শাহেদ মিজান, সিবিএন:

মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়ার চালিয়াতলীতে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর তরুণী গণধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন ওই এলাকার মেম্বার লিয়াকত আলী ও মহিলা মেম্মবার খদিজা বেগম। তারা দুইজনই মামলার এজাহার নামীয় আসামী হয়েছেন। কিন্তু ধামাচাপা চেষ্টার মূলহোতা মাতারবাড়ি সড়কের লাইনম্যান রশিদ এখনো গ্রেফতার হয়নি। এমনকি মামলা আাসামী হয়নি। এই নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। তাই নানা প্রতিক্রিয়া চলছে সর্বত্র।

বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, চাঞ্চল্যকর এই গণধর্ষণের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মূল ভূমিকায় নেমেছিল লাইম্যান রশিদ। তিনি ধর্ষকদের পক্ষ হয়ে ধামাচাপার মিশন নিয়ে নেমেছিলেন। খোদ গ্রেফতার মেম্বার লিয়াকত আলীও বিষয়টি এই প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেছিলেন। তিনি জানিয়ে ছিলেন- ধর্ষকদের বাঁচাতে দৌড়ঝাঁপ করেছিল লাইনম্যান লিয়াকত।

তথ্য মতে, ধর্ষকেরা অধিকাংশই সিএনজি চালক। আর রশিদ হচ্ছে তাদের লাইনম্যান। অন্যদিকে রশিদের বাড়ি মাতারবাড়ি। সে সূত্রে ধর্ষিতার কথিত মা শামীমার পূর্ব পরিচিত ছিলো এই রশিদ। সে কারণে ধর্ষকেরা ঘটনাটি মীমাংসের জন্য রশিদের শরণাপন্ন হয়েছিল। সেই সাথে ছিলো মোটা অংকের টাকা লেনদেন। দুই-ই মিলিয়ে রশিদ ঘটনাটি মীমাংসার জন্য ধর্ষণের শিকার মেয়েটির কথিত মা মাতারবাড়ির মেম্বার শামীমা, চালিয়াতলীর মেম্বার লিয়াকত আলী এবং খদিজা বেগমের শরণাপন্ন হন। রশিদ মীমাংসার জন্য নানা কৌশলে সবাইকে বশেও এনেছিলেন। রশিদের মাধ্যমে ম্যানেজ হয়ে মেম্বার লিয়াকত আলী ও মহিলার মেম্বার শামীমা ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চেষ্টা শুরু করেন। সে মোতাবেক মেম্বার লিয়াকত আলীর অফিসে দুই দফা বিচার বৈঠক হয়। বৈঠকে মীমাংসা প্রায় হয়েছিল। কিন্ত জরিমানার অংক নিয়ে মীমাংসা চূড়ান্ত হয়নি। তবে পরে মেম্বার শামীমার চাহিদা মতো জরিমানা দিতে চেষ্টা চলছিল। এর মধ্যে শুক্রবার গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে ভেস্তে যায় তাদের ধামাচাপার মিশন।

এদিকে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় মামলায় মেম্বার লিয়াকত আলী ও খদিজা বেগম আসামী এবং গ্রেফতার হলেও রশিদ এবং মাতারবাড়ির মেম্বার শামীমা আসামী না হওয়ায় অনেকে বিষয়টি রহস্যজনক মনে করছে। সাধারণ মানুষ মনে করছে, একদিকে ‘মা’ পরিচয় দিয়ে বেঁচে গেছেন মেম্বার শামীমা। অন্যদিকে শামীমার সাথে আঁতাত করে লাইনম্যান রশিদও পার পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ধামাচাপার চেষ্টার মূলহোতা এই দুইজনই। কথিত আছে, মীমাংসার প্রথম প্রস্তাব দিয়েছিলেন মেম্বার শামীমা এবং তার জন্য দেনদরবার করেছিলো লাইনম্যান রশিদ। অভিযোগ উঠেছে, এখন শামীমা ও রশিদের যোগসাজস রয়েছে। শামীমার কারণেই লাইনম্যান রশিদ পার পেয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

অভিযুক্ত দুই মেম্বার আসামী ও গ্রেফতার হলেও মেম্বার শামীমা ও লাইনম্যান রশিদ পার পেয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে সেখানে। রশিদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্পষ্ট থাকায় তাকে গ্রেফাতার করার দাবি উঠেছে সর্বমহলে।

এ ব্যাপারে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রভাষ চন্দ্র ধর বলেন, ‘ভিকটিম ও তার পালিত মা শামীমার জবানবন্দির ভিত্তিতে মামলার এজাহার হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতও রয়েছে। তাই তদন্তে আর কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।’

তথ্য মতে, গত ৭ জুলাই রাতে ওই তরুণী চট্টগ্রামের কর্মস্থল থেকে নানার বাড়ি মাতারবাড়ি আসার পথে তাকে পাহাড়ে তুলে ধর্ষণ করে নলবিলার আমির সালাম, এনিয়া, সিএনজি চালক আদালত খাঁ ও ওসমান গণিসহ ১৪জন। কিন্তু এই ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে মিশন নিয়ে নামে মাতারবাড়ির সড়কের সিএনজি লাইনম্যান রশিদ ও স্থানীয় মেম্বার লিয়াকত আলীসহ একটি চক্র। তবে শুক্রবার ঘটনাটির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিকালে মাতারবাড়ি থেকে ধর্ষিতাকে উদ্ধার করে।