বিশেষ প্রতিবেদক:

কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়ন পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আ.ন.ম শহীদ উদ্দিন ছোটনের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়নের মগডেইল মৌলভীপাড়ার মৃত মাষ্টার তালেব উল্লাহর ছেলে ও জাতীয় পার্টি কুতুবদিয়া উপজেলা শাখার একাংশের সভাপতি। গেল মাসের ২৫ জুলাই অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। সোমবার (৫ আগস্ট) এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন কুতুবদিয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। ষ্ট্যাম্প দলিল জালিয়াতির একটি মামলায় তাঁর নামে এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তবে গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরছে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ছোটন। এই নিয়ে বিভিন্ন মহলের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৭ মে কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়নের মুরালিয়া গ্রামের বাসিন্দা হাজি দীল মোহাম্মদ স্ট্যাম্প জালিয়াতির অভিযোগ এনে কুতুবদিয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি সি.আর মামলা (যার নং-১২৫/১৮) দায়ের করেন। মামলায় আ.ন.ম শহীদ উদ্দিন ছোটনকে বিবাদী করা হয়। মামলাটি দায়েরের পর তাঁর নামে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। সেই পরোয়ানা মাথায় নিয়ে তিনি উচ্চ আদালতে গিয়ে মামলার কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত রাখাসহ অন্তর্বর্তী জামিন লাভ করেন। স্থগিতাদেশের পাশাপাশি জামিনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও তিনি আদালতে স্বশরীরে হাজির হননি। এমনকি আদালতে হাজিরা প্রদান থেকে বিরত থাকেন। যে কারণে ৫ আগস্ট আদালত তাঁর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, বড়ঘোপ ইউনিয়নের মুরালিয়া গ্রামের আলহাজ্ব দিল মোহাম্মদ বিগত ২০০৪ সালের ২১ জানুয়ারি ৩৮নং রেজিষ্টার্ড দলিল মূলে বি,এস রেকর্ড মালিক হতে উপজেলা গেইটের পূর্ব পাশে আজম রোড সংলগ্ন ৪.৫০ শতক জমি ক্রয় করে তাতে টিনের চাল ও বেড়া দিয়ে ৪টি দোকানঘর নির্মাণ করেন। জনৈক মফিজ আলম, দিদারুল ইসলাম, মোঃ ইউছুপ প্রকাশ মানিক ও মিজান দোকান ঘর ৪টি লিখিত ভাড়ানামা চুক্তিপত্র মূলে ভাড়া নেয়। বি,এস রেকর্ড মালিকের স্বাক্ষর এবং টিপসই জাল করে নিবন্ধিত কবলার আড়ালে জাল দলিল সৃষ্টি করে নিজেকে দোকানের মালিক দাবী করেন ছোটন। বিনা ভাড়ায় দোকান করার সুযোগ দেয়ার লোভ দেখিয়ে গত ১৫ জানুয়ারী দিদারুল ইসলাম ও মফিজ আলমের সাথে দু’টি পৃথক ভাড়ানামা চুক্তিপত্র সম্পাদন এবং একই তারিখে ভাড়ানামা চুক্তিপত্র দু’টি কক্সবাজারের এডভোকেট এন্ড নোটারী পাবলিক মোহাম্মদ নুরুল আজিমের কার্যালয়ে ঘোষনা দিয়ে ৯০ ও ৯১ নং ক্রমিকে নিবন্ধন করে জঘন্য জাল জালিয়াত এবং প্রতারণার ঘটনা সংঘঠিত করেন। জাল জালিয়াতের কথা প্রকাশ পেলে তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেয়ায় গত বছর ৫ মে সন্ধ্যা ৭ টায় দোকান মালিকের উপর চড়াও হয় এ প্রতারক চক্র। তাদের বিরুদ্ধে বিচারাধীন সব মামলা প্রত্যাহার এবং জাল জালিয়াতের ঘটনার বিষয়ে পুনরায় মামলা করার চেষ্টা করলে দিল মোহাম্মদ কোম্পানি ও তার ব্যবসায়ী ছেলে জয়নাল আবেদীনকে অপহরণ করে গুম ও হত্যা করার হুমকি দেওয়ায় বাধ্য হয়ে দোকান মালিক আলহাজ্ব দিল মোহাম্মদ আদালতের সরনাপন্ন হয়েছেন বলে মামলা সূত্রে প্রকাশ।

উল্লেখ্য, গেল বছর ৭ মে কুতুবদিয়া উপজেলা ইউনিয়নের মুরালিয়া গ্রামের আলহাজ্ব দিল মোহাম্মদ কোম্পানীর দায়ের করা প্রতারণা মামলার (সি,আর ১২৫/২০১৮) দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত বছর ২০ আগষ্ট (সোমবার) বিজ্ঞ আদালত এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

প্রসঙ্গত, চলিত বছর ২৩ জানুয়ারী মহামান্য হাইকোর্টে তথ্য গোপন করে ৬ মাসের জন্য মামলা স্হগিত অাদেশ নেন বিবাদীপক্ষ। সে অনুসারে ২৪ জুলাই ওই মামলার ধার্য্য তারিখ থাকলেও বিবাদীপক্ষ আদালতে হাজির হয়নি। পরর্বতী ৫ আগস্ট আবারো হাজির হওয়ার জন্য আদালতে দিন ধার্য্য থাকলেও হাজির না হওয়ায় আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন বলে আদালত সুত্রে জানা গেছে।

বড়ঘোপ ইউনিয়ন পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আ.ন.ম শহীদ উদ্দিন ছোটন গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে প্রকাশ্যে চলাফেরার বিষয়ে কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিদারুল ফেরদৌস বলেন, ‘গ্রেপ্তারী পরোয়ানা থানায় এখনো পৌঁছেনি। সেটি হাতে পেলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে ‘