ফরিদুল আলম দেওয়ান, মহেশখালী:

মহেশখালীতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্ত্র করে প্রতিবেশী সন্ত্রাসীদের হামলায় হাত পা বিহীন এক প্রতিবন্ধী স্কুল ছাত্র ও তার মা বাবা বোন সহ একই পরিবারে ৪ জন রক্তাক্ত আহত হয়েছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারী রাতে এ ঘটনা ঘটে। প্রতিবন্ধীর উপর এ হামলায় এলাকায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা যায়, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নের উত্তর নলবিলা এলাকার দিন মজুর জালালের বাড়ীতে একদল সন্ত্রাসী হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা যখন গৃহকর্তা জালাল এবং তার মেয়েকে মারধর করছিল তখন পড়ার রুম থেকে চিৎকার করে ডাক দিচ্ছিল প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিন। সন্ত্রাসীরা এ প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিনকেও রেহায় দেয়নি। তারা তাকেও বেধম মারধর করে। এক পর্যায়ে তাকে মেরে রক্তাক্ত করে সন্ত্রাসীরা। আহত প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিন মহেশখালীর উত্তর নলবিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র। জীবনে সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার তাগিদে ভিক্ষার ঝুলি হাতে না নিয়ে পড়া লেখা চালিয়ে আসছিল সালাহ উদ্দিন। এই প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিন সন্ত্রাসী কর্তৃক মারাত্বক জখম প্রাপ্ত হয়েছে। সন্ত্রাসীরা যখন হামলা করে চলে যায় তখন প্রতিবেশী লোকজন এসে রক্তাক্ত অবস্থায় প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিন ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের চিকিৎসা করতে সাহায্য করেন। প্রতিবন্ধী কিশোরের উপর হামলার ঘটনায় এলাকার বিবেকবান নারী-পুরুষদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এ হামলা অনেকে সহজে মেনে নিতে পারছে না।

জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিনকে এলাকার ছোট বড় সকলেই চিনে জানে। এ প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিন জীবনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে আসছে। তার দিন মজুর বাবা জালালও খুব কষ্ট করে তার পড়া লেখার খরচ চালাচ্ছেন। শিশুকাল থেকে তার মা কোলে করে স্কুলে আনা-নেওয়া করে অাসছে প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিনকে। তার প্রতি এলাকার প্রায় মানুষের মায়া মমতা রয়েছে। কিন্তুু ওই সন্ত্রাসীদের মনে কোন মায়া মমতা ছিলনা প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিনের প্রতি। তার পিতার স্বপ্ন সালাহ উদ্দিন প্রতিবন্ধীত্বকে হার মানিয়ে একদিন বড় অফিসার হবে। সে সমাজকে দেখিয়ে দিবে প্রতিবন্ধীরাও পারে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে। প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিনও তার বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দিন রাত পরিশ্রম করে পড়া-লেখা চালিয়ে যাচ্ছে। জন্ম লগ্ন থেকে তার হাত পা না থাকায় মুখে কলম দিয়ে লিখে প্রতি বছর পরীক্ষায় বরবরাই ভাল ফলাফল করে আসছে। এ ছাত্রের জীবন-যাপন ও পড়া-লেখা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন এলাকার সমাজপতিরা। অভাবের এ সংসারে যেখানে ভিক্ষার থালা নিয়ে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করার কথা তার পরিবারের সেখানে উক্ত লোভ লালসা ত্যাগ করে দিন মজুর পিতা জালাল তার এ পুত্রের নিয়মিত পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় মানবতাবিহীন নির্দয় সন্ত্রাসীরা প্রতিবন্ধী সালাহউদ্দিন ও তার বৃদ্ধ বাবা সহ পরিবারের সবাইকে মেরে রক্তাক্ত করে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনার খবর পেয়ে এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য লিয়াকত আলী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিনদের উপর এরকম বর্বরোচিত হামলা দেখে হতবাক হয়ে যান। মানবতার এ বিপর্যয় দেখে তিনি অনেকটা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আহত প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিন, তার বাবা জালাল অাহমদ , মা অায়েশা বেগম , জালালের মেয়ে শাহিদা বেগম , জুলেখা বেগম ও প্রতিবন্ধী স্কুল ছাত্র সালাউদ্দিনকে উদ্ধার করে স্থানীয় ইউপি মেম্বার লিয়াকত অালী নিজের অর্থায়নে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

ঘটনাটির খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় জনসাধারন, সাংবাদিক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকার নারী-পুরুষরা উক্ত প্রতিবন্ধীকে দেখতে তার বাড়িতে ছুটে যান। এব্যাপারে সবাই একবাক্যে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: জামিরুল ইসলাম ও থানার অফিসার ইনচার্জ প্রভাষ চন্দ্র ধরের কাছে দ্রুত আইনী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।