মোয়াজ্জেম হোসাইন সাকিল

ধরুন, আমাকে মশায় কামড় দিল; তাহলে চমৎকার সব প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ থাকছে। যেমন: মশা কামড় দেয়ার পর পরই সোজা চলে যাওয়া যাচ্ছে কাপড়ের দোকানে। নিজের মাপ অনুযায়ী কাপড় কিনে নেয়া যাবে । তারপর সুগন্ধীর দোকানে গিয়ে কেনাকাটা সেরে নেয়া যাবে। কামারের দোকানে গিয়ে কবর খনন করার যন্ত্রপাতি কিনে সোজা কবর স্থানে চলে যাওয়া যাবে। এরপর শুরু করা যাবে মূল কাজ।
আমি নিজে প্রতিদিন তওবা করি। টাকা পয়সার লেনদেনও মোটামুটি পরিস্কার রাখার চেষ্টা করি। যেটুকু লেনদেন আছে পরিবারের সদস্যদের কাছে হিসাব মোটামুটি দেয়া আছে। মশার কামড় দেয়ার আগে সময় পেলে হয়তো নিজেই সব লেনদেন চুকিয়ে নেবো।
আপাতত মশারি, মশা নিধন স্প্রে কিংবা কয়েল কিছুই ব্যবহার করছি না। চিন্তামুক্ত থেকে খুব ফুরফুরে মেজাজে চমৎকার বসবাস করছি। আজ ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম আমার ডান পায়ে মশার কামড়ে চিহ্ন। বেশ ফুলেও গেছে।
কিছুক্ষণ ভাবলাম। তারপর তওবাটা সেরে নিলাম। কোন লক্ষণ শুরু হয়নি। তাই মূল আয়োজনে গেলাম না। যেকোন সময় লক্ষণ শুরু হলেই মূল আয়োজন শুরু করে দেবো।
আজকে হয়তো অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন। কিন্তু একদিন এডিস মশাও নয়; ছোট্ট কোন মশা কিংবা মাছির কামড়ের পর মানুষকে মৃত্যুর প্রহর গুনতে হবে। আমি মোটামুটি সেই ধরণের একটি মানসিক শক্তিও সঞ্চয় করেছি। মৃত্যুর জন্য আমি সদাপ্রস্তুত!
মশা নাকি আমাদের নিঃশ্বাসে থাকা কার্বনডাই অক্সাইডকে ঘ্রাণশক্তির মাধ্যমে প্রায় ১০০ ফুট দূর থেকে শিকার পছন্দ করতে পারে। যদি আমাকে শিকার হিসেবে কোন মশা পছন্দ করে ফেলে; কোন না কোনভাবে সে তো আমার রক্ত চুষে খাবেই। কাজেই মশারী নিয়ে টানাটানি না করে প্রস্তুতি নেয়াই মোটামুটি বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করছি আমি। তবে আপনাদের আমার মতো প্রস্তুতি না নেয়ার অনুরোধ করছি। দয়া করে আপনারা মশা থেকে বাঁচার আপনাদের করণীয়টুকু সচেতনভাবেই করবেন। মশারি, স্প্রে, কয়েল; যারা যেটা অভ্যাস।
মশার শিকারের তালিকা দেখে খুবই অবাক লাগছে আমার। তবে খুবই বেদনাদায়ক ব্যাপার হচ্ছে আমার কন্যা তুল্য উখিংনু (নুশা) এর মৃত্যু। তার মৃত্যুতে আমি গভীর শোকাহত। যদিও বা আমি নিজেই মৃত্যুর জন্য মনে মনে প্রস্তুতি নিয়েছি। মানসিক শক্তি সঞ্চয় করেছি। কিন্তু এতো কাছের একজন প্রিয় মানুষের মৃত্যু মশার কামড়ে হবে তা কল্পনাও করতে পারিনি।
নুশার খালা আমার দীর্ঘদিনের সহকর্মী। নুশার বাবা আমার ঘনিষ্টজন। নুশার কাজিন আমার স্ত্রীর সহপাঠী। আরো নানাভাবে নুশার পরিবার আমার খুবই আপনজন। আমি খুবই ব্যতিত হয়েছি তরতাজা প্রাণটির চলে যাওয়ায়।
তবে মশার শর্ট লিস্টে চিকিৎসক, সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিবের স্ত্রী থেকে শুরু করে পুলিশ সহ ইতোমধ্যে যাদের দেখলাম; সত্যিই অবাক হওয়ার মতো। না জানি আরো কার কার তালিকা নিয়ে ঘুরছে এডিস মশা। এমনকি যারা মশা নিধনের স্প্রে ভেজাল করেছে তাদের যে সেই তালিকা থেকে বাদ দেবে তাও অনুমান করা যাচ্ছে না।
একটা চিন্তা করছি- যারা দু’হাতে ঘুষ নিচ্ছেন; তাদের পায়ে যদি মশা বসে খুবই ভয় পাবেন। কারণ তারা ঘুষের টাকাগুলো উপভোগ করার সুযোগ পাবেন না। দুনিয়ার প্রতি তাদের কতো লোভ!
এটাও দুঃখজনক ব্যাপার যে, কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিকও কারাগারে গেলেন। কারাগার কর্মকর্তার কারাবাস; দুঃখজনক তো অবশ্যই। প্রত্যাশা করি, কারাগারে তাকে যেন এডিস মশা কামড় না দেয়। নিরাপদে চলুক আবদুস সবুর মণ্ডলের ফেরি সার্ভিসটাও। নড়াইলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষের বিনা চিকিৎসা মৃত্যুর জন্য ফেরি আটকে রাখাকেই দায়ী করা হচ্ছে। সেখানে ফেরি কর্মকর্তা কী ফেরি ডুবির তালিকায় আছে নাকি এডিস মশার তালিকায় আছে আমার ধারণা নেই।
তবে এডিস মশার তালিকায় আছেন ভেবে অযথা পালানো হবে বোকামী। দেখবেন লাগেজে করে মশাও ভ্রমণ করছে নিজের সাথে। এডিস অভিজাত মশা বৈকি! সাধারণ মশার মতো ময়লা পানিতে এডিসের জন্ম হয়নি। পরিস্কার পানিতে জন্ম।
এডিস মশা কিংবা যে কোন অজুহাতে আমি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত। কারণ এডিস মশার তালিকায় না থাকলেও আজরাইলের তালিকায় যে আমার নাম আছে তা আমি ১০০% নিশ্চিত। কাজেই প্রস্তুতিটাই যথাযথ বলে মনে করছি এখন।
মশা নিধনের ঔষধ ক্রয়ে দূর্নীতি করুক কিংবা সব টাকা মেরে দিয়ে খালি ধোঁয়া স্প্রে করুক; এসব বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই।

মোয়াজ্জেম হোসাইন সাকিল, সাংবাদিক ও তথ্য-প্রযুক্তিবিদ।