শহিদুল ইসলাম, উখিয়া (কক্সবাজার) :

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন আইসির ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল। শনিবার সকাল ১০ টায় উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন এবং নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেন তারা। উখিয়া থানার ওসি মোঃ আবুল মনছুর জানান, রোহিঙ্গাদের নিকট থেকে আইসিসি প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গারা কেন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছে জানতে চাইলে রোহিঙ্গারা জানান, ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্টের পর থেকে মিয়ানমার সেনা বাহিনী বিজিপি, রাখাইন সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গাদের উপর চরম নির্যাতন চালায়। এমনকি মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের গণহত্যা, ধর্ষন, গুম, বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে তাদের পিতা-মাতা, শিশু ও আত্মীয় স্বজনদেরকে গুলি করে হত্যা করেছে। কুতুপালং শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শেষে আইসিসি প্রতিনিধি দল বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্র“ কোনার পাড়ায় শূন্য রেখায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। এ সময় রোহিঙ্গাদের নেতা দিল মোহাম্মদের কাছে আইসিসি প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের বর্ণনার কথা শুনতে চাইলে দিল মোহাম্মদ জানান, মিয়ানমার তাদের উপর চরম অত্যাচার নির্যাতন নিপীড়ন, গণহত্যা, বাড়ী ঘরে লুটপাট শিশুদের আগুনে পুড়ে মেরেছে। আইসিসি প্রতিনিধি দলকে উদ্দেশ্য করে ওই রোহিঙ্গা নেতা বলেন, এখানে আর থাকতে চাইনা। নিজেদের নাগরিকত্ব নিয়ে মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে নিজ বাড়িতে বসবাস করতে চাই। এ সময় আইসিসির প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গাদের কথা শুনে আবেগ আফ্লুত হয়ে পড়েন। শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে কক্সবাজার পৌঁছান তারা। ওখান থেকে সকালে সরাসরি গাড়ি যোগে কুতুপালং ১৭ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান প্রতিনিধি দল। ওখানে ক্যাম্প ইনচার্জ ওবাইদুল্লাহর কার্যালয়ে দেড় ঘন্টা ব্যাপী আলোচনা করেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়েছে কিনা এ বিষয়ে দেশটির জেনারেলদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এর প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন এবং রোহিঙ্গা নরনারীদের সাথে কথা বলেন। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আইসিসির ডেপুটি প্রসিকিউটর জেমস স্টুয়াটের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও তাদের সঙ্গে কথা বলতে কক্সবাজারের উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কোনার পাড়া শূন্য রেখায় যান। এদিকে আইসিসি প্রতিনিধি দলের কক্সবাজার সফর নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন কালে উখিয়া থানার ওসি মোঃ আবুল মনছুর, ক্যাম্প ইনচার্জ ওবাইদুল্লাহ সহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সঙ্গে ছিলেন।