শাহিদ মোস্তফা শাহিদ,কক্সবাজার সদর :

উদ্ধারের তিনদিন পর সন্ধান মিলেছে ইসলামাবাদ থেকে উদ্ধার হওয়া এসিডদগ্ধ যুবকের লাশের ! সে বর্নিত ইউনিয়নের পুর্ব ইউছুপের খীল এলাকার আমির হোসেনের ছেলে বেলাল উদ্দীন (৩০) বলে সিবিএনকে নিশ্চিত করেছেন ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আসাদুজ্জামান।

তিনি জানান, সেদিন নিহত বেলাল উদ্দীনের অগ্নিদগ্ধ শরীর থেকে হাতের একটি বৃদ্ধ আঙ্গুলী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।সে আঙ্গুলটি ঘটনাস্থল থেকে খুঁজে পেয়ে পুলিশ ও পিবিআইকে দেন সে সময় সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া স্থানীয় এক সংবাদকর্মী।ঐ আঙ্গুল নিয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে যায় পুলিশ।ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক আসাদুজ্জামান এবং মামলা তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোহাম্মদ আবু ছিদ্দিক টানা ৩ দিন তদন্তের পর তার পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হন। উদ্ধারের পরদিন ময়না তদন্ত শেষে আঞ্জুমনে আল ইত্তেহাদের মাধ্যমে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে তাকে।
সূত্রে জানা যায়, অজ্ঞাত নামা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই সনজিত চন্দ্র নাথ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।ঐ মামলার সূত্র ধরে তদন্ত কেন্দ্রের এসআই মোহাম্মদ আবু ছিদ্দিক ঘটনার ক্লো উদঘাটনের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালান। তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে না পারায় সেদিন উদ্ধার করা আলামত নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করতে পুলিশ তৎপরতা বাড়িয়েছিল।সে সূত্র ধরে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে গিয়ে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে সদা তৎপর রয়েছে পুলিশ।

উল্লেখ্য,গত ২৫ ফেব্রুয়ারী দুপুরে কক্সবাজার সদরের ইসলামাবাদ ইউনিয়নের হরিপুরের পশ্চিমে ৬নং ওয়ার্ড পুর্ব ইউছুপের খীল এলাকার খুইল্যা মিয়া হাজীর পুরাতন বসত ভিটার সংলগ্ন একটি নির্জন পাহাড় থেকে এসিডদগ্ধ অজ্ঞাত নামা এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ ও পিবিআই। সেদিন দুপুর ১ টার দিকে স্থানীয় লোকজন মারফত সংবাদ পেয়ে ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মোঃ আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে এসআই সনজিত চন্দ্র নাথ,শাহাজ উদ্দিন, এএসআই লিটনুর রহমান জয়সহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। পরে লাশের বিবস্ত্র ও শরীরে এসিড দগ্ধের চিহ্ন দেখতে পেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন তারা।খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে সদর-রামু সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আদিবুল ইসলাম,থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দীন খন্দকার, পুলিশ পরিদর্শক আরিফুল ইসলাম। তারা এসেও লাশের অবস্থা লোমহর্ষক দেখে খবর দেওয়া হয় পিবিআইকে।বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন কক্সবাজার অফিসের পুলিশ পরিদর্শক পুলক বড়ুয়ার নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক নাজমুল হক,পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আবু জাফরসহ সঙ্গীয় পিবিআইয়ের একদল ফোর্স এসে লাশটি উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল থেকে একটি বোরকা,বোতলের ডাকনা, নগদ ৩শ টাকা, লাশের আঙ্গুলের দুটি অংশসহ পুড়ে যাওয়া কয়েকটি চামড়া,একটি জুতা,এসিড ব্যবহারের একটি বোতল উদ্ধার করা হয়।

নিহত বেলাল উদ্দীনের ভাই শাহজাহান মিয়া জানান, তার ভাই বেলাল মানসিক ভারসাম্যহীন রোগে আক্রান্ত ছিল।ঘর থেকে বের হলে অনেকদিন পর পর বাসায় আসত।তার কোন শত্রু থাকবে বলে মনে হচ্ছে না। ব্যক্তিগত জীবনে সে এক স্ত্রী ও ২ সন্তানের জনক। মানসিক ভারসাম্য হীন হয়ে পড়লে স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিয়ে পিত্রালয়ে চলে যায়। সে থেকে তার স্ত্রীকে ফিরে আনতে তাদের বাসায় যেত বেলাল। স্ত্রীর পরিবার পুনরায় মেয়েকে তার হাতে তুলে দিবে না বলে জানালে মাঝেমধ্যে বেলাল তাদের উপর ক্ষিপ্ত মেজাজে কথা বলত বলে জানান ভাই শাহজাহান।সেই সূত্র ধরে কোন তাদের স্বজনরা পরিকল্পিত হত্যা করেছে কি না বুঝে উঠতে পারছে না।
শাহাজান আরো বলেন,ব্যবসায়ীক কাজে সে বাসায় নেই।বাসায় ফিরে এসে স্বজন ও এলাকার সর্দার মাতব্বরের সাথে আলাপ আলোচনা করে লাশ উত্তোলন করতে আইনের কাছে যাবেন।স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন নিহত বেলালের বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে ২শ গজের মধ্যে। সে প্রায় সময় ঘটনাস্থলের পরিত্যক্ত সড়ক দিয়ে চলাচল করত। হয়ত সেদিনও চলাচল করতে গিয়ে পুর্বে থেকে উৎপেতে থাকা অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারীরা পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করতে পারে বলে ধারণা করছেন এলাকাবাসী।