ডেস্ক নিউজ:

রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৬৫টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ। বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭টার দিকে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘আগুন পুরোপুরি নেভেনি। কিছু কিছু জায়গায় এখনও জ্বলছে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আছে। বিভিন্ন ক্যামিক্যাল, বডি-স্প্রে, প্লাস্টিক দ্রব্য এসবের কারণে আগুন ছড়িয়েছে। আর সরু রাস্তার কারণে আগুন নেভানোর কাজে সমস্যা হয়েছে।’ লাশের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এর আগে ‌ভোর সোয়া ৫টার দিকে ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, চকবাজারে একাধিক ভবনে আগুন লাগার ঘটনায় ৩৫টি ব্যাগে করে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কোনও কোনও ব্যাগে একাধিক লাশও আছে।

এদিকে আগুন পুরোপুরি নেভাতে বিমান বাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার দিয়ে পানি ছেটানোর কথা জানিয়েছেন এয়ার কমোডর মো. জাহিদ হোসেন। বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সোয়া ৪টার দিকে তিনি এই তথ্য জানান।

এর আগে, বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার থানার চুড়ি হাট্টা শাহী মসজিদের সামনে একটি বহুতল ভবনে আগুন লেগে তা আশেপাশের ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ৩২টি ইউনিট চারঘণ্টার মতো কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়। এই ঘটনায় দগ্ধসহ আহত কমপক্ষে অর্ধশত ব্যক্তিকে ইতোমধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

আরও জানা যায়, যে ভবনটিতে প্রথমে আগুন লেগেছে সেটি সাত তলা। নাম- ওয়াহেদ ম্যানশন। ভবনটির নিচতলায় কেমিক্যাল গোডাউন এবং প্লাস্টিক তৈরির উপকরণের দোকান রয়েছে। ভবনটির পাশের ওয়াহিদ মঞ্জিল, আমানিয়া হোটেল, রাজ হোটেল এবং উল্টা পাশের চারটি বাসায় আগুন ছড়িয়েছে।

স্থানীয়রা আরও জানান, আরিফ ম্যানশন নামে একটি ভবন ধসে পড়ার খবর পাওয়া যায়।

রাত ১টার পরে ঢামেক বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক হোসাইন ইমাম মিডিয়াকে ব্রিফ করে জানান, দগ্ধ ১০ জন হাসপাতালে এসেছেন। তাদের মধ্যে চার জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, শ্বাসনালী পুড়ে গেছে।

ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশিস ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে ভবনে প্রথম আগুন লেগেছে, সেটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যেকোনও সময় ধসে পড়তে পারে।’

এদিকে, রাত ২টার পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ও সংসদ সদস্য হাজী সেলিম।

অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের ব্যাপারে স্থানীয়রা জানান, রাজমহল হোটেলের সামনে একটি পিকআপ ভ্যান দাঁড়ানো ছিল। হঠাৎ ভ্যানটিতে আগুন লেগে বিস্ফোরিত হয়। পাশে সিএনজি অটোরিক্সা ছিল। সেটাও আগুনে পুড়ে যায়। পিকআপ বিস্ফোরণের পর রাজমহল হোটেলে আগুন ছড়ায়। হোটেলের সামনে সিলিন্ডার গ্যাস ছিল। সেগুলো বিষ্ফোরিত হয়। পুরো ভবনে আগুন ছড়ানোর পর পাশের ভবন ওয়াহিদ মঞ্জিলে আগুন লাগে। এই ভবনের নিচে মার্কেট ও ওপরে গোডাউন রয়েছে। বডি-স্প্রে’র দোকান ও প্লাস্টিক দানার দোকান রয়েছে। এক পর্যায়ে ওয়াহিদ মঞ্জির সংলগ্ন জামাল কমিউনিটি সেন্টার ও রাস্তার উল্টো পাশে থাকা দুটি ভবনের চার ও পাঁচ তলায় আগুন ধরে।

তবে অনেকের দাবি, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়নি। প্রথমে একটি ট্রান্সফর্মারে বিকট শব্দ হলে সেখান থেকে আগুন বের হতে দেখা যায়। এই আগুন থেকে রাজমহল হোটেলসহ অন্য ভবনগুলোতে থাকা প্লাস্টিক জাতীয় দাহ্য পদার্থের দোকান ও গোডাউন থেকে আগুন ছড়িয়েছে।