ওহীর জ্ঞানের চর্চা হলে সমাজে জুলুম নির্যাতন থাকবে না : আল্লামা বোখারী

বার্তা পরিবেশক :

ওহীর জ্ঞান হচ্ছে নির্ভুল এবং বিশুদ্ধ। আমাদের সমাজের সর্বস্তরে ওহীর জ্ঞানের চর্চা হলে কোন ধরনের অনাচার এবং জুলুম নির্যাতন থাকবে না।(সোমবার) ৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার শহরতলির লিংক রোডের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইমাম মুসলিম ইসলামিক সেন্টারে দাওরায়ে হাদিসের নতুন ক্লাস উদ্বোধন ও দোয়া মাহফিলে শায়খুল হাদিস আল্লামা আব্দুল হালিম বোখারী একথা বলেন।

বাদ জুহর ইমাম মুসলিম ইসলামিক সেন্টার মসজিদে বোখারী শরীফের সবক উদ্বোধন ও এই দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

বোখারী শরিফের সবক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ঐতিহ্যবাহী পটিয়া আল জামিয়া ইসলামিয়ার মহাপরিচালক ও ইত্তেহাদুল মাদারিসের সেক্রেটারী জেনারেল শায়খুল হাদিস আল্লামা আব্দুল হালিম বোখারী বলেন, ওহীর জ্ঞান হচ্ছে নির্ভুল এবং বিশুদ্ধ। তাই ইমাম বুখারী রহঃ ওহীর গুরুত্ব বিবেচনা করে বোখারী শরীফ এর শুরুতে ওহী সম্পর্কিত হাদিস সংযোজন করেছেন। এর সাথে জরিত ঈমান, আমল ও ইবাদত।

তিনি বলেন, আমাদের সমাজের সর্বস্তরে ওহীর জ্ঞানের চর্চা হলে কোন ধরনের অনাচার এবং জুলুম নির্যাতন থাকবে না। কক্সবাজার শহরতলীতে ইমাম মুসলিম ইসলামিক সেন্টার দাওরায়ে হাদিস ক্লাস চালু করে কোরআনের তাফসিরের পাশাপাশি বুখারী শরীফ চর্চার ব্যবস্থা করেছেন। এটা কক্সবাজারের মানুষের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদের স্বীকৃতি দিয়ে যুগান্তকারী কাজ করেছেন। আরবি ও ইসলামিক বিষয়ে দাওরায়ে হাদিসের সনদকে এম এ মর্যাদা প্রদান করে কাওমি ওলামাদের সম্মানিত করেছেন। এজন্য তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

তিনি বলেন, ইত্তেহাদুল মাদারিস কওমি মাদ্রাসা সমুহের অন্যতম একটি শিক্ষা বোর্ড। এই অঞ্চলে ইত্তেহাদুল মাদারিস এর অধীনে অধিকাংশ কওমী মাদ্রাসা পরিচালিত হয়ে থাকে। ইমাম মুসলিম ইসলামিক সেন্টার এর সুযোগ্য পরিচালক হাফেজ মাওলানা সালাহুল ইসলাম ইত্তেহাদুল মাদারিস এর অধীনে এখানে দাওরায়ে হাদিসের ক্লাস শুরু করতে যাচ্ছেন এজন্য তিনি তাকে এবং সাবর্বিক সহযোগিতার জন্য এই এলাকার সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে কক্সবাজারের কৃতি সন্তান, প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন চট্টগ্রাম দারুল মা’আরিফ আল ইসলামিয়ার উপ পরিচালক আল্লামা মুহাম্মদ ফুরকান উল্লাহ খলিল বলেন, দীর্ঘদিন থেকে কক্সবাজার শহরে একটি দাওরায়ে হাদিস মানের মাদ্রাসার প্রয়োজনীয়তা ছিল।

তিনি বলেন, খতীবে আজম আল্লামা ছিদ্দিক আহমদ, মরহুম হাজী সাহেব হুজুর, মরহুম আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী ও আল্লামা সুলতান যওক সহ আমাদের মুরুব্বীরা এজন্য অনেক চেষ্টা করে গেছেন। আজ মাওলানা হাফেজ সালাহুল ইসলামের প্রচেষ্টায় ইমাম মুসলিম ইসলামিক সেন্টারে দাওরায়ে হাদিসের ক্লাস চালু হতে যাচ্ছে। এ ক্লাস উদ্বোধন করেন পটিয়ার আল জামিয়া ইসলামিয়া মহাপরিচালক আল্লামা আব্দুল হালিম বোখারী।
তিনি বলেন, হাফেজ সালাহুল ইসলামের বিরুদ্ধে শুধু অপপ্রচার হয়েছে। কিন্তু তিনি কি কাজ করছেন হয়ত অনেকেই জানেন না।

এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ মাহফুজুর রহমান বলেন, কওমি মাদ্রাসার হাজার হাজার ওলামায়ে কেরাম আগে থেকেই সমাজের বিভিন্ন স্তরে উন্নয়ন কাজে এবং ইসলাম প্রচারে জড়িত ছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দিয়ে এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে দেশের মূল ধারার সাথে সম্পৃক্ত করে তাদেরকে সম্মানিত করেছেন এবং মূল্যায়ন করেছেন। এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।

এখন থেকে কওমি শিক্ষার্থীরা সমাজে ইসলামের নামে কুসংস্কার, জঙ্গীবাদ সহ সবধরনের দেশবিরোধী অপতৎপরতা রোধে আরো বেশি ভূমিকা পালন করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি ইমাম মুসলিম ইসলামিক সেন্টারের জন্য সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

অনুষ্ঠানে জনপ্রতিনিধি, ওলামায়ে কেরাম, বিভিন্ন কওমি মদরাসার মুহতামিম, সাংবাদিকবৃন্দ ও দ্বীন দরদী মুসলমানরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, সরকারের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দাওরায়ে হাদিসভূক্ত মাদ্রাসাসমূহের কয়েকটি কওমি শিক্ষা বোর্ড রয়েছে। এরমধ্যে ‘ইত্তেহাদুল মাদারিস’ অন্যতম। এই শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন কক্সবাজারের কৃতি সন্তান বিশ্ববিখ্যাত আরবি সাহিত্যিক, শায়খুল হাদিস, চট্টগ্রাম দারুল মা’আরিফ আল ইসলামিয়ার মহাপরিচালক আল্লামা সুলতান যওক নদভী।

এর মহাসচিব হচ্ছেন দেশের ঐতিহ্যবাহী অন্যতম কওমি ধারার সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের পটিয়া আল জামিয়া ইসলামিয়ার মহাপরিচালক শায়খুল হাদিস আল্লামা আব্দুল হালিম বোখারী।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, শেখ আসাদুজ্জামান, মাওলানা আফসার উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।

অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী এবং দেশ ও জাতির জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এছাড়া প্রধান অতিথিকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন ইমাম মুসলিম ইসলামিক সেন্টারের পরিচালক হাফেজ মাওলানা ছালাহুল ইসলাম ও প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।

এই মহতি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে মাহফিলকে সফল করায় সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ‘ইমাম মুসলিম ইসলামিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ।