সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
উন্নয়ন সংগঠন কোস্ট ট্রাস্ট্রের সহযোগিতায় কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ) আয়োজিত স্থানীয়করণ বিষয়ক ২৩ মে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় স্থানীয় এনজিও নেতৃবৃন্দ রোহিঙ্গা ত্রাণকাজের মধ্য দিয়ে জেলার সার্বিক উন্নয়ন ও স্থানীয়করণ প্রতিষ্ঠার দাবি তুলে ধরেন বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ ও আন্তর্জাতিক এনজিওদের কাছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পূর্ব পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ের কাজে বিদেশি সংস্থার সরাসরি অংশগ্রহন গুটিয়ে আনা এবং স্থানীয়করনের বহুবার্ষিক পরিকল্পনার উপর তারা গুরুত্ব দেন। কর্মশালায় ৪৭টি স্থানীয় ও জাতীয় সংগঠনের ৮২ জন কর্মী অংশ নেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম (এনডিসি) এই কর্মশালা উদ্বোধন করেন এবং পালসের নির্বাহী পরিচালক ও সিসিএনএফের সহ-সভাপ্রধান আবু মোরশেদ চৌধুরী এতে সভাপতিত্ব করেন।

কর্মশালা সঞ্চালনা করেন কোস্টের নির্বাহি পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী।

মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন মুক্তি কক্সবাজারের বিমল চন্দ্র দে সরকার, জাগো নারীর শিউলি শর্মা, হেল্প উখিয়ার আবুল কাশেম, গণস্বাস্থ্যের নাবিলা তারান্নুম খান এবং কোস্টের বরকত উল্লাহ মারুফ।

কর্মশালার সমাপনী অধিবেশন সঞ্চালনা করেন ব্রাকের সূবর্ণ বড়ুয়া। সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন কোস্টের তাহমিনা আফরোজ টুম্পা, অগ্রযাত্রার নীলিমা আখতার চৌধুরী, মুক্তি কক্সবাজারের করবী বড়ুয়া, গণস্বাস্থ্যের নাবিলা তারান্নুম খান, শার্পভি-র নুরুন্নাহার এবং এনজিও প্লাটফরমের মুনমুন গুলশান ও ডমিনিকা আরসেনিউক।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা সমর্থিত কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে এ কর্মশালায় আলোচনা করা হয়, যার মধ্যে অংশীদারিত্বের নীতিমালা, চার্টার ফর চেঞ্জ, গ্রান্ড বারগেইন এবং উন্নয়ন কার্যকারিতার প্রক্রিয়া অন্যতম। এসব সর্বস্বীকৃত আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ায় স্থানীয় সুশীল সমাজ সংগঠন ও এনজিওসমূহের অনিবার্য ভূমিকা ও নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার কথা গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে। কর্মশালায় অংশগ্রহনকারীরা দলীয় কাজ অনুশীলনের মাধ্যমে কিভাবে রোহিঙ্গা ত্রাণ কর্মসূচিতে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ সামগ্রিক সমাজ এপ্রোচ ও স্থানীয়করণ প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ও ধারাবাহিক পদক্ষেপ গ্রহন করবে তা বিবেচনার জন্য চিহ্নিত করেন। এতে বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ, দাতা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক এনজিওসমূহের জন্য স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার জনাব মোহাম্মদ আবুল কালাম, এনডিসি এই কর্মশালা আয়োজন ও স্থানীয়করণের জন্য সুপারিশকৃত রোডম্যাপের প্রশংসা করেন। বিশেষ করে এই রোডম্যাপে উল্লিখিত আইএসসিজিতে বাংলা ভাষা ব্যবহার, স্থানীয় কর্মীদের মধ্যে কারিগরী জ্ঞান ও দক্ষতা হস্তান্তর করার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে বিদেশি বিশেষজ্ঞ নির্ভরতা কমিয়ে আনা, রোহিঙ্গা কর্মীসূচিতে নিযুক্ত কর্মীদের একটি অভিন্ন বেতন কাঠামো এবং ক্রমাগতভাবে রোহিঙ্গা কর্মসূচিতে স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় সংগঠনের যুক্ত হওয়া ও নেতৃত্ব দেবার বিষয়গুলোর প্রশংসা করেন তিনি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা রেসপন্সে অস্থিতিশীল সহায়তা তহবিলের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের উচ্চ বেতন কাঠামো কতদিন টিকবে সে বিষয়ে সন্দেহ আছে।

পালসের আবু মোরশেদ চৌধুরী এ বিষয়ে খসড়া রোডম্যাপ উপস্থাপনের সময় বলেন, জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ ও আন্তর্জাতিক এনজিওসমূহকে মাঠ পর্যায়ের কাজ থেকে ধীরে ধীরে সরে আসতে হবে এবং সহায়তা তহবিলের পূর্ণ স্বচ্ছতা ও জনগণের অংশগ্রহনের পাশাপাশি এর পরিচালন ব্যয় হ্রাস নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, কক্সবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সুযোগ বৃদ্ধি ও স্থায়িত্বশীল মানবিক সহায়তার জন্য একটি স্থায়িত্বশীল বহুবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।

মুক্তি কক্সবাজারের বিমল চন্দ্র দে সরকার বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো স্থানীয় এনজিওর সাথে প্রতিযোগিতা করে স্থানীয় তহবিলের জন্য আবেদন করবে- এটা কাম্য নয়। ইতিমধ্যে মাত্র ৫.২৫% স্থানীয় সংগঠনের সাথে তাদের অংশীদারিত্ব সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় কক্সবাজারে সুশীল সমাজ সংগঠনের বিকাশ বেশ কম। কক্সবাজারে মানবাধিকার সংবেদনশীল একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বৃহত্তর সুশীল সমাজ গড়ে তোলা প্রয়োজন। এজন্য জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের উচিত স্থানীয় সুশীল সমাজ সংগঠন ও এনজিওদের আরো বেশি সহায়তা প্রদান করা, এমনকি তাদের যদি এনজিও ব্যুরোর নিবন্ধন নাও থাকে।

কোস্ট ট্রাস্টের রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শতকরা ৫৫ ভাগই কিশোর-কিশোরী। তাদেরকে শিক্ষা ও জীবিকা বিষয়ক প্রশিক্ষণে নিযুক্ত করা প্রয়োজন। তা না হলে তারা জঙ্গি, মাদক ব্যবসায়ী বা পাচারকারীদের খপ্পড়ে পড়ে যেতে পারে।

গণস্বাস্থ্যের নাবিলা তারান্নুম খান বলেন, স্থানীয় কর্মীরাই মানবিক সহায়তা কাজের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিশ্রমসাপেক্ষ কাজগুলো করে থাকেন। অথচ, বেতন ও সুবিধার ক্ষেত্রে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের তুলনায় তারা বড় ধরনের বৈষম্যের শিকার।