ডেস্ক নিউজ:

রাজধানীসহ সারা দেশের এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠান নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে শিগগিরই ডেঙ্গু মশার প্রকোপ কমে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার আবুল কালাম আজাদ।

তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত সরকার।’ তার মতে, ঈদের সময় রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে, অপরদিকে ঢাকা থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ গ্রামে যাওয়ার কারণে সেখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন।

তবে শহর কিংবা গ্রামে জ্বর উঠার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করলে শহর কিংবা গ্রাম কোথাও ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা ব্যাহত হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। সোমবার রাতে দেশের সামগ্রিক ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

তিনি জানান, বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতির কারণে বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা হাসপাতালে জ্বর আক্রান্ত রোগীদের ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট, স্যালাইন ও ওষুধ কেনার জন্য জরুরি ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দ প্রদান করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

জেলা সদর হাসপাতালে জন্য ১০ লাখ টাকা এবং উপজেলা হাসপাতালের জন্য ২ লাখ টাকার বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। প্রচলিত নিয়ম অনুসারে এ ধরনের বরাদ্দ দেয়ার আগে মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন হলেও ডেঙ্গু প্রকল্পের এ বিশেষ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি গ্রহণ করতে হবে না।

এ বিশেষ বরাদ্দের টাকা খরচ না হলে সে টাকা এম এস আর খাতের সাথে সমন্বয় করতে হবে। স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রাজধানীসহ সারা দেশের হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষক চিকিৎসকদের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।’

চিকিৎসকের পরামর্শে ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা করতে আসা রোগীদের সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু টেস্ট করা হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালে সরকার নির্ধারিত মূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। হঠাৎ করে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেওয়ায় ডেঙ্গু টেস্টের কিট অভাব দেখা দিলেও সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপে দ্রুত বিদেশ থেকে কিট আমদানি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানামুখী ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যাবে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট (সোমবার) পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ২৭ হাজার ৪৩৭ জন ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি ৭ হাজার ৬৫৮ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৯ হাজার ৭৬১।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে জানুয়ারিতে ৩৮, ফেব্রুয়ারিতে ১৮, মার্চে ১৭, এপ্রিলে ৫৮, মে মাসে ১৯৩, জুনে ১ হাজার ৮৮৪, জুলাইয়ে ১৬ হাজার ২২৩ ও সর্বশেষ চলতি মাসের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৯ হাজার ছয়জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৬৫ জন। মোট আক্রান্তের মধ্যে ঢাকা শহরে১ হাজার ১৪৮ জন। ঢাকা শহর ব্যতীত বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৯০৬ জন।

তার মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২২১, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৮০, খুলনা বিভাগে ১৫০, রংপুর বিভাগে ৪৭, রাজশাহী বিভাগে ১১২, বরিশাল বিভাগের ৯৯, সিলেট বিভাগে ৩৬ ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৬১ জন রোগী ভর্তি হন।