মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের বৃহত্তর মনিরঝিলের সোনাইছড়ি গ্রাম। গত ২৫ জানুয়ারি সোনাইছড়ি খালের জাফর সওদাগরের দোকানের পাশে খালের একপাড় থেকে ভেলায় করে অন্যপাড়ে কবরস্থানে এনে লাশ দাফন করার ছবি সহ একটি প্রতিবেদন কক্সবাজার নিউজ ডট কম-সিবিএন-এ সর্বপ্রথম গত সোমবার ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে প্রচারিত হয়। মৃতদেহটি ছিল সোনাইছড়ি গ্রামের মৃত গোলাম বারীর প্রায় ৭৪ বছর বয়সী পুত্র মনির আহমদের। সিবিএন-প্রচারিত ছবি সহ “যে ছবি দেখে চোখের পানি সংবরণ করা যায়না” শিরোনামের প্রতিবেদনটি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বল্পসময়ের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ লুৎফুর রহমান, রামু উপজেলা প্রকৌশলী, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতা (পিআইও), কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহামদ, কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আবদুল মালেক সহ সংশ্লিষ্ট সকলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মঙ্গলবার ১২ ফেব্রুয়ারি পরিদর্শন শেষে রামু ইউএনও’র পেইজ বুকে এ বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। নিম্মে ব্যাখ্যাটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

“বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত রামুর মনিরঝিলে পানিতে ভাসিয়ে মৃতদেহ পারাপারের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে। ঘটনাস্থলের ১০০ ফুটের মধ্যে কাঠ-বাঁশের সাঁকো থাকা সত্ত্বেও ঐ স্থান দিয়ে লাশ পারাপারের বিষয়টি দুঃখজনক। সাঁকোটি দিয়ে জনসাধারণের যাতায়াত অব্যাহত আছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা প্রকৌশলী, পিআইও, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি মেম্বার আজ সকাল ১০.০০ টায় সরেজমিনে পরিদর্শন করি। পরিদর্শনকালে স্থানীয় জনসাধারণের সাথে মতবিনিময় করা হয় এবং কয়েকটি পাটাতন সরে যাওয়ায় সাঁকোটি মেরামতের উদ্যোগও ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে।”
এ ব্যাখ্যা পাওয়ার পর এ বিষয়ে জানার জন্য রামু’র ইউএনও মোঃ লুৎফুর রহমানের কাছে এ প্রতিবেদক মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে মুঠোফোনে কিভাবে বাঁশের তৈরী ভাঙ্গা সাঁকো দিয়ে খাটিয়া সহ মৃতদেহ পার করা যাবে-এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও মোঃ লুৎফুর রহমান বলেন-সাঁকোটির ২০ থেকে ২৫ ফুট পর্যন্ত কোন পাটাতন এখনো নেই। মৃতব্যক্তির পরিবারের লোকজন ইচ্ছা করেলে সাঁকোটির পাটাতন মেরামত করে সাঁকোর উপর দিয়ে লাশ বহন করতে পারতেন।

কিন্ত মৃতব্যক্তির পরিবারের লোকজনের সাঁকো মেরামতের আর্থিক সামর্থ্য আছে কিনা? মেরামত করতে পারলেও সে জরাজীর্ণ ও অপ্রসস্থ বাঁশের পুরাতন সাঁকোর উপর দিয়ে লাশবহনের খাটিয়াসহ মৃতদেহ বহন করা যেতো কিনা? সে সাঁকো মেরামতের দায়িত্ব কার উপর বর্তায়? মেরামত করতে কি পরিমাণ সময় ব্যয় হতো? সেসব বিষয় সহ আরো অনেক বিষয়ের রামু’র ইউএনও মোঃ লুৎফুর রহমান কোন ব্যাখ্যা দেননি। রামু’র ইউএনও মোঃ লুৎফুর রহমান আরো বলেন-প্রতিবেদনটি বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে আমরা সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়েছিলাম এবং ভাঙ্গা বাঁশের সাঁকোটি জরুরী ভিত্তিতে মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইউএনও’র সাথে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী ও কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবদুল মালেককে উক্ত ভাঙ্গা সাঁকো দিয়ে খাটিয়াসহ লাশ বহন করা যেতো কিনা-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোন অবস্থাতেই সেটা সম্ভব ছিলনা। তিনি বলেন-এ ভাঙ্গা সাঁকো দিয়ে মানুষ পার হতেও অনেক কষ্ট ও ঝুঁকি নিতে হয়। মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় শুধুমাত্র লাশটির দু’পাশে মুঠি করে ধরে বহন করা যেত। কিন্তু তা না করে ভেলায় করে লাশ পারপার করে।

এদিকে, গত ২৫ জানুয়ারি মনির আহামদের মৃতদেহ বহনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত একই এলাকার মৃত হাজী আয়ুব আলীর পুত্র আবু তাহের জানান, ঐদিন কোন অবস্থাতেই লাশটি সাঁকো দিয়ে পার করা যেতোনা। কোন উপায়ান্তর নাদেখে অনেক কষ্ট করে লাশটি ভেলায় চড়িয়ে খাল পার করা হয়। এ বিষয়ে জানার জন্য মঙ্গলবার বিকেল ৩ টা থেকে পৌনে ৫ টা টা পর্যন্ত কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদের নিয়মিত মুঠোফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, এ প্রতিবেদনে ভেলায় করে লাশ বহনের ছবিটি ছাড়া অন্য ছবি রামু ইউএনও’র মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর তাঁর অফিসিয়াল ফেজবুকে দেয়া স্টাটাস থেকে নেয়া হয়েছে।