বিশেষ প্রতিবেদক:
প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেড়শ’ বছরের রেকর্ড ডিঙ্গিয়ে এবারই প্রথম প্রায় ৮৭ কোটি টাকার ড্রেন, ফুটপাত, লাইটিংসহ সড়ক উপ-সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু করছে কক্সবাজার পৌরসভা। এর আগে এক টেন্ডারে সর্বোচ্চ ৬৫ কোটি টাকার কাজ হয়েছিল। নিজের আমলে এবারই প্রথম এক সাথে প্রায় ৮৭ কোটি টাকার কাজ টেন্ডার করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন মেয়র মুজিবুর রহমান। সেই সাথে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়ে ভেঙ্গেছেন দেড়শ’ বছরের রেকর্ডও। শুধু তাই নয়, মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর গত এক বছরে প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা সড়ক যোগাযোগের খাতায় খরচ করেছেন তিনি। যার মধ্যে কলাতলী হোটেল-মোটেল জোন, পল্লাইন্যা কাটা, এবিসি ঘোনা, রুমালিয়ারছড়া, এসএম পাড়া এবং টেকপাড়া ৪নং ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রত্যন্ত এলাকায় আরসিসি ঢালাইয়ের মাধ্যমে সড়ক নির্মাণ কাজ হলো অন্যতম।

এর ধারাবাহিকতায় বর্ষার শেষেই আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে নতুন আরো ৫টি বড় প্রকল্পের কাজ শুরু করবেন মেয়র। কক্সবাজার পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সড়ক উপ-সড়কের দীর্ঘদিন নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। বিশেষ করে বর্ষায় বৃষ্টির ভয়াবহতায় অনেকগুলো সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাই পৌরবাসীর দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে টেকসই নির্মাণ কাজের উদ্যোগ নিয়েছে পৌর পরিষদ। এ লক্ষ্যে সব ধরণের প্রস্তুতিও অনেকটা শেষ হয়েছে। এখন শুধু মন্ত্রণালয়ের চুড়ান্ত প্রক্রিয়ার শেষ সময়ের অপেক্ষা।

ইতোমধ্যে মিউনিসিপ্যাল গর্ভানেন্স এন্ড সার্ভিসেস প্রজেক্ট (এমজিএসপি) প্রকল্পের আওতায় পৌরসভার উন্নয়ন কাজগুলো বাস্তবায়নে ই-জিপি সিস্টেমে টেন্ডারও সম্পন্ন করা হয়। সবকিছু ঠিকটাক থাকলে আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, “আমি দায়িত্ব নিয়েছি মাত্র এক বছর হলো। এরিমধ্যে প্রায় দুইশ’ কোটি টাকার সড়ক এবং ড্রেন নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করেছি। যদিও কিছু কাজ শেষ হয়েছে বাকিগুলো এখনো চলমান।”

নতুন কাজ শুরু হলে স্ব-স্ব এলাকার স্থানীয় লোকজনকে নিজেদের জীবন মানোন্নয়নের স্বার্থে ঠিকাদার এবং পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়ে মেয়র আরো মুজিব বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছা অনুযায়ী পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে সুন্দরভাবে সাজানো হচ্ছে। কারন তিনি কক্সবাজারকে নিয়ে সবসময় ভাবেন, সুন্দর স্বপ্ন দেখেন। সে জন্য তাঁর স্বপ্নই আমাদের সবার স্বপ্ন হওয়া উচিৎ।”

এদিকে মিউনিসিপ্যাল গর্ভানেন্স এন্ড সার্ভিসেস প্রজেক্ট (এমজিএসপি) প্রকল্পের আওতায় আরো ৫টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের টেন্ডার হয়েছে। ওই সড়কগুলো আরসিসিকরণ, ড্রেন, ফুটপাত নির্মাণ ও স্ট্রীট লাইটসহ করা হবে বলে জানিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুল আলম জানান, আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে ৮৭ কোটি টাকার কাজ শুরু হবে। এরমধ্যে এয়ারপোর্ট গেইট থেকে টুইট্টা পাড়া পর্যন্ত সড়ক ছাড়াও লিংক-১ মেয়র হাউজ রোড, লিংক-২ (বিআইডব্লিউটি) জেটি রোড, লিংক-৩ নতুন বাহারছড়া রোড, লিংক-৪ মধ্যম নুনিয়ারছড়া জামে মসজিদ রোড, লিংক-৫ কেজি স্কুল রোড আরসিসিকরণ, ড্রেন, ফুটপাত নির্মাণ ও স্ট্রীট লাইট স্থাপন।

শহীদ স্মরণী রোড এবং লিংক-১ সালাম মিয়া রোড, লিংক-২ বাহারছড়া গোল চত্বর রোড, লিংক-৩ আরআরআরসি রোড, লিংক-৪ সাব রেজিস্টার অফিস রোড আরসিসিকরণ, ড্রেন, ফুটপাত ও স্ট্রীট লাইট স্থাপন।

বইল্যা পাড়া থেকে শহীদ স্মরণী রোড হয়ে গোলদিঘীর পাড় পর্যন্ত এবং লিংক-১ কক্স মার্কেট রোড, লিংক-২ শংকর মঠ মিশন রোড, লিংক-৩ সুইপার কলোনী রোড, লিংক-৪ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ রোড থেকে খানেকা রোড, লিংক-৫ মোহাজের পাড়া রোড, লিংক-৬ জেলা পরিষদ রোড, লিংক-৭ বিকেপাল রোড আরসিসিকরণ, ড্রেন ও স্ট্রীট লাইট স্থাপন।

জেলেপার্ক মাঠ থেকে বিমান বাহিনীর গেইট এবং রিদুয়ান জামে মসজিদ থেকে শুটকী মহাল পর্যন্ত ও লিংক-১ নাজিরারটেক পুরাতন বাজার রোড আরসিসিকরণ, ড্রেন ও স্ট্রীট লাইট স্থাপন কাজ। থানা রোড হতে খুরুশকুল রোড পর্যন্ত এবং লিংক-১ কেন্দ্রীয় মহাশ্মশান রোড, লিংক-২ পৌর সুপার মার্কেট রোড, লিংক-৩ ফুলবাগ সড়ক, লিংক-৪ বার্মিজ স্কুল রোড, লিংক-৫ পুরাতন ম্যালেরিয়া অফিস রোড, লিংক-৬ পেশকার পাড়া রোড, লিংক-৭ টেকপাড়া রোড আরসিসিকরণ, ড্রেন, ফুটপাত ও স্ট্রীট লাইট স্থাপনের কাজ।

এদিকে সচেতন মহল মনে করছেন, নতুন টেন্ডার হওয়া সড়কের কাজগুলো শেষ হলে কক্সবাজার পৌর এলাকার বেশিরভাগ অনুন্নত জায়গা বদলে যাবে। তাই টেকসই এবং গুনগতমান বজায় রেখে সড়ক নির্মাণের কাজগুলো দ্রুত শেষ করতে মেয়র মুজিবুর রহমানের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।