শাহেদ মিজান, সিবিএন:
কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে এসেছে, তাই টাকা প্রয়োজন। প্রয়োজনের তাগিদেই বাধ্য হয়েই চেয়েছিলেন টিউশনির টাকা। কিন্তু ঘটলো উল্টো ঘটনা। টাকা নয়, খেতে হয়েছে হাতুড়িপেটা! টিউশনির টাকা চাওয়ায় সন্তানদের গৃহশিক্ষক হাফেজ আবুল বশরকে বেদম হাতুড়িপেটা করেছেন কক্সবাজার শহরের এস.এম পাড়ার আলমগীর। গত ৪ আগস্ট রাত ৯টার দিকে এস.পাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। হাতুতির মারাত্মক আঘাতে রক্তবমিসহ মারাত্মক আহত হয়েছেন ওই গৃহশিক্ষক। তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

হামলার শিকার শিক্ষক হাফেজ আবুল বশর জানান, তিনি ২/৩ যাবত এস.এম পাড়ার মৃত শামসুল আলমের পুত্র মোঃ আলমগীরের ছেলেকে বাড়ি গিয়ে পড়িয়ে আসছেন তিনি। কিন্তু ‘আজ দিবে, কাল দিবে’ বলে বেতনের কোনো টাকাই দেয়নি আলমগীর। এতে বাধ্য হয়ে পড়ানো বন্ধ করে দেন গৃহশিক্ষক হাফেজ আবুল বশর। তবে এর মধ্যে বকেয়া বেতন পরিশোধ করবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আবারো শিক্ষক আবুল বশরকে নিয়ে পড়াতে নিয়ে যায় আলমগীর। এবারও এক মাসও পার হয়ে গেলেও একটা টাকাও দেয়নি। কোরবান আসায় টাকা চাইলেও দেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আবারো পড়ানো বন্ধ করে দেন ওই শিক্ষক। এই নিয়ে ৪ আগস্ট রাতে বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় শিক্ষক হাফেজ আবুল বশরের সাথে যোগাযোগ করতে যান মোঃ আলমগীর। সেখানে না পড়ানো ও বেতন পরিশোধ নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। বাক-বিতন্ডার এক পর্যায়ে আলমগীরের সাথে থাকা আরো তিনজনসহ চার মিলে শিক্ষক আবুল বশরকে তুলে এস.এম পাড়ায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গিয়ে প্রকাশ্যে রাস্তায় ফেলে ওই শিক্ষককে হাতুড়ি দিয়ে উপর্যুপরি পেটায় আলমগীর। এসময় তার সহযোগিতারাও পেটায়। এক পর্যায়ে পালিয়ে পাশ^বর্তী এক বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে প্রাণে রক্ষা পান তিনি।

স্থানীয় লোকজন জানান, পালিয়ে এলেও হাতুড়ির আঘাতে মারাত্মক আহত হন শিক্ষক হাফেজ আবুল বশর। তাদের হাসপাতালে এনে দ্রুত চিকিৎসা দেয়া হয়। বর্তমানে তিনি আশঙ্কামুক্ত নয়।

এদিকে হামলার শিকার শিক্ষক আবুল বশরকে আশ্রয় দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওই বাড়ির লোকজনের উপর হামলা চেষ্টা করেছে অভিযুক্ত আলমগীর। তবে হামলা করতে না পারায় তাদেরকে অশ্রাব্য গালি-গালাজ করেছে আলমগীর। এই ঘটনায় স্থানীয় পর্যায়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ ইয়াছিনের নেতৃত্বে এসআই রাজিবসহ একদল পুলিশ অভিযানে যায়। কিন্তু খবর পেয়ে পালিয়ে যায় হামলাকারী আলমগীর। তবে নৃশংস ঘটনায় হামলার শিকার হাফেজ আবুল বশর বাদি হয়ে থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন।

এই বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও অভিযুক্ত আলমগীরের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ ইয়াছিন বলেন, ‘মানুষের কতটা অধ:পতন হলে বেতনের টাকা চাওয়ায় উল্টো হাতুড়িপেটা করা হয়, তাতে আমি আশ্চর্য্য হয়েছি। হামলাকারী আলমগীরকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। তাকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

অন্যদিকে স্থানীয়রা জানান, আলমগীর একজন দাগী অপরাধী। মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজির সাথে জড়িত রয়েছে সে। এমনকি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। তার নিয়ন্ত্রণে এস.এম পাড়ায় ইয়াবার রমরমা ব্যবসা চলছে। সেখানে কেউ নতুন বাড়ি করলে আলমগীরকে মোটা অংকের চাঁদা দিতে হয়। না দিলে তার বাহিনী নিয়ে কাজ করতে বাধা দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় কাউন্সিলর আলমগীরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকে। এই কারণে সে বেপরোয়া হয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে নানা অপরাধ সংঘটিত করছে। আলমগীরের বিরুদ্ধে স্থানীয় মসজিদের ইমাম পেটানোরও অভিযোগ রয়েছে।