মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

গত রোববার ২৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে উখিয়ার মধুরছড়া শরনার্থী ক্যাম্পের এক্সটেনশন-৪ এর খোলামাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশ হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরনার্থীদের পদভারে কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো। দাবি আদায়ে উত্তাল ছিলো এ সমাবেশ। সমাবেশের মধ্যমনি ছিলেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিচ এন্ড হিউম্যান রাইর্টস এর চেয়ারম্যান মাস্টার মোঃ মুহিব উল্লাহ। তিনি সকল পর্যায়ের রোহিঙ্গা নেতাদের মন্ঞ্চে সাথে রেখে প্রধান অতিথি হিসাবে রোহিঙ্গা সমাবেশে বক্তৃতা করেছেন। তার বক্তৃতায় উঠে আসে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের কথিত ৫ দফা দাবি। যেসব দাবি পূরণ নাহলে রোহিঙ্গারা কোন অবস্থাতেই মিয়ানমারে ফিরে যাবেনা বলে মাস্টার মোঃ মুহিব উল্লাহ’র উস্কানিমূলক বক্তব্যে সমাবেশে উপস্থিত রোহিঙ্গারা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এসব দাবির মধ্যে ছিলো (১) রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেয়া, (২) রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা বসতভিটা ও অন্যান্য স্থাবর সম্পদ ফিরিয়ে দেয়া, (৩) রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়া, (৪) আইসিসি কোর্টে রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার করা ও (৫) রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফ্রি মুভমেন্টের সুযোগ দেয়া। রোহিঙ্গাদের সমাবেশে রোহিঙ্গা শরনার্থীরা এই ৫ দফা দাবী ও নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দেয় ও অঙ্গীকার করে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে সকলে। চট্টগ্রামে আঞ্চলিক ভাষায় দাবী আদায়ের মূহুর্মূহ শ্লোগান, প্লেকার্ড, ফেস্টুন আর ব্যানারে ছেয়ে যায় সমাবেশস্থল। এখন সবার কাছে প্রশ্ন-কে সেই মাস্টার মোঃ মুহিব উল্লাহ!

অভিযোগ উঠেছে, পাকিস্তান ভিত্তিক সংস্থা ‘আল খিদমত ফাউন্ডেশন’ এর সাথে জড়িত এই মাস্টার মোঃ মুহিব উল্লাহ। বিশ্বস্থ একটি সুত্র মতে, পিআরএপিএইচ-এর চেয়ারম্যান মাস্টার মোঃ মুহিব উল্লাহ আল খিদমত ফাউন্ডেশন থেকে নিয়মিত অর্থের যোগান পায়। গত মাসখানেক আগে মাস্টার মোঃ মুহিব উল্লাহ বাংলাদেশের হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও আলোচিত প্রিয়া সাহার সাথে বিশ্বের ১৭ টি দেশের নির্যাতিত ধর্মীয় গোষ্ঠীর ২৭ জন প্রতিনিধির একজন হিসাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট মি. ডোলান্ড ট্রাম্পের সংঙ্গে রোহিঙ্গা শরনার্থী বিষয়ে সাক্ষাত করে কথা বলেছিলেন (উপরের ছবিতে গোলাকার চিহ্নিত)। মাস্টার মোঃ মুহিব উল্লাহ রোহিঙ্গা নেতা হয়েও তাঁর বাংলাদেশের পাসপোর্ট রয়েছে। কিন্তু এই রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মোঃ মুহিব উল্লাহ শরনার্থী ক্যাম্প এরিয়ায় প্রবেশের জন্য কর্তৃপক্ষ থেকে কোন অনুমতি নেয়নি। রোববার ২৫ আগষ্ট উখিয়ার মধুরছড়ায় অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা মহাসমাবেশের ব্যয় বিভিন্ন এনজিও এবং আইএনজিও’র সাথে এ মোঃ মুহিব উল্লাহ’র সংগঠন অর্থায়ন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একই সমাবেশে বক্তৃতা করেছেন, আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিচ এন্ড হিউম্যান রাইর্টস এর সেক্রেটারি নুরুল মাসুদ ভূইয়া, মাস্টার আব্দুর রহিম, মোহাম্মদ ইলিয়াছ, রোহিঙ্গা নেত্রী হামিদা বেগম সহ অন্যান্য নেতারা। তারাও অবৈধভাবে শরনার্থী ক্যাম্প এরিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া, একইদিন একইসময়ে টেকনাফের উনচিপ্রাং, বালুখালী, নয়াপাড়া সহ অন্যান্য ক্যাম্প গুলোতেও সমাবেশ ও র‍্যালী অনুষ্ঠিত হয়। এসব সমাবেশ ও র‍্যালীও মাস্টার মোঃ মুহিব উল্লাহ’র সংগঠনের অর্থায়নে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একজন বিশেষজ্ঞ অভিবাসন কর্মকর্তার মতে, আন্তর্জাতিকভাবে লবিং এ যুক্ত মাস্টার মোঃ মুহিব উল্লাহদের অশুভ তৎপরতা বন্ধে এখনি যথার্থ পদক্ষেপ নানিলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরো জটিল আকার ধারণ করার আশংকা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট রোববার ছিল রোহিঙ্গা শরনার্থী বাংলাদেশে আগমনের দু’বছর পূর্তি। ২০১৭ সালের ঐদিনে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা শরনার্থী আগমনের ঢল নামা শুরু হয়েছিল। এদিন থেকে পরবর্তী প্রায় একমাস পর্যন্ত প্রায় ৭ লক্ষ রোহিঙ্গা শরনার্থী বাংলাদেশে আগমন করে। বাংলাদেশে এর আগে আসা রোহিঙ্গা শরনার্থী ছিলো প্রায় ৪ লাখ। কক্সবাজার জেলার উখিয়া-টেকনাফের ৩৩ টি শরনার্থী ক্যম্পে থাকা এসব শরনার্থীদের মাঝে গত দু’বছরে আরো প্রায় ৯১ হাজার শিশু জম্ম নিয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় পৌনে ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরনার্থী বাংলাদেশে এখন অবস্থান করছে।