মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

দ্রুততম সময়ে নাগরিক সেবা প্রদান, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং ই- ফাইলিং কার্যক্রমে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ কক্সবাজার জেলায় কর্মরত ৮ জন উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের মধ্যে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নিকারুজ্জামান কে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। রোববার ৮ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শহীদ এটিএম জাফর আলম সিএসপি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠানের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে এ সম্মানজনক পুরস্কার ইউএনও মোঃ নিকারুজ্জামানের হাতে তুলে দেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে ডিডিএলজি শ্রাবস্তী রায়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) উপসচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাঃ শাজাহান আলি, এডিসি (সার্বিক) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা, এডিসি (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) সরওয়ার কামাল, এডিসি (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ আল আমিন পারভেজ, জেলা প্রশাসনের অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকতাবৃন্দ ও কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন উপজেলার ইউএনও গণ, উপস্থিত ছিলেন।

কক্সবাজার জেলার ইউএনও ক্যাটাগরীতে বিভিন্ন সূচকে লক্ষ্যমাত্রা অজর্নের স্বীকৃতি স্বরূপ শুদ্ধাচার স্মারক ও সনদ পাওয়া উখিয়া’র ইউএনও মোঃ নিকারুজ্জামান ১৯৮৬ সালের ১০ অক্টোবর চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার চন্দনাইশ পৌরসভার চৌধুরী পাড়ায় জম্ম গ্রহন করেন। তিনি চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) হতে ২০১০ সালে সিভিল ইন্জিনিয়ারিংএ কৃতিত্বের সাথে বিএসসি পাশ করেন। মরহুম এম.ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী ও খালেদা জামান চৌধুরী’র জ্যেষ্ঠ পুত্র মোঃ নিকারুজ্জামান ২০১১ সালে ৩০ তম বিসিএস পরীক্ষায় সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে দেশের সবচেয়ে বুনিয়াদি ও সিদ্ধান্ত গ্রহনকারী ক্যাডার হিসাবে পরিচিত বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। মোঃ নিকারুজ্জামান ২০১২ সালের ৩ জুন নেত্রকোনা জেলা প্রশাসনে সহকারী কমিশনার হিসাবে প্রথম সরকারি চাকুরীতে যোগ দেন। এরপর তিনি আর পেছনে তাকাননি। কুমিল্লা জেলা প্রশাসনে সহকারী কমিশনার ও প্রথম শ্রেণীর নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট হিসাবে, নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলা ও কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসাবে পর পর সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। অত্যন্ত মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসাবে চাকুরীতে বিভিন্ন জায়গায় উজ্জ্বলতার স্বাক্ষর রাখায় মোঃ নিকারুজ্জামান রামু উপজেলার এসি (ল্যান্ড) থাকাবস্থায় মিয়ানমার থেকে ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট রোহিঙ্গা শরনার্থী আসার ঢল নামার সেই সংকটময় সময়ে প্রথমে উখিয়া উপজেলা প্রশাসনে তাঁকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়। সেখানেও তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রাখায় মোঃ নিকারুজ্জামান ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে উখিয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিয়োগ পেয়ে অদ্যাবদি এই কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করছেন সফলতার সাথে। মিয়ানমার থেকে বন্যার স্রোতের মতো রোহিঙ্গা শরনার্থী ব্যবস্থাপনার জন্য সম্পূর্ণ অগোছালো ও অপ্রস্তুত অবস্থায় সেই দায়িত্ব তিনি সুচারুরূপে, পেশাদারিত্ব ও দূরদর্শিতা দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে পালন করেন। ইউএনও মোঃ নিকারুজ্জামান সহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা শরনার্থী আগমনের সেই মহাসংকট সময় কাটিয়ে উঠতে প্রশাসন সক্ষম হন। যা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়। রোহিঙ্গা শরনার্থী সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এবছর অর্জন করে অত্যন্ত মূল্যবান ‘জনপ্রশাসন পদক’। মোঃ নিকারুজ্জামান চট্টগ্রাম শহরের হালিশহর এলাকার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট ফারজানা কামাল’কে ২০১৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জীবন সঙ্গিনী হিসাবে বেঁচে নেন। ফারজানা কামাল নিজে একজন স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। তবে তিনি এখন আইন পেশা চর্চা নাকরে ব্যাংকিং পেশাকে বেচে নিয়েছেন পেশা হিসাবে। ফারজানা কামাল এখন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক উখিয়া উপজেলার কোটবাজার শাখায় কর্মরত একজন উর্ধ্বতন কর্মকতা। বিস্ময়কর প্রতিভাসম্পন্ন উখিয়ার ইউএনও মোঃ নিকারুজ্জামান শুদ্ধাচার পুরস্কার পাওয়ার এই শুভলগ্নে সিবিএন এর কাছে অনুভূতি ব্যক্ত করে মহান আল্লাহতায়লার কাছে শোকরিয়া জ্ঞাপন করে বলেন, এ প্রাপ্তির জন্য কক্সবাজারের স্বনামধন্য জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন, জেলা প্রশাসনের সকল এডিসি, এডিএম সহ উর্ধ্বতন কর্মকতাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

তিনি বলেন-এ অর্জন আমার একার পক্ষে কখনো সম্ভব নয়, আমার কার্য়ালয়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে তা সম্ভব হয়েছে। কারণ সকলে সম্মিলিতভাবে যথাযথ দায়িত্ব পালন নাকরলে আমার একার পক্ষে এ অর্জন মোটেই সম্ভব হতোনা। আজকের এদিনে আমার মরহুম বাবা এম. ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী’কে আমার বার বার মনে পড়ছে। ইউএনও মোঃ নিকারুজ্জামান সিবিএন-কে আরো বলেন, আমার বাবা বেঁচে থাকলে আমার এ অর্জনে তিনিই সবচেয়ে বেশী খুশি হতেন। সৎ ও পরিশ্রমী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান বলেন, এ প্রাপ্তি আমাকে প্রেরণা ও প্রত্যয়ে সমৃদ্ধ করেছে। দায়িত্ব ও কাজের প্রতি আরো বেশী উৎসাহ বোধ করছি। এ অর্জন আমার কাজের পরিধিকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ইউএনও মোঃ নিকারুজ্জামান তাঁর এ প্রাপ্তি তাঁর কার্যালয়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও উখিয়া উপজেলার সকল নাগরিকের প্রতি উৎসর্গ করেন। তিনি ভবিষ্যতে তাঁর পথ চলায় সকলের সহযোগিতা, দোয়া ও আশীর্বাদ কামনা করেছেন। প্রসঙ্গত, একইদিন একই অনুষ্ঠানে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ক্যাটাগরীতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফর রহমান এবং অফিস সহায়ক ক্যাটাগরীতে সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর মিজানুর রহমান’কে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুদ্ধাচার পুরষ্কার প্রদান করা হয়।