আবদুল কাদের

জাতিসংঘের তথ্য মতে, বিগত ২০১৭ সালের ২৫ শে আগস্ট ১১ লাখ ৮৫ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত হয়ে অনুপ্রবেশ করেছিল প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশে। সেই সংখ্যা ২ বছর পর এখন ১৫ লাখ ছাড়িয়েছে । বিপুল সংখ্যক এই জনগোষ্ঠি এবং তাদের কর্মকান্ড নিয়ে কক্সবাজারের স্থানীয় জনগন সহ সারা বাংলাদেশের মানুষের জন্য এখন হুমকীর মুখে। সম্প্রতী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কিছুটা আশার আলো দেখলে ও নানা জঠিলতায় বন্ধ হয়ে যায় এই প্রত্যাবাসন। কিছুতেই একজন রোহিঙ্গা ও স্বদেশে ফিরে রাজি নই উল্টো ৫/৬ দফা দাবির শর্তে গত ২৫ শে আগস্ট ২০১৯ তারা ডাক দেয় মহাসমাবেশের।
সচেতন মহলের মতে, দু দিন আগে ও চাল/ডাল /রেশনের কার্ড নিয়ে লাইনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করা এই রোহিঙ্গারা লক্ষাধীক লোকের সমাগম ঘটিয়ে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক কিভাবে দেই? এর পিছনে কারা জড়িত? এই সমাবেশের মাধ্যমে তারা কি কোন অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি করতে চায়? কিংবা তারা কি বাংলাদেশে থেকে মিয়ানমারের এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে চাই? এসব প্রশ্ন আজ জনমনে। তাদের মতে, বিপুল সংখ্যক এই জনগোষ্ঠী এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে, প্রশাসন সহ সরকারের উচিত এখন রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে নতুন করে পদক্ষেপ নেওয়ার।
স্থানীয়দের মতে, বিভিন্ন NGO সংস্থার উসকানি মুলক পরামর্শে রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরতে রাজি হচ্ছে না।ক্যাম্প গুলিতে NGO দের কর্মকান্ড বন্ধ করে প্রিয় মাতৃভুমির দুঃসময়ের সাহসী সন্তান বাংলাদেশ সেনাবাহীনির অকুতোভয় সৈনিক ভাইদের ক্যাম্প এর তত্ত্বাবধানে দায়িত্ব দেওয়া দরকার। জাতির কল্যানে একমাত্র সেনাবাহীনির শুশৃংখলাই ফিরে আনতে পারে ক্যাংম্প গুলোতে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রনে।
উল্লেখ্য, বিগত দু বছরে উখিয়া টেকনাফের ৩২ টি শিবিরে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। ইয়াবা, হত্যা, ডাকাতি,নারী ও শিশু নির্যাতন ,স্থানীয়দের উপর হামলা,সাংবাদিক এর উপর আক্রমণ এবং মানব পাচার সহ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চার শতাধীক মামলা হয়েছে।
আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য মতে, গত দুই বছরে রোহিঙ্গা শিবিরে নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে নিহত হয়েছেন ৪৩ জন রোহিঙ্গা। এছাড়া ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আরও ৩২ রোহিঙ্গা নিহতের কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের প্রবেশের পর ডাকাতি, অপহরণ, ধর্ষণ, চুরি, মাদক ও মানবপাচারসহ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৪৭১টি। যার মধ্যে মাদক মামলা ২০৮, হত্যা মামলা ৪৩ ও নারী সংক্রান্ত মামলা ৩১ টি। এসব মামলায় আসামি ১০৮৮ রোহিঙ্গা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, দিন দিন রোহিঙ্গারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি তারা চুরি, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। শিবির থেকে বেরিয়ে স্থানীয়দের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটছে।

পুলিশসহ স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, টেকনাফ ও উখিয়ার শিবিরে সাতটি করে সন্ত্রাসী বাহিনী আছে। এর মধ্যে টেকনাফের ‘আবদুল হাকিম বাহিনী’ বেশি তৎপর। এই বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য যখন-তখন লোকজনকে অপহরণ করে। মুক্তিপণ না পেলে হত্যা করে লাশ গুম করে। ইয়াবা, মানবপাচারে যুক্ত থাকার পাশাপাশি এ বাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গা নারীদের তুলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটায়।

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, আগে রোহিঙ্গারা খাবারসহ নানা প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য দৌড়াদৌড়ি করতো। এখন তাদের খাবার ও সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য কোথাও দৌড়াতে হয়না। এনজিওরা তাদের ঘরে ঘরে সব প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দিচ্ছে। কোনো কাজ ও সংসারের পিছুটান না থাকায় রোহিঙ্গারা নানা অপকর্মে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে ইয়াবা রাজ্য বানিয়েছে। ধর্ষণ, খুন, হামলা তাদের নিয়মিত কাজে পরিণত হয়েছে। তাদের কারণে স্থানীয়রা এখন অসহায় হয়ে পড়েছে। নিরাপত্তা ঝুঁকি ও আতংকের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয়রা।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, “রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেওয়ার পর অবস্থান যতটা নীরব ছিল,এখন তেমনটি নেই। আগে তাদের চাহিদা ছিল খাদ্য এবং চিকিৎসার ওপর। এখন রেশনের খাবার খেয়ে আলস্যতার কারণে তাদের মাথায় দুষ্টবুদ্ধি কাজ করে প্রতিনিয়ত। তাছাড়া ক্যাম্পগুলোতে অর্ধেকেরও বেশি যুবক। ফলে অপরাধ প্রবণতা বাড়ার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে সংখ্যাগত দিক দিয়ে একটু খারাপের দিকেই যাচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নিয়মিত টহল ও অভিযান জোরদার করেছে পুলিশ। কঠোর অবস্থান ও নজরদারিতে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।”

তবে বিশাল এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।