বাংলা ট্রিবিউন:
চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কমান্ডো অভিযানে নিহত ‘বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী’ ব্যক্তি (মাহাদী)-এর আসল নাম মো. পলাশ আহমেদ বলে জানিয়েছে র‌্যাব। পরিচয় নিশ্চিত করা গেলেও তার সঙ্গে থাকা পিস্তলটি আসল নাকি খেলনা তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। তবে এই ঘটনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় পৃথক তদন্ত কমিটি করেছে। এই কমিটি পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে বলে জানিয়েছেন বিমান সচিব মহীবুল হক।

সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সচিব মহীবুল হক, সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এম নাঈম হাসান।

এসময় বিমান সচিব মহীবুল হক বলেন, ‘সেটা অস্ত্র কিনা আমরা ওয়াকিবহাল না। খেলনা পিস্তল কিনা… যেকোনও কিছু হতে পারে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে এটা নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারবো।’

সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান এম নাঈম হাসান বলেন, ‘‘বিমান থেকে সবাই বেরিয়ে যাওয়ার পর ‘সো কলড’ হাইজ্যাকার বিমানে একাই ছিল। আমরা সেদিন অনেক কিছুই শুনেছি। তদন্ত প্রতিবেদনে পুরো বিষয়টি বিস্তারিত জানা যাবে। এয়ারক্রাফটে গুলিবিনিময় হলে তার চিহ্ন থাকতো। আমরা কোনও চিহ্ন কোথাও পাইনি। খেলনা পিস্তলেও শব্দ হয়। যাত্রীরা শব্দ শোনার কথা বলেছেন। তদন্ত না করে পিস্তল আসল নাকি নকল বলা যাবে না।’’

তবে সোমবার র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, র‌্যাবের ডাটাবেজের তথ্য অনুযায়ী ওই যুবকের নাম মো. পলাশ আহমেদ। তার সঙ্গে খেলনা পিস্তল ছিলো।

এদিকে, রবিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে এই ঘটনায় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাঈম হাসান । তিনি বলেন, ‘তথাকথিত হাইজাকারের কাছে একটি পিস্তল ছিলো এবং শরীরে বোমাসদৃশ্য তার জড়ানো ছিলে।’

অভিযান শেষে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান বলেছেন, ‘অত্যন্ত সফল একটা অভিযান পরিচালনার মধ্য দিয়ে মাত্র ৮ মিনিটের মধ্যে এই ছিনতাইচেষ্টার অবসান ঘটে। ছিনতাইকারীর বয়স আনুমানিক ২৫ থেকে ২৬ বছর। ছিনতাইকারীকে নিবৃত করার জন্য আমাদের কমান্ডোরা প্রথমে তাকে সারেন্ডার করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল। সে আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টা করলে তার ওপর স্বাভাবিক অ্যাকশন যেটা, সেটা নেওয়া হয়েছে এবং আমাদের সঙ্গে গোলাগুলিতে ছিনতাইকারী প্রথমে আহত ও পরবর্তীতে মারা গেছে। তার কাছে একটি অস্ত্র ছিল। একটা পিস্তল। এছাড়া অন্য কিছু এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি। সে যাত্রীদের কোনও ক্ষতি করার চেষ্টা করেনি।’

তবে রবিবার রাতেই চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মাহবুবর রহমান জানিয়েছিলেন, কথিত ছিনতাইকারীর কাছে যে অস্ত্রটি পাওয়া গেছে সেটি একটি ‘খেলনা পিস্তল’। কমান্ডো অভিযানে নিহত হওয়ার পরে তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রটি পরীক্ষা করে একথা জানান তিনি।

এদিকে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের বিমান ছিনতাইয়ের কবলে পড়ার ঘটনা সংসদকে অবহিত করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদের বৈঠকে মাগরিবের নামাজের বিরতির পরে প্রতিমন্ত্রী ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি সংসদকে জানান। সংসদে ছিনতাইকারীকে “যাত্রীবেশে অস্ত্রধারী” বলে উল্লেখ করেন মাহবুব আলী।

এসময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিমানের যাত্রীবেশে অস্ত্রধারী আকস্মিক যাত্রীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, বিমান উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি ও চিৎকার করতে থাকে। বিমানের কর্তব্যরত ক্যাপ্টেন অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা, পেশাদারিত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে দুষ্কৃতিকারীকে কথপোকথনে ব্যস্ত রেখে কালক্ষেপণ করেন। এর মধ্যেই বিমানের ক্রুদের সহায়তায় সব যাত্রীকে নিরাপদে বের করে আনা হয়। কমান্ডোরা বিমানের ভেতরে প্রবেশ করেন এবং ঝটিকা আক্রমণ করে দুষ্কৃতিকারীকে নিষ্ক্রিয় করেন। একপর্যায়ে কমান্ডো অভিযানে গুলিতে ছিনতাইকারী আহত হয়, পরে মৃত্যুবরণ করে।’

প্রসঙ্গত, রবিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৫টা ৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-১৪৭ ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। বলা হয়, ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরই বিমানটি ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে। পরে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে ওই ফ্লাইটটি জরুরি অবতরণ করে। ফ্লাইটে ১৩৪ জন যাত্রী ও ১৪ জন ক্রু ছিলেন। পরে কমান্ডো অভিযানে সন্দেহভাজন বিমান ‘ছিনতাইকারী’ মাহাদী নিহত হয়। বিমানে থাকা যাত্রীরা অভিযানের আগেই নিরাপদে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন।