সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁও

রমজানে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন।
এ লক্ষ্যে বাজার তদারকিতে ৭ সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সংস্থাগুলো হচ্ছে- র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), কৃষি বিপণন অধিদফতর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বাজার মনিটরিং সেল ও পুলিশ বাহিনী। তারা খুচরা বাজার থেকে শুরু করে পাইকারি ও মোকামে অভিযান চালাবে, যাতে রমজানকে পুঁজি করে কারসাজির মাধ্যমে কেউ অতি মুনাফা লুটে নিতে না পারে।
তবে নানা পদক্ষেপের মধ্যেও ভোক্তা পর্যায়ে শঙ্কা কাটছে না। ভোক্তারা বলছেন, প্রতিবছরই একটি চক্র কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ভোক্তাদের পকেট কাটে।
একাধিক ক্রেতা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, ডাল ও খেজুরের দাম স্থিতিশীল। তবে মাছ থেকে শুরু করে গরুর মাংস, সব ধরনের মুরগি, ডিম ও সবজিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়তি। মনে হচ্ছে এবারও রমজানে পণ্যের দাম বাড়বে।
শনিবার(২০ এপ্রিল) কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও বাজার ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতাদের আনাগোনা বেড়েছে। কারণ সামনে রমজান মাস। তার আগে রবিবার শবে বরাত। ফলে বেড়ে গেছে নিত্যপণ্যের কেনাবেচা। অবশ্যই বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ প্রচুর। আমদানিও চাহিদার তুলনায় বেশি। তারপরেও রোজা আর শবে বরাতকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা ফায়দা লোটার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
তবে আসন্ন রমজান মাসকে সামনে রেখে কী পরিমাণ পণ্য মজুদ করা হয়েছে বা বাজারে তোলা হবে কৌশলগত কারণেই তা আগেভাগে জানা যায়নি।
রমজান মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এ সময়ে কিছু নিত্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। রোজার সময় ব্যবসায়ীদের একটি শ্রেণির লুটেরা মনোভাবের কারণে যুক্তিগ্রাহ্য কারণ না থাকলেও বেড়ে যায় নিত্যপণ্যের দাম। ছোলা, চিনি, তেল, খেজুর, ডালসহ রমজান মাসে প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর চাহিদার চেয়ে বেশি আমদানি করা হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
তবে বাজারে নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও মুনাফাখোরদের অপতৎপরতাই মূল্যবৃদ্ধির কারণ ঘটায়। চিনি, আদা, পেঁয়াজ, খেজুরসহ অত্যাবশ্যক নিত্যপণ্যের দাম এখনও স্থিতিশীল।
ক্রেতাদের মন্তব্য, রমজানকে কেন্দ্র করে এসব পণ্যের কৃত্রিম সংকট যেন দুর্বিষহ হয়ে না ওঠে সেজন্য এখনই সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এবার আগে থেকেই তৎপর রয়েছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বাজারে পেঁয়াজ, ছোলা, ডাল, রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনও পণ্যের মজুদ ও সরবরাহে ঘাটতি নেই। ক্রেতাদের আশঙ্কা, রমজান মাসকে কেন্দ্র করে এসবের দাম বেড়ে যেতে পারে।
মূল্যবৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, বিভিন্নভাবে একটি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ হয়ে থাকে। যেসব কারণে মূল্য নির্ধারিত হয়, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম চাহিদা ও জোগানে সমতা।
পাইকারি ব্যবসায়ীদের মতে, এটাই পণ্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। অতিরিক্ত আমদানি নির্ভর পণ্যের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।
সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ, রমজানের আগমুহূর্তে টিসিবি তড়িঘড়ি বাজারে কিছু পণ্য নিয়ে আসে। কিন্তু তা মহাসাগরে এক ফোঁটা পানি দেয়ার মতো মনে হয়। এর মাধ্যমে নিত্যপণ্যের বাজারে কোনও প্রভাব পড়ে না।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বাজারের সামনে মূল্য তালিকা টাঙিয়ে রাখার উদ্যোগ নেয়া হলেও কিন্তু সরেজমিন ঈদগাঁও বাজার ঘুরে কোথাও মূল্য তালিকা দেখা যায়নি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি খুচরা ৩৫ টাকা আর ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ টাকায়। দেশি রসুন খুচরা প্রতি কেজি ৯০ টাকা আর চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি। আদা পাইকারি প্রতি কেজি ৮০ টাকা কেজি আর খুচরা বাজারে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মসুরসহ অন্যান্য ডালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
প্রতি কেজি ছোলা ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, খেসারি প্রতি কেজি ৫৫ টাকা, মাসকলাই প্রতি কেজিতে ১০-১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১২০ টাকা ও বেসন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।