বার্তা পরিবেশক:
কক্সবাজারের রামুর চাকমারকুল আল-জামিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসায় সৃষ্ট বিরোধ নিয়ে চাকমারকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদারের বিভ্রান্তিকর বক্তব্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

১৩ মে সোমবার অনলাইন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চেয়ারম্যানের দেয়া বক্তব্যে হতবাক ও বিস্মিত হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। একই সাথে অনিয়ম-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত, অযোগ্য ও ব্যাপক বিতর্কিত মাওলানা সিরাজকে শুধুমাত্র ‘আপন ভাই’ হওয়ার কারনে মিথ্যা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে মাদ্রাসার ‘মুহতামিম’ পদে অধিষ্টিত রাখার জন্য একজন চেয়ারম্যানের এমন নির্লজ্জ অবস্থানে লজ্জিত হয়ে পড়েছেন ধর্মপ্রান এলাকাবাসী। অথচ মাদ্রাসা পরিচালনায় মাওলানা সিরাজের ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় ধর্মপ্রান মানুষ ক্ষোভে ফুঁসে উঠলে পরিস্থিতি সামাল দিতে চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার ও তার ভাই মাওলানা সিরাজ নিজেরাই মাদ্রাসার দাতা সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে গত ২৭ এপ্রিল দাতা সদস্য জালাল আহমদের বাড়িতে বৈঠকে বসেন।

ওই বৈঠকে মুহতামিমের অনিয়ম-দুর্নীতি ও মাদ্রাসা পরিচালনায় শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সহ কয়েকজন শিক্ষকের অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া ও মাদ্রাসা পরিচালনায় ব্যর্থতার বিষয়টি প্রমানিত হয়। ফলে মাদ্রাসাটি পরিচালনায় সংস্কারের জন্য মাদ্রাসার চার জন শিক্ষকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত, ২৩ সদস্য বিশিষ্ট মজলিসে শুরা পুর্নগঠন, ৭ সদস্য বিশিষ্ট মজলিসে এলমি পুর্নগঠন, ৭ সদস্য বিশিষ্ট মজলিসে আমেলা পুর্নগঠন এবং ৩ সদস্য বিশিষ্ট অডিট কমিটি পুর্নগঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। এছাড়া বৈঠকে মাদ্রাসার প্রধান পৃষ্ঠপোষকের পদ থেকে আল্লামা শফি হুজুরকে বাদ দেয়া, মাদ্রাসা তহবিলের ৫০ লাখ টাকার ব্যয়, ইচ্ছামতো রেজুলেশন তৈরী, মুহতামিম সিরাজের আয়-ব্যয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার এক পর্যায়ে মুহতামিম মাওলানা সিরাজ এ বিষয়ে ক্ষমা প্রার্থণা করেন এবং নিজেকে সংশোধন করবেন বলে অবহিত করেন। এসময় মাওলানা আব্দুর রাজ্জাককে সহকারি মোহতামিম হিসেবে দায়িত্ব প্রদান এবং অভিযুক্ত বিষয়ে মুহতামিম নিজেকে সংশোধন করে নিবেন বলে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। একই সাথে গৃহীত সিদ্ধান্ত যথাযথ নিয়মে বাস্তবায়ন করবে মর্মে মোতওয়াল্লি গ্রুপকে দুই দিনের মধ্যে লিখিতভাবে অবহিত করে ২০ রমজানের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য মোহতামিমকে পরামর্শ প্রদান করেন। অন্যথায় মোতয়াল্লি গ্রুপ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানানো হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত থেকে নিজের স্বাক্ষরে সিদ্ধান্তের কপি গ্রহন করেন মুহতামিম। এসব সিদ্ধান্ত ও বৈঠকের যাবতীয় তথ্য প্রমান সংরক্ষিত রয়েছে। কিন্তু মুহতামিম মাওলানা সিরাজ মাদ্রাসার পদবী আটকে রেখে ধারাবাহিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতি চালিয়ে নিতে তার নিজের ভাই চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদারের যোগসাজসে বৈঠকের সিদ্ধান্ত ও পুরো বৈঠকের এখতিয়ার নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। তারা বৈঠক এবং বৈঠকের সিদ্ধান্তও অস্বীকার করে বসেন। এর অংশ হিসেবে একেক সময় একেক বক্তব্য প্রকাশ করে বিভ্রান্তি তৈরী করে অস্থিতীতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পায়ঁতারা করছেন। চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার ও মুহতামিম মাওলানা সিরাজের দূরবীসন্ধি মতে গত ৩ মে তারিখে মাদ্রাসার প্যাডে ২০ রমজানের মধ্যে মজলিসে শুরার বৈঠক ডাকা সম্ভব নয় বলে চিঠি দেন নিজের ভাই চাকমারকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদারকে। দাতা ও মোতয়াল্লি গ্রুপকে কিছুই অবহিত না করে মাদ্রাসায় এখতিয়ার বর্হিভূত কার্যক্রম চলমান রাখায় দাতা ও মোতয়াল্লি গ্রুপের সদস্যরা ৫ মে শিক্ষকদের সাথে বৈঠক করেন মাদ্রাসা কার্যালয়ে। সেখানে মুহতামিম মাওলানা সিরাজুল ইসলামকে সাময়িক অব্যহতি দিয়ে সহকারি মুহতামিম মাওলানা আবদুর রাজ্জাককে ভারপ্রাপ্ত মুহতামিমের দায়িত্ব দেয়া হয়। ভারপ্রাপ্ত মোহতামিম আবদুর রাজ্জাক ওমরা পালনে গত ৮ মে সৌদি আরব যাওয়ার সুযোগে ৭ মে পূর্বের তারিখ দেখিয়ে গত ১০ মে আবদুর রাজ্জাককে অব্যহতি দেয়া হয়েছে মর্মে একটি চিঠি অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন। যা করার কোন এখতিয়ারই নেই মাওলানা সিরাজের। ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় চেয়ারম্যান নিজেও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ভাইয়ের (মাওলানা সিরাজ) পক্ষে অবস্থান নিয়ে অনলাইন গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য সম্বলিত বক্তব্য প্রকাশ করেন। যা দেখে মাদ্রাসার দাতা সদস্য, মোতওয়াল্লিগণ ও ধর্মপ্রাণ এলাকাবাসী হতবাক, বিস্মিত ও লজ্জিত হয়েছেন। দুর্নীতিবাজ ভাইকে মাদ্রাসার ‘মুহতামিম’ এর পদে রাখতে চেয়ারম্যানের এমন অবস্থানে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।