান্ড বিতরণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে অবকাঠামো ব্যাতীত কক্সবাজার জেলা পুলিশে ১৫ কোটি টাকার কাজ সম্পাদন করা হয়েছে। যা আগের বছরের তুলনায় অনেক গুন বেশি। কক্সবাজার জেলা পুলিশ সদস্যদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে পুরাতন পুলিশ লাইনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত যাতে থাকতে পারে, সেজন্য আবাসন প্রকল্পের প্রস্তাব, হিমছড়ি, ইনানী, সেন্টমার্টিন, হারবাং ও কালামারছড়া পুলিশ ক্যাম্পকে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কেন্দ্র রূপান্তরের জন্য জেলা পুলিশের প্রেরিত প্রস্তাব এখন চুড়ান্ত অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে। নতুন পুলিশ লাইনে মহিলাদের জন্য বহুমুখী সুবিধা সম্বলিত ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হবে। যেখানে পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি সাধারণ কর্মজীবী নারীরাও অবাধে এ সেন্টার থেকে সেবা নিতে পারবেন। কক্সবাজার জেলার সকল থানা, ফাঁড়ি ও তদন্তকেন্দ্র সমুহ আধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে এবং জেলা শহরে বসানো সিসিটিভি ক্যামেরা আধুনিকায়ন ও পরিধি আরো বাড়ানো হবে। এ বছরেই উদ্বোধন করা হয়েছে চকরিয়া মডেল থানা ভবন ও উখিয়া সার্কেলের এডিশনাল এসপি’র কার্যালয়। জেলা পুলিশের মাসিক কল্যান সভায় আগে শুধু সনদ দেওয়া হতো, এখন সনদের সাথে অর্থ পুরস্কার ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এছাড়া পুরস্কার প্রদানের বিভিন্ন ক্যাটাগরীও বাড়ানো হয়েছে। কল্যান সভায় পুলিশ সদস্যদের আর্থিক সহায়তা প্রদান আগের তুলনায় ১০ গুন বাড়ানো হয়েছে। ডিবি এবং ট্রাফিক পুলিশের যাতায়াতের সুবিধার্থে পুরাতন পুলিশ লাইনে ব্যারাক নির্মাণ করা হবে।
এসব কাজ করতে টিম ওয়ার্কে যাঁরা নিরন্তর সহযোগিতা করে সফলতার ঝুড়িকে আরো সমৃদ্ধ করেছেন-তাঁরা হলেন এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম এর রাইট হ্যান্ড বলে পরিচিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) রেজওয়ান আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) নিহাদ আদনান তাইয়ান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আদিবুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) কাজী মতিউল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক বিভাগ) বাবুল চন্দ্র বণিক,সহকারী পুলিশ সুপার (মহেশখালী সার্কেল) রতন কুমার দাশ গুপ্ত প্রমুখ পুলিশ কর্মকর্তাগণ। অপ্রতিরোধ্য এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম জম্ম গ্রহন করেন বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায়। তাঁরা পরিবারে ৮ ভাই বোন। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে কৃতিত্বের সাথে অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করে ২৪ তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিসিএস (পুলিশ) সার্ভিসে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে বিসিএস (পুলিশ) এর একজন গর্বিত সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
চাকুরি জীবনের শুরুতেই এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম পুলিশ হেডকোয়ার্টারে যোগ দেন। এরপর সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসাবে ডিএমপি’তে, সহকারী পুলিশ সুপার হিসাবে মানিকগঞ্জ সদর সার্কেলে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসাবে মুন্সিগঞ্জ জেলায়, কিশোরগঞ্জ জেলায় ও ঢাকা জেলায় কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ উপ পুলিশ কমিশনার হিসাবে পদোন্নতি পেয়ে ডিএমপি’তে কর্মরত থাকাবস্থায় গত বছর ৭ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের পুলিশ সুপার হিসাবে নিয়োগ পান। ২০১৪ সালে কৃতিত্বের জন্য চৌকষ, মেধাবী ও দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম আইজিপি ব্যাজ অর্জন করেন। বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার প্রখ্যাত আইনজীবী, বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন কাবুল এর কন্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা জেনিফার’কে নিজের জীবনসঙ্গীনি হিসেবে বেচে নেন। এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম কক্সবাজারে কর্মরত থাকাবস্থায় তাঁর শ্বশুর বরিশালের সবার প্রিয় এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন কাবুল গত ১৯ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন। এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম এবং জেনিফার মাসুদ দম্পতি ঈসা ও মুসা নামক ফুটফুটে চোখজুড়ানো দু’জমজ সন্তানের জনক ও জননী।
এদিকে, কক্সবাজারে জেলা পুলিশের গত এক বছরের কার্যক্রম সম্পর্কে মন্তব্য করতে বললে কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক আবদুল খালেক বলেন-একজন সৎ ও যোগ্য কর্মবীর হচ্ছেন এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম। তাঁর সাড়াসি অভিযানে কক্সবাজার মাদক ও ইয়াবা কারবার প্রায় কমে এসেছে। বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি এডভোকেট দীপংকর বড়ুয়া পিন্টু একই বিষয়ে বলেন, গত এক বছরে কক্সবাজারে সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে ইয়াবা নগরী হিসাবে পরিচিত টেকনাফে ইয়াবা বাণিজ্য ও ইয়াবাকারবারীদের অপতৎপরতা প্রায় কমে গেছে। যা বর্তমান এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম এর মিশনের উল্লেখযোগ্য সফলতা। কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক সৈকত সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ায় কক্সবাজার জেলা পুলিশের ভাবমূর্তি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। হৃত ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও পুনরুদ্ধার হয়েছে। কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন-গত এক বছরে মাদক, ইয়াবা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে জেলা পুলিশ আশাতীত সাফল্য দেখিয়েছে। যা এ অঞ্চলের মানুষের জন্য খুবই প্রয়োজন ছিলো। কারণ বারুদ ও মাদকের গন্ধে টেকনাফ-উখিয়ায় সাধারণ মানুষের সেখানে বসবাস করা অসহনীয় হয়ে উঠেছিলো।
এ দিকে, এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম কক্সবাজারে এসপি হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার এক বছর পূর্তিতে তাঁর নিজস্ব ফেসবুকে আইডি তে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন-তিনি দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের ঘৃনা করেন। কক্সবাজারের শান্তিপ্রিয় মানুষ গুটি কয়েক মানুষের কাছে পরাজিত হতে পারেনা। মাদক ও ইয়াবা বিরোধী চলমান অভিযানকে সমালোচনা করে ঠেকানোর জন্য যারা অপচেষ্টা করছে তাদের পরাজিত করতে হবে। গুটিকয়েক মানুষের কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি থাকতে পারেনা। জেলা পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযানের ফলাফলের একটা দৃষ্টান্ত হলো-কক্সবাজার জেলা কারাগারে প্রায় ৪৩০০ জন বন্দী রয়েছে, তারমধ্যে প্রায় ৩২০০ জন হচ্ছে মাদকের আসামি। তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে আরো বলেন-কক্সবাজারে বাস্তবায়নাধীন ৩ লক্ষ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের স্বার্থেই কক্সবাজারের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে। তিনি বলেন-যতদিন আছি, আরো দৃঢ় মনোবল নিয়ে কাজ করে যাবো ইনশাল্লাহ। এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন-“ইয়াবার মূল প্রবেশদ্বার টেকনাফের বিশিষ্টজন থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ একসময় সামাজিক কর্মকান্ডসহ হাটে বাজারে বিভিন্ন কার্যক্রমে নিজেদের অসহায় ভাবতেন, বাইরে কোথাও নিজেদের পরিচয় দিতে কুন্ঠাবোধ করতেন, তারা এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। আমাদের মাদক বিরোধী এই কঠোর অবস্থানকে কক্সবাজার জেলার মাননীয় সংসদ সদস‍্যবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সংবাদ মাধ্যমের সম্মানিত সদস‍্যসহ সর্বস্তরের মানুষ অকুন্ঠ সমর্থন দিয়েছেন। আমরা এই সমর্থনের জন্য সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কক্সবাজার জেলার এই দুর্নাম ঘোচাতে এবং দেশের লক্ষ লক্ষ তরুণ সমাজ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে আমাদের এই কঠোর অভিযান অব‍্যাহত থাকবে। মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী, চাদাবাজ এবং জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় আমরা দলমত নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। দেশকে বাচাতে সকলের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। মাদক নির্মূলে এ জেলায় কর্মরত সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে এবং ঐক্যবদ্ধ আছে। সবশেষে বলবো, যতদিন এই জেলায় কর্মরত থাকবো ততদিন সকলকে সাথে নিয়ে আরো দৃঢ়তার সাথে কক্সবাজারবাসীকে সেবা প্রদান করে যাবো- এই অঙ্গীকার ব‍্যক্ত করছি।”